TMC Criticizing Narendra Modi : রাম নাম নেই মুখ! ‘মিথ্যাচারী’ মোদিকে খোঁচা তৃণমূলের

14

ডিজিটাল ডেস্ক, ১৮ জুলাই : বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে ‘রাম’ বন্দনা বরাবরই প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে রামমন্দির উদ্বোধনকে ঘিরে দেশজুড়ে চলে জোরদার প্রচার। বাংলাও তার ব্যতিক্রম ছিল না—এ রাজ্যে বিজেপির নেতারা, বিধায়করা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা রামনামের স্লোগানে ভোটের ময়দান গরম করেছিলেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বাংলায় প্রচারে এসে একাধিকবার তুলে এনেছিলেন ‘রাম’-এর প্রসঙ্গ। কিন্তু এবার চিত্রটা একেবারে আলাদা। দুর্গাপুরের সভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখে রামের নাম একবারও শোনা গেল না! বরং তিনি বাংলায় ভাষণ শুরু করে উচ্চারণ করলেন দেবী দুর্গা ও মা কালীর নাম। আর তা নিয়েই কটাক্ষ করতে ছাড়ল না তৃণমূল কংগ্রেস (TMC Criticizing Narendra Modi)।

শুক্রবার এক সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূলের পক্ষ থেকে তীব্র খোঁচা দিয়ে বলা হয়েছে, “বাংলায় এসেছেন বলেই একবারও রামের নাম নেওয়া হল না! তাহলে কি বিজেপিও বুঝতে পারছে, বাংলার মাটি রামনামে ধরে রাখা যাবে না?” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তৃণমূল কার্যত দাবি করল, রাজ্যের আবেগে জায়গা করে নিতে বিজেপিও এবার রণকৌশল বদলাতে বাধ্য হচ্ছে।

দুর্গাপুরে একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষে এদিন রাজ্যে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সভামঞ্চ থেকে রাজ্যের জন্য উন্নয়নের বার্তা দিয়েছেন তিনি, এবং নিজের বক্তব্যে বেশ কয়েকবার বাংলাতেও কথা বলেছেন। তবে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়—তাঁর দীর্ঘ বক্তৃতায় একবারও রামের নাম উঠে আসেনি। প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের শুরুতেই ভাঙা ভাঙা বাংলায় বলেন, “বড়রা আমার প্রণাম নেবেন। ছোটরা ভালোবাসা। জয় মা কালী। জয় মা দুর্গা।” বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হতে গিয়ে এদিন তিনি সরাসরি দেবী দুর্গা ও মা কালীর নাম উচ্চারণ করেন।

বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বে শমীক ভট্টাচার্যের আসার পর থেকেই বঙ্গ বিজেপির ভাবমূর্তিতে ‘বঙ্গীয়করণ’-এর ইঙ্গিত মিলছিল। আর দুর্গাপুরের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদির এই বাঙালি আবেগমাখা ভাষণকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে—তাহলে কি এবার সত্যিই বঙ্গ বিজেপির বঙ্গীয়করণে সিলমোহর দিলেন মোদি? রামনাম নয়, মা কালী ও দুর্গার আরাধনায় বাঙালি মন জয়ের কৌশল—এটাই কি বিজেপির নতুন রণনীতি?

দুর্গাপুরের সভার শুরুতেই চোখে পড়ল এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন—প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখে রামনামের উল্লেখই নেই। দীর্ঘ ভাষণেও একবারও রামের নাম করেননি তিনি। পরিবর্তে শুরুতেই ভাঙা বাংলায় বললেন, “জয় মা কালী, জয় মা দুর্গা।” আর সেখান থেকেই শুরু তৃণমূল কংগ্রেসের কটাক্ষ।

শুক্রবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ প্রশ্ন তোলেন, “নরেন্দ্র মোদি বাংলায় এসেছেন বলেই কি রামের নাম একবারও করলেন না? দেবী দুর্গা আর মা কালীর নামেই ভাষণ শুরু করলেন? তাহলে কি রাম স্মরণ থেকে এবার সরে আসছে বঙ্গ বিজেপি?” প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে রামমন্দির নিয়ে জোর প্রচার চালিয়েছিল বিজেপি। রাজ্যে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ প্রথম সারির নেতারা রামমন্দিরকে হাতিয়ার করেই ভোটের ময়দানে ঝাঁপিয়েছিলেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও রামনামের আশ্রয়ে একাধিক বার তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন।

তবু ফল আশানুরূপ হয়নি। ইভিএম খুলতেই দেখা যায়, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৪-এ রাজ্যে বিজেপির আসনসংখ্যা আরও কমেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলার ভোটার রামমন্দিরের আবেগে ভেসে যাননি।

বাংলার সংস্কৃতিতে রামের চেয়ে দেবী-উপাসনার প্রভাব ঐতিহাসিকভাবেই বেশি। তাই বারবার অভিযোগ উঠেছে, বিজেপি তাদের শাসিত রাজ্যের ধর্মীয় সংস্কৃতি বাংলার উপরে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এই অভিযোগ বহুবার তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এবার বঙ্গ বিজেপির সভাপতির পরিবর্তনের পর কি সত্যিই কৌশল বদলাচ্ছে গেরুয়া শিবির? দুর্গাপুরের সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখে রামনামের অনুপস্থিতি, এবং তার বদলে দেবী দুর্গা ও মা কালীর স্মরণ—এই পরিবর্তন তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে বিজেপি কি বুঝতে পারছে, বাংলার মাটি ধরতে গেলে দেবী আরাধনার পথেই হাঁটতে হবে? বিজেপি কি রামনামের প্রচার থেকে সরে এসে এখন বাংলার ধর্ম-সংস্কৃতিকে সামনে রাখার পথে?

প্রধানমন্ত্রীর মুখে “জয় মা দুর্গা, জয় মা কালী”—এই বার্তাই কি তা বুঝিয়ে দিচ্ছে? সেই প্রশ্ন এখন জোরালো হচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। অনেকেই মনে করছেন, বঙ্গ বিজেপির ‘রামকেন্দ্রিক’ রাজনীতি এখন ধীরে ধীরে রূপ নিচ্ছে ‘দেবীকেন্দ্রিক’ আঞ্চলিক কৌশলে।