মমতার পাশে দিলীপ, কাঁথিতে শুভেন্দুর ‘সনাতনী সম্মেলন’ নয়, মমতার জগন্নাথধামেই গেলেন দিলীপ! কটাক্ষের বন্যা পদ্ম শিবিরে

17

ডিজিটাল ডেস্ক, ৩০ এপ্রিল: দিঘা সফরে গিয়ে দলের অন্দরে চাপের মুখে পড়েছেন দিলীপ ঘোষ। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং প্রধান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিক্রিয়ায় অসন্তোষের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। দিলীপের নাম উল্লেখ না করেই শুভেন্দু মন্তব্য করেছেন, ‘‘কারও ব্যক্তিগত আচরণ নিয়ে মন্তব্য করব না।’’

সুকান্ত মজুমদার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, জগন্নাথধামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দিলীপ ঘোষের উপস্থিতি দল অনুমোদন করছে না। শুধু রাজ্য বিজেপির দুই শীর্ষ নেতা নন, এই ঘটনায় দিলীপের সতীর্থদের প্রতিক্রিয়াও সামনে এসেছে। সৌমিত্র খাঁ, অনুপম হাজরার মতো নেতারা প্রকাশ্যে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা প্রাক্তন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে মন্তব্য করতে শুরু করেছেন।

বুধবার দিঘায় জগন্নাথধামের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে সরকারের মন্ত্রীরা, শাসকদলের নেতা-কর্মীরা এবং বিশিষ্টজনেরা রাজ্য সরকারের আমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলেন। বিরোধী শিবিরের নেতাদের মধ্যে একমাত্র উপস্থিত ছিলেন দিলীপ ঘোষ, যিনি স্ত্রী রিঙ্কুকে সঙ্গে নিয়ে মন্দিরে যান। একই দিনে কাঁথিতে ‘সনাতনী সমাবেশ’ করেন শুভেন্দু অধিকারী। সেই কর্মসূচির শেষে দিলীপের জগন্নাথধাম যাত্রার প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি মন্তব্য করেন যে তিনি কারও ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলতে চান না। শুভেন্দু স্পষ্ট করে বলেন, ‘‘কোনও ব্যক্তি কী করবেন, কী বলবেন— সে বিষয়ে আমি মন্তব্য করব না। আমি শুধু একজনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিই, পাল্টা যুক্তি তুলে ধরি, এবং তাঁর মিথ্যাচারের বিরোধিতা করি— তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’

পাশাপাশি দিলীপের নাম উচ্চারণ না করেই কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘কারও ব্যক্তিগত জীবন, মন্তব্য, চালচলন, প্রেম-প্রীতি-রাগ-বিরহ— এসব বিষয়ে আমি কখনও মন্তব্য করিনি, ভবিষ্যতেও করব না।’’ তাঁর বক্তব্য স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে তিনি দিলীপকে ধর্তব্যের মধ্যে আনেন না।

বুধবার বিকেলে দিল্লি থেকে ফিরে কলকাতার বড়বাজারের মেছুয়ায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। এলাকা ঘুরে দেখার পর দিলীপ ঘোষের দিঘা সফর নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে, শুভেন্দু অধিকারীর সুরেই প্রথমে মন্তব্য করেন, ‘‘দিলীপদা যাবেন কি যাবেন না, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়।’’

তবে এরপর সুকান্ত স্পষ্ট করে জানান, বিজেপি দিলীপ ঘোষের দিঘা সফরকে অনুমোদন করছে না। তিনি বলেন, ‘‘দল মনে করে, মুর্শিদাবাদে যে ভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা হয়েছে, মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে, বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে— তার পর দিঘায় জগন্নাথধামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাওয়া মানে সেই ঘটনার উপেক্ষা করা। তাই দল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, আমরা কেউ ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেব না। কিন্তু তিনি ব্যক্তিগতভাবে গিয়েছেন।’’ তিনি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ মন্তব্য করে বলেন, ‘‘শুনেছি ওঁর স্ত্রীকেও নাকি ব্যক্তিগতভাবে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল।’’

বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র সমাজমাধ্যমে দিলীপ ঘোষকে কটাক্ষ করে লেখেন, ‘‘একজন ত্যাগী থেকে কীভাবে ভোগী হওয়া যায়, তার আদর্শ উদাহরণ আপনি, দিলীপবাবু। বাবুল সুপ্রিয় ও মুকুল রায়কে দল থেকে সরিয়ে দিয়ে আজ তাঁদের পথ অনুসরণ করছেন।’’ পাশাপাশি তিনি আরও মন্তব্য করেন, ‘‘কতটা নির্লজ্জ হলে এমন ‘আদর্শবান’ পুরুষ হওয়া যায়, তা ভাবনার বিষয়! বাংলার বিজেপির লজ্জার কারণ আপনি।’’

এছাড়া, বোলপুরের প্রাক্তন সাংসদ এবং বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সম্পাদক অনুপম হাজরাও সমাজমাধ্যমে দিলীপ ঘোষকে বিদ্রুপ করে পোস্ট করেছেন। তিনি লেখেন, ‘‘দিলীপদা, আপনি সবে বিয়ে করেছেন। এখন আপনার বিশ্রামের সময়। তাই শুধু চিল করুন।’’

প্রসঙ্গত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে দ্বারোদ্ঘাটনের মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে জগন্নাথ মন্দিরে উপস্থিত হন দিলীপ ঘোষ। চার নম্বর গেট দিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করেন তিনি। মন্দির চত্বরে তাঁদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও কুণাল ঘোষ, উত্তরীয় পরিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন।

Comments are closed.