ডিজিটাল ডেস্ক, ৫ জুলাই : নির্বাচন কমিশনের ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ প্রক্রিয়া স্থগিতের আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (ADR)। সংস্থাটির আশঙ্কা, এই নিবিড় সংশোধনের কাজ অব্যাহত থাকলে প্রায় ৩ কোটি বৈধ ভোটারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে যেতে পারে (Voter List Cancel)।
বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন, যাকে বলা হচ্ছে ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ও অযোগ্য ব্যক্তিদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে কমিশন। তাদের মতে, শুধুমাত্র যোগ্য ভারতীয় নাগরিকদেরই ভোটাধিকার নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ। বিহারের পর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য রাজ্যেও শুরু হবে এই সংশোধন প্রক্রিয়া। ভোটার তালিকায় নির্ভুলতা এবং বিশেষ করে বিদেশি নাগরিকদের নাম অন্তর্ভুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে বিরোধী দলগুলি, কংগ্রেস সহ। একই সঙ্গে শাসক বিজেপিও এই বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটেই কমিশন তালিকা শোধনের সিদ্ধান্ত নেয়। তালিকাভুক্ত ভোটার ও নতুন আবেদনকারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুথ স্তরের অফিসাররা একটি নির্দিষ্ট ফর্ম সরবরাহ করবেন। ওই ফর্ম পূরণ করে ফেরত দিতে হবে এবং সঙ্গে জমা দিতে হবে স্বঘোষিত নাগরিকত্বের ঘোষণা-পত্রও।
কমিশনের এই পদক্ষেপ ঘিরে প্রবল আপত্তি তুলেছে বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, এর ফলে বহু বৈধ ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। রাজ্যের শাসকদল এই উদ্যোগকে ‘ঘুরপথে এনআরসি’ চালুর চেষ্টা বলেও কটাক্ষ করেছে। সংশোধনী প্রক্রিয়ার বিধিনিষেধ নিয়ে প্রথম প্রতিবাদে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে ইন্ডিয়া জোটের পক্ষ থেকেও কমিশনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আপত্তি জানানো হয়। তাঁদের হুঁশিয়ারি, প্রয়োজনে সারা দেশে প্রচার চালানোর পাশাপাশি আইনি পথে যাওয়াও হবে। প্রতিবাদের জেরে কমিশন কিছু বিধিনিষেধে পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করে মমতার দাবিকে গুরুত্ব দেয়।
বিহারের বহু বাসিন্দা ভোটার তালিকায় নাম তোলার ক্ষেত্রে সমস্যার মুখে পড়ছেন, এমনকি যাঁদের কাছে বৈধ ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড রয়েছে তাঁরাও। নিজ গ্রামের বহু মানুষ—নীতীশ কুমারের মতো নেতার ক্ষেত্রেও—নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন। অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (ADR)-এর বক্তব্য, এই নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়ায় প্রায় ৩ কোটি মানুষ তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারেন, যাঁদের মধ্যে অধিকাংশই প্রান্তিক, দরিদ্র ও পরিযায়ী শ্রমিক। তাছাড়া, যেসব অতিরিক্ত নথি চাওয়া হচ্ছে, সেগুলি ভারতের সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারের বিরোধী বলেও অভিযোগ ADR-এর।