ডিজিটাল ডেস্ক ১৮ই জুলাইঃ গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হয়েছিল। নিহত হয়েছিলেন ২৬ জন। কেটে গিয়েছে প্রায় তিন মাস। ওই হামলার দায় স্বীকার করেছিল পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার শাখা সংগঠন-দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)। এবার দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট-কে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি বিদেশি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র(US On Terror)।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে,মার্কিন বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও বলেছেন,”আজ,মার্কিন বিদেশ মন্ত্রক দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)-কে বেদিশি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন (এফটিও) এবং বিশেষভাবে মনোনীত বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদী সংগঠন (এসডিজিটি) হিসাবে তালিকাভুক্ত করছে।”মার্কিন বিদেশ সচিব মার্কো রুবিওর পক্ষ থেকে জারি করা একটি বিবৃতিতে এই পদক্ষেপের কথা জানানো হয়েছে। মার্কিন বিদেশ সচিবের এই বিবৃতির প্রশংসা করেছে আমেরিকায় ভারতের দূতাবাস।
ট্রাম্প প্রশাসন পহেলগাঁও-তে জঙ্গি হামলাকে, ২০০৮ সালে লস্কর পরিচালিত মুম্বই হামলার পর ,ভারতে সাধারণ নাগরিকদের উপর সবচেয়ে মারাত্মক সন্ত্রাসবাদী হামলা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ),যা কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স নামেও পরিচিত, পহেলগাঁও হামলার দায় স্বীকার করেছে আগেই। তবে, কয়েকদিন পরে,সন্ত্রাসবাদী সংগঠনটি তাদের বিবৃতি প্রত্যাহার করে এবং ২২ জুলাইয়ের হামলায় কোনওভাবে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে।

২২ এপ্রিলের নরসংহারের পর দায় স্বীকার করে লস্করের ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্ট ফ্রন্ট’। কিন্তু কয়েকঘন্টার মধ্যেই তা প্রত্যাহারও করে দেয় টিআরএফ। তবে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর প্রথমে টিআরএফের তরফে দায় স্বীকার করা ও পরে তা অস্বীকার করার নেপথ্যেও পাকিস্তানের হাত দেখছেন তদন্তকারীরা। এবং পুরোটাই হয়েছে পরিকল্পিত ছকে। তারপরে পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে নিন্দাপ্রস্তাব প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। তবে সেই প্রস্তাবে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন টিআরএফের নাম উল্লেখ করা হয়নি। ভারত-মার্কিন সন্ত্রাসবাদ বিরোধিতায় পূর্ণ সহযোগিতার অন্যতম নিদর্শন এই বিবৃতি। দ্য রেসিস্টেন্স ফ্রন্টকে সন্ত্রাসবাদি সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করার জন্য মার্কিন বিদেশ দপ্তরের প্রশংসা করা হয়েছে ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত “বিদেশি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী” হিসাবে মনোনীত একটি ইসলামপন্থী জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা, ভারত এবং বিশ্বের অন্যান্য অংশে একাধিক জঙ্গি হামলা চালানোর জন্য অভিযুক্ত। ২০০৮ সালের নভেম্বরে মুম্বইয়ে সংঘটিত তিন দিনের ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলার নেপথ্যেও ছিল এই জঙ্গি গোষ্ঠী।
মার্কিন বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে,”বিদেশ দপ্তরের গৃহীত এই পদক্ষেপগুলি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষা, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা এবং পহেলগাঁও হামলার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ন্যায়বিচারের আহ্বান বাস্তবায়নের সাপেক্ষে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি রক্ষার বিষয়টিকেই তুলে ধরে।”
এর আগে, ভারতীয় সর্বদলীয় সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সফরের সময় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই এবং দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের প্রতি তাদের দৃঢ় সমর্থনের কথা জানিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
কারা এই দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্ট?
সন্ত্রাসবাদী হাফিজ সৈয়দের সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার একটি শাখা সংগঠন হল দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট। ২০১৯ সাল থেকেই কাজ করছে এই সংগঠন। গত কয়েক বছর ধরে জম্মু-কাশ্মীরে পরিযায়ী শ্রমিক, কাশ্মীরি পণ্ডিত এবং সাধারণ নাগরিকদের উপর হামলা চালানোর অভিযোগও আছে দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্ট-এর বিরুদ্ধে।
২০২১ সালে জম্মুতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে ড্রোন দিয়েও হামলা চালিয়ছিল এই সংগঠন। পুলওয়ামাতেও হামলার পিছনে এই সংগঠন ছিল বলে জানা গিয়েছে। ২০২৩ সালেই এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।