Dilip Ghosh Son Death : রিঙ্কুর ছেলের রহস্যমৃত্যু ঘিরে বহু প্রশ্ন!

8

ডিজিটাল ডেস্ক, ১৩ মে : দিলীপ ও রিঙ্কুর ছেলে সৃঞ্জয় দাশগুপ্তের মৃত্যু ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠে আসছে। এরই মধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য—সোমবার রাতে তিনি সাপুরজি আবাসনে বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করেছিলেন। প্রতিবেশী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গভীর রাতে বন্ধুরা তাঁর আবাসন থেকে চলে যান। এরপর, মঙ্গলবার সকালে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে কি এই পার্টির সঙ্গে ঘটনার কোনও যোগ রয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ (Dilip Ghosh Son Death)।

জানা গেছে, প্রতিদিনের মতোই সোমবারও অফিসে গিয়েছিলেন সৃঞ্জয়, সন্ধ্যায় ফিরে আসেন। রাতের দিকে প্রতিবেশীরা তাঁর ফ্ল্যাটে কিছু বন্ধু ঢুকতে দেখেন, তবে তাদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হয়নি। মঙ্গলবার সকালে, গৃহপরিচারিকা সৃঞ্জয়কে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে, এরপরই রিঙ্কুদেবীকে খবর দেন। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর, তদন্ত শুরু হয়েছে। সৃঞ্জয়ের দেহের পাশ থেকে কিছু ওষুধ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ওষুধের অতিরিক্ত ডোজেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—তিনি কি নিয়মিত কোনো ওষুধ গ্রহণ করতেন? সোমবার রাতে মদ্যপ অবস্থায় অতিরিক্ত ডোজ নেওয়ার ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে, নাকি এটি আত্মহত্যার ঘটনা? পুলিশ এখন এই সম্ভাবনাগুলি খতিয়ে দেখছে।

প্রসঙ্গত দিলীপ ঘোষ ও রিঙ্কু মজুমদারের বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকেই সৃঞ্জয় আলোচনায় উঠে আসেন। যদিও তিনি মায়ের বিয়েতে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন না, তবে বারবার জানিয়েছেন যে তিনি এই সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ণ সমর্থন করেন। পাশাপাশি, সৎবাবা দিলীপ ঘোষের সঙ্গে ইডেন গার্ডেনে খেলা দেখতেও গিয়েছিলেন তিনি।

অন্য দিকে, পুত্রহারা রিঙ্কু জানান, ‘মাদার্স ডে’ উপলক্ষে তাঁর জন্য কেক নিয়ে গিয়েছিলেন সৃঞ্জয়। উপহারও দিয়েছিলেন গত রবিবার। তবে সোমবার তাঁকে ফোন করে ছেলে জানান যে, তাঁর একা থাকতে ইচ্ছা করছে।

সৃঞ্জয়ের বাবা, অর্থাৎ রিঙ্কু মজুমদারের প্রথম পক্ষের স্বামী রাজা দাশগুপ্ত, ছেলের মৃত্যুতে শোকাহত অবস্থায় হাসপাতালে পৌঁছান। পুত্রশোকে বিমূঢ় এই প্রৌঢ় কোনো মন্তব্য করেননি। তবে, রাজার বোন, অর্থাৎ সৃঞ্জয়ের পিসি জানিয়েছেন যে তাঁর ভাইপোর স্নায়ুর সমস্যা ছিল এবং এর জন্য চিকিৎসাও চলছিল। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, শারীরিকভাবে অন্য কোনো জটিল সমস্যা ছিল না। তবে মানসিক সমস্যার প্রসঙ্গে তিনি জানান, সৃঞ্জয়ের এ ধরনের কোনো অসুস্থতার কথা তিনি কখনও শোনেননি।

সৃঞ্জয়ের পিসতুতো ভাই জানিয়েছেন, ‘‘আমার সঙ্গে ও প্রতিদিন কথা বলত। আজও ফোন করেছিলাম, কিন্তু ওকে পাইনি।’’ পাশ থেকে সৃঞ্জয়ের পিসি বলেন, ‘‘পরশু দিন ও আমার ছেলেকে ফোন করে বলেছিল, ‘আয়, আড্ডা মারব।’ তবে আমি ছেলেকে রাতে বেরোতে নিষেধ করি, কারণ কয়েক দিন আগে একটা দুর্ঘটনায় সে চোট পেয়েছে। এরপর, কাজের ব্যস্ততায় দেখা হয়নি, তবে ফোনে যোগাযোগ ছিল। সকালে খবর পেয়ে আমি বালিগঞ্জের অফিস থেকে দ্রুত চলে এসেছি।’’

সৃঞ্জয়ের মা রিঙ্কু জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে দুই বন্ধুর সঙ্গে আবাসনে থাকতেন—একজন যুবক এবং একজন তরুণী। মঙ্গলবার তার দুর্গাপুর যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। সোমবার রাতেও মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘সৃঞ্জয় সাধারণত সকালে দেরিতে ওঠে। তবে অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়ে সকালে ফ্ল্যাটে গিয়েছিলাম। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় মুখ থেকে গ্যাঁজলা উঠছিল।’’ তিনি আরও জানান, ‘মাদার্স ডে’-তে ছেলে তাঁকে উপহার দিয়েছিল এবং কেকও নিয়ে গিয়েছিল। দু’জন মিলে আনন্দ করেছিলেন। তবে সোমবার রাতে সৃঞ্জয় ফোন করে জানিয়েছিল যে তার একা থাকতে ইচ্ছে করছে। রিঙ্কু বলেন, ‘‘ও বলেছিল, একা থাকতে চায়। বাড়িতে কাউকে আসতে নিষেধ করে দাও। অফিসে জানিয়ে মঙ্গলবার ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ নিয়েছিল।’’ এরপর তিনি আর কিছু বলতে পারেননি—দুঃখে ভেঙে পড়েন।

সৃঞ্জয়ের ছোটবেলার এক বন্ধু জানিয়েছেন, সোমবার রাতে রুমমেটের সঙ্গে একই ঘরে ঘুমিয়েছিলেন ওই যুবক। ওই রুমমেট সকালে ঘুমের মধ্যে গোঙানির আওয়াজ পেয়ে উঠে বসেন। তার পরে তিনিই খবর দেন বাকিদের। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় করেছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে,ময়নাতদন্তের পরেই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সুনিশ্চিত হওয়া যাবে।

Comments are closed.