ডিজিটাল ডেস্ক, ১৭ জুন : ওবিসি সংক্রান্ত মামলায় রাজ্য সরকার বড় ধাক্কা খেল। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারের জারি করা বিজ্ঞপ্তির ওপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ প্রদান করেছে (OBC Case Calcutta High Court)।
রাজ্যের নতুন বিজ্ঞপ্তি, যা ১৪০টি জনজাতিকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল, কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের সম্মুখীন হয়েছে। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা ও তপোব্রত চক্রবর্তীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি মান্থা রাজ্য সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “কেন ২০১২ সালের আইনে সংশোধনী আনা হয়নি? আপনারা ২০১২ সালের ওবিসি আইন অনুযায়ী আংশিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, তারপর আবার ১৯৯৩ সালের আইনের দিকে ফিরে গেছেন। এর কারণ কী?” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে রাজ্য সরকারের জারি করা ৪-৫টি বিজ্ঞপ্তি আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন করেছে।
অপরদিকে, বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী রাজ্য সরকারকে স্মরণ করিয়ে দেন যে পূর্বেই ওবিসি শ্রেণিভুক্ত ৬৬টি সম্প্রদায়কে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। রাজ্য সরকার তখন জানিয়েছিল যে তারা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অপেক্ষায় রয়েছেন, আর আদালতও সে অনুযায়ী সম্মতি দিয়েছিল যে সেই পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হবে না। তবে উচ্চ আদালত জানিয়েছে যে সেই নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে, যার ফলে দুই বিচারপতি রাজ্য সরকারের আবেদন গ্রহণ করেননি। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত বহাল থাকবে।
রাজ্যের পক্ষ থেকে অ্যাডভোকেট জেনারেল যুক্তি দিয়ে বলেন, “বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে, সার্ভে সম্পন্ন হয়েছে—তখন কেন প্রশ্ন উঠল না? আমরা স্বীকার করতে পারছি না। যদি আমাদের সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণিত হয় তবে কী হবে?” এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা মন্তব্য করেন, “যে ৪-৫টি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে, তা আদালতের নির্দেশের অবমাননার শামিল। পাশাপাশি, আপনারা লেজিসলেটিভ প্রক্রিয়াকেও লঙ্ঘন করেছেন।” অন্যদিকে, রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এটি লেজিসলেটিভ বিষয় নয়, বরং পার্লামেন্টারি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। প্রসঙ্গটাই আলাদা। এই বিষয়ে আমার ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে।”
রাজ্য সরকার সরকারি চাকরিতে ওবিসি সম্প্রদায়ের জন্য ১৭ শতাংশ সংরক্ষণ চালু করেছিল। এই সংরক্ষণ নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হলে, হাইকোর্ট রাজ্যের সিদ্ধান্ত বাতিল করে। আদালত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় যে ধর্মের ভিত্তিতে কোনও সংরক্ষণ দেওয়া যায় না। গত বছর হাইকোর্টের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছিল যে ওবিসি তালিকা সম্পূর্ণভাবে আইন মেনে তৈরি হয়নি। পর্যাপ্ত সমীক্ষা ও নির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই, কারা ওবিসি হিসেবে স্বীকৃত, তা ঘোষণা করা হয়েছে। আদালত আরও জানায় যে ২০১০ সালের পর থেকে ওবিসি শংসাপত্রপ্রাপ্তদের যে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, তা ১৯৯৩ সালের ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস আইনের বিরোধী।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, ওবিসি সংরক্ষণ তালিকায় পূর্বে অন্তর্ভুক্ত ছিল ৬৬টি জাতি। নতুন সমীক্ষার পর সেই সংখ্যা কমিয়ে ৬৪টি করা হয়, পাশাপাশি আরও ৭৬টি নতুন অনগ্রসর জাতিকে তালিকায় সংযোজন করা হয়। ফলে ওবিসি সংরক্ষণের আওতায় জাতির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১৪০টি হয়।
এই সংশোধিত বিজ্ঞপ্তির ওপর কলকাতা হাইকোর্ট অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করেছে।