আর কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা, মুখ্যমন্ত্রীর হাতে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন, চলছে বিগ্রহে প্রাণপ্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া
ডিজিটাল ডেস্ক, ৩০ এপ্রিল: অক্ষয়তৃতীয়ার দিনে দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের শুভ দ্বারোদ্ঘাটন। সকাল থেকেই শুরু হবে যজ্ঞের আয়োজন। সকাল ১১টা ১০ থেকে ১১টা ৩০ মিনিটের মধ্যে মন্দিরে বিগ্রহে প্রাণপ্রতিষ্ঠা সম্পন্ন হবে। দুপুরে মন্দিরের দ্বার খুলবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জগন্নাথদেবের উদ্দেশে প্রথম সন্ধ্যারতি-ও করবেন তিনিই।
নিমকাঠের তৈরি জগন্নাথ মূর্তিতে ইতিমধ্যেই প্রাণপ্রতিষ্ঠা সম্পন্ন হয়েছে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের অন্যতম প্রধান সেবায়েত রাজেশ দয়িতাপতির নেতৃত্বে এই কার্য সম্পন্ন করেন পুরোহিতেরা। এরপর বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ পাথরের তৈরি জগন্নাথ মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করবেন ইসকনের সেবায়েতরা। একই সময়ে রাধাকৃষ্ণের পাথরের মূর্তিতেও প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হবে।
শুরু হয়ে গেছে বিগ্রহে প্রাণপ্রতিষ্ঠার神্বারম্ভিক পর্ব। মন্দিরের রুদ্ধ দরজার আড়ালে চলছে এই গুরুত্বপূর্ণ আচার। জগন্নাথদেবের পাশাপাশি রাধাকৃষ্ণের মূর্তিতেও সম্পন্ন হবে প্রাণপ্রতিষ্ঠা।
বুধবার সকাল ১১টা ১০ থেকে ১১টা ৩০ মিনিট—এই শুভ ২০ মিনিটেই দেবমূর্তির সর্বাঙ্গে কুশ স্পর্শ করিয়ে প্রাণপ্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হবে। পাথরের মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠার দায়িত্বে থাকবেন ইসকনের সন্ন্যাসীরা, আর নিমকাঠের জগন্নাথ মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করবেন পুরীর মন্দিরের প্রধান সেবায়েত রাজেশ দয়িতাপতির নেতৃত্বাধীন পুরোহিতেরা।
প্রাণপ্রতিষ্ঠার পর দেবতার স্নান ও বস্ত্র পরিবর্তনের রীতি সম্পন্ন হবে। সবশেষে জগন্নাথদেবকে নিবেদন করা হবে ঐতিহ্যবাহী ৫৬ ভোগ।
বুধবার প্রথম মহাযজ্ঞের সময় বিগ্রহকে চারদিক থেকে ঘিরে রাখা হবে সোনা, রূপো ও তামার তার দিয়ে। এই তিন ধাতুর ‘কার’ বাঁধা থাকবে প্রধান পুরোহিতের কোমরে, যা এই আচারবিধির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এরপর বিগ্রহের সামনে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে স্থাপন করা হবে যজ্ঞকুণ্ড এবং কুম্ভকুণ্ড—যেখানে ঘটে জল রেখে তৈরি হবে কুম্ভকুণ্ড।
প্রসঙ্গত দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের একঝাঁক নেতা, সাংসদ ও বিধায়ক। মঙ্গলবার অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন তারকা সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, জুন মালিয়া এবং বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। মূল যজ্ঞমঞ্চের কাছাকাছি মঞ্চে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীর ভাই বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন টলিউডের জনপ্রিয় প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা, গায়ক নচিকেতা চক্রবর্তী, অভিনেতা-পরিচালক অরিন্দম শীল, দেবলীনা কুমার এবং শিল্পপতি রুদ্র চট্টোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বুধবারের মূল অনুষ্ঠানে অংশ নিতে অদিতি (মুন্সি) এসেছে। ডোনা গাঙ্গুলি, জিৎ গাঙ্গুলি, দেব, রচনা, দেবলীনা—সকলেই উপস্থিত হয়েছেন।”
যজ্ঞের সময় মুখ্যমন্ত্রীর পাশে ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা ও মমতার ভ্রাতৃবধূ লতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কলিঙ্গ শৈলীতে নির্মিত দিঘার জগন্নাথ মন্দিরটি পুরীর মন্দিরের আদলেই তৈরি। ২০১৮ সালে পূর্ব মেদিনীপুর সফরের সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মন্দির নির্মাণের ঘোষণা করেছিলেন। কোভিড পরিস্থিতিতে নির্মাণকাজ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকলেও পরে দ্রুত গতিতে কাজ শেষ হয়।
‘সম্পূরা’ স্থাপত্যের আদলে তৈরি এই মন্দির নির্মাণে রাজস্থান থেকে আনা হয়েছিল প্রায় ৮০০ দক্ষ কারিগর, যাঁদের অনেকেই অযোধ্যার রাম মন্দির নির্মাণের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
মন্দির প্রাঙ্গণে রয়েছে ভোগমণ্ডপ, নাটমন্দির, জগমোহন ও গর্ভগৃহ। নাটমন্দিরটি দাঁড়িয়ে আছে ১৬টি স্তম্ভের উপর। মূল সিংহাসনে বিরাজমান থাকবেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার বিগ্রহ।