ডিজিটাল ডেস্ক, ২১ জুন : খিদিরপুরে মেট্রো স্টেশন নির্মাণ নিয়ে আর আর কোনো বিভ্রান্তির জায়গা নেই। রাজ্য সরকার আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের জমি খিদিরপুর স্টেশনের জন্য দিতে রাজি নয় (Kolkata Metro Land Problem)—এমনটাই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে রেল বিকাশ নিগম লিমিটেডকে (RVNL), যাঁরা কলকাতা মেট্রোর পার্পল লাইনের নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছেন। এই অবস্থায় খিদিরপুর স্টেশনকে বাদ রেখেই পুরো প্রকল্পের পুনর্গঠন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নির্মাণ সংস্থাকে। ১৪.১ কিলোমিটার দীর্ঘ জোকা-বিবাদীবাগ পার্পল লাইনের প্রায় ৭ কিমি অংশে যাত্রী পরিবহণ ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, মোমিনপুর পর্যন্ত অংশটি এলিভেটেড হওয়ার কথা এবং খিদিরপুর থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত অংশটি নির্মিত হওয়ার কথা ছিল ভূগর্ভস্থ পথ হিসেবে।
খিদিরপুর মেট্রো স্টেশন তৈরিতে শুরু থেকেই জটিলতা দেখা দেয়। ব্যস্ত ডায়মন্ড হারবার রোডের সংলগ্ন অঞ্চলে স্টেশন গড়ার পরিকল্পনায় প্রথমে বেছে নেওয়া হয়েছিল আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের কিছু জমি। তবে এই জমি নিয়ে রাজ্য সরকার ও রেল কর্তৃপক্ষের মধ্যে প্রথম থেকেই মতপার্থক্য চলছিল। অবশেষে রাজ্যের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে—স্টেশন তৈরির জন্য বডিগার্ড লাইন্সের কোনও জমিই রেলকে দেওয়া হবে না।
সম্প্রতি রেল এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রজেক্ট মনিটরিং গ্রুপ (PMG)-এর বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ-সহ অন্যান্য পদস্থ কর্তাব্যক্তিরা। মেট্রো সূত্রে জানা যাচ্ছে, খিদিরপুর স্টেশন নির্মাণে ৮৩৭ বর্গমিটার জমির প্রয়োজন ছিল।
রাজ্য সরকারের তরফে জমি হস্তান্তরে সরাসরি অস্বীকৃতির জেরে হতাশা প্রকাশ করেছেন কলকাতা মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার পি উদয়কুমার রেড্ডি। তাঁর বক্তব্য, “রাজ্যের এই স্পষ্ট বার্তাই প্রমাণ করে, তারা খিদিরপুরে মেট্রো স্টেশন চায় না।” তিনি আরও জানান, মেট্রোর প্রাক্কলন অনুযায়ী, খিদিরপুরে স্টেশন হলে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪৪ হাজার যাত্রী এই স্টেশন ব্যবহার করতেন। তাঁর মতে, রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র একটি প্রকল্পের নয়, বরং গোটা শহরের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্যই এক বড় ধাক্কা।
খিদিরপুরে যদি শেষমেশ মেট্রো স্টেশন নির্মাণ করা না যায়, তবে পুরো প্রকল্পে বড়সড় প্রভাব পড়তে পারে। আরভিএনএল-এর প্রযুক্তিবিদরা জানাচ্ছেন, মোমিনপুর ও খিদিরপুরের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ১.৬ কিলোমিটার, আর খিদিরপুর থেকে ভিক্টোরিয়া স্টেশনের দূরত্ব প্রায় ২ কিলোমিটার। এই পরিস্থিতিতে খিদিরপুরকে বাদ দিয়ে মেট্রো পরিকল্পনা এগোলে, মোমিনপুর থেকে ভিক্টোরিয়া পর্যন্ত মাঝখানে কোনও স্টেশনই থাকবে না। অথচ কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি (CRS)-র নিরাপত্তা নির্দেশিকা অনুযায়ী, দুটি স্টেশনের মাঝে এত দীর্ঘ দূরত্ব রাখা যাবে না। ফলে খিদিরপুর স্টেশন বাতিল হলে প্রকল্পটির রুট ও স্টেশন ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তন আনতে হতে পারে।
আরভিএনএল-এর ইঞ্জিনিয়ারদের মতে, সংকট কাটাতে রেসকোর্সের পাশ ঘেঁষে একটি নতুন স্টেশন নির্মাণ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সেই প্রস্তাবও বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জের মুখে। কারণ, রেসকোর্স এলাকা ভিভিআইপিদের হেলিকপ্টার ওঠা-নামার জন্য নির্দিষ্ট, ফলে সেখানে স্থায়ী নির্মাণ কার্যত নিষিদ্ধ। এই পরিস্থিতিতে আর একমাত্র বিকল্প পথ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে—মোমিনপুর ও ভিক্টোরিয়া স্টেশনের মাঝামাঝি কোনও উপযুক্ত স্থানে সুড়ঙ্গের মধ্যে একটি ভেন্টিলেশন শাফট ও একটি ইভ্যাকুয়েশন শাফট তৈরি করা। একটি শাফটের মাধ্যমে হাওয়ার প্রবেশ ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকবে, অন্যটি জরুরি প্রয়োজনে যাত্রীদের বের করে আনার পথ হিসেবে কাজ করবে। এই ব্যবস্থা না থাকলে জোকা থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত পার্পল লাইনের নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ পরিষেবা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে উঠবে।