ডিজিটাল ডেস্ক, ৯ জুন : ফুরফুরা শরিফের রাজনৈতিক সমীকরণ বদলের ইঙ্গিত মিলেছিল তিন মাস আগেই। ১৮ মার্চ কলকাতা পুরসভার আয়োজিত পার্ক সার্কাস ময়দানের ইফতার পার্টিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক সারিতে দেখা যায় নওসাদ সিদ্দিকির তুতোভাই কাসেম সিদ্দিকি ও নাজিমুদ্দিন হোসেনকে।
সোমবার রাজনৈতিক সমীকরণ আরও স্পষ্ট হয়ে গেল—তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদে নিয়োগ করা হয়েছে কাসেম সিদ্দিকিকে (TMC Qasim Siddiqui Pirzada)। কাসেম সিদ্দিকি হলেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির তুতো ভাই, অর্থাৎ ভাঙরের বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকিরও ভাই। একসময় রাজ্য পুলিশ নওসাদ সিদ্দিকিকে গ্রেফতার করার পর কাসেম প্রকাশ্যে নবান্নের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। ফুরফুরার রাজনৈতিক মহলে তিনি নওসাদ ও আব্বাসের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত।
এই কারণেই ইফতারের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে কাসেম সিদ্দিকির উপস্থিতি রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল তৈরি করেছিল। এই কৌতূহল মূলত দুই ধরনের—
১. তাহলে কি আব্বাস ও নওসাদের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে? সেই কারণেই কি তৃণমূলের কাছে দূত পাঠানো হয়েছিল?
২. যদি কাসেম পৃথকভাবে তৃণমূলের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন, তাহলে কি নওসাদের আইএসএফে ভাঙন ধরেছে?
এই প্রশ্নগুলিই এখন রাজনৈতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
ওই দুই প্রশ্ন এখনও প্রাসঙ্গিক। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ইফতারের মঞ্চে কাসেম সিদ্দিকির উপস্থিতি নিয়ে সেদিনও নওসাদ সিদ্দিকি কোনও মন্তব্য করেননি—তিনি কৌশলগত নীরবতা বজায় রেখেছিলেন। সোমবারও তিনি কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। তবে, এই দুই পরিস্থিতিই তৃণমূলের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করা হচ্ছে।
তৃণমূলের এই পদক্ষেপে ফুরফুরা শরিফের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। একসময় ফুরফুরার পীরজাদা তহ্বা সিদ্দিকি ছিলেন তৃণমূলের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন। তবে, কাসেম সিদ্দিকিকে সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার ফলে তহ্বা যে খুশি নন, তা স্পষ্ট। ফুরফুরায় মুখ্যমন্ত্রীর ইফতার পার্টি শেষ হওয়ার আগেই তহ্বা সেখান থেকে বেরিয়ে যান এবং নাম না করে কাসেমকে বিঁধতে ছাড়েননি। কিন্তু, ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে পার্ক সার্কাসে ফিরহাদ হাকিমের ইফতার পার্টিতে কাসেমকে সারাক্ষণই মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দেখা যায়। এতেই রাজনৈতিক মহলে চলা জল্পনার রহস্য অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গেল।