ডিজিটাল ডেস্ক ১৭ই জুলাইঃ বছর ঘুরতেই একই চিত্র যেন ফিরে এল বাংলাদেশে। আবার ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল ওপার বাংলা। তাও আবার বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনার নিজের ভিটেতেই। ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির মিছিল ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি বাংলাদেশের গোপালগঞ্জে। কমপক্ষে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলেই খবর। গুলিবিদ্ধ অন্তত ৯ জন। পরিস্থিতি সামাল দিতে জারি করা হয়েছে কার্ফু(Turbulent Bangladesh)।
আন্তর্জাতিক সূত্রের খবর, বঙ্গবন্ধুর বাড়ি গোপালগঞ্জে গতকাল দুই পক্ষের সংঘর্ষে উত্তাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এনসিপির ছাত্র যুব শাখার মিছিল ছিল। তার আগেই পুলিশের সঙ্গে তুমুল বচসা, হাতাহাতি লাগে আওয়ামী লিগের কর্মী-সমর্থকদের। স্থানীয় সূত্রে খবর, এনসিপির মিছিল রুখতে আওয়ামী লিগের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল খালেদা জিয়ার দল, বিএনপির কর্মী-সমর্থকরাও। দুই পক্ষের সংঘর্ষে গতকাল দিনভর দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর করা হয়। এমনকী, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বোমা দিয়েও আক্রমণ করা হয়।
এনসিপির অভিযোগ, আওয়ামী লিগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলিগের কর্মী-সমর্থকরা হামলা চালিয়েছে। সংঘর্ষে ৪ জনের মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন কমপক্ষে ৯ জন। ৫০ জনেরও বেশি সংঘর্ষে আহত হয়েছেন বলে খবর।
প্রসঙ্গত, ১ জুলাই থেকে সারা দেশে পদযাত্রা শুরু করেছে এনসিপি। এক মাস ধরে চলা জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে গতকাল গোপালগঞ্জে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ ঘোষণা করেছিল এনসিপি। তবে সকাল থেকেই উত্তেজনা ছড়ায় এই মিছিল ঘিরে। দফায় দফায় হামলা হয়। পুলিশের গাড়ি, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। হামলা চলে এনসিপির সমাবেশস্থল, জেলা প্রশাসকের বাসভবন, জেলা কারাগারে। পথচলতি বিভিন্ন গাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে অভিযোগ।
দুপুর ২টোর দিকে সমাবেশে পৌছন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের ফেরার সময়ও হামলা চলে বলে দাবি। পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে যে এনসিপির নেতারা গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আশ্রয় নেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে গোপালগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। নামানো হয় সেনাও। সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়।
শেষে বিকেল পাঁচটার দিকে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির নিরাপত্তায় গোপালগঞ্জ থেকে বেরতে পারেন এনসিপি নেতারা। খুলনায় রাত সাড়ে ৯টায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, “গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারীদের হত্যার উদ্দেশে গোপালগঞ্জে নিষিদ্ধ ছাত্র লিগ, আওয়ামী লিগ ও তার সন্ত্রাসীরা জঙ্গি কায়দায় হামলা করেছে। এই হামলার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে এনসিপি।”
এনসিপির নেতারা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মীরা জোর করে বিভিন্ন মসজিদে ঢুকে মাইকিং করে হামলার উসকানি দেন। পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
এদিকে গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে শাহবাগ সহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির কর্মী-সমর্থকরা। ঢাকার বাইরে অন্তত ২০ জায়গায় সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলি এনসিপির ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা করে এবং জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করে।
এই হামলার ঘটনার নিন্দা করেছে মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারও। সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের শাস্তি হবে। অপরাধীদের অবশ্যই দ্রুত শনাক্ত করে শাস্তি দেওয়া হবে।”
আজ সন্ধে ৬টা পর্যন্ত কার্ফু জারি রয়েছে। রাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে, এই আশঙ্কায় গোপালগঞ্জে আরও প্রায় দেড় হাজার পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হামলার পর বিভিন্ন স্থানে গাছ কেটে ফেলে রাখা হয়।