Operation Sindoor Update : একা পাকিস্তান নয়, ‘অপারেশন সিঁদুরে’ তিন শত্রুর মোকাবিলা করেছে ভারত! কোন কোন দেশ?

20

ডিজিটাল ডেস্ক, ৪ জুলাই : ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় একযোগে পাকিস্তান ও চিনের আক্রমণের মুখে পড়েছিল ভারতীয় বাহিনী—এমনই বিস্ফোরক দাবি করল নয়াদিল্লি (Operation Sindoor Update)। সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ (ক্যাপাবিলিটি ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সাসটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাহুল আর সিংহ জানিয়েছেন, পাকিস্তানের সামরিক অভিযানে বেজিং সরাসরি রিয়েল টাইমে তথ্য ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছিল।শুক্রবার ফিকির (FICCI) এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল সিংহ বলেন, “একটি সীমান্ত, কিন্তু দুই শত্রু—এটাই অপারেশন সিঁদুরের সবচেয়ে বড় শিক্ষা। পাকিস্তান ছিল সামনে, আর তার নেপথ্যে কাজ করছিল চিনের তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর সহায়তা।”

সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাহুল আর সিংহের মন্তব্যে চাঞ্চল্য—তিনি জানান, ডিজিএমও স্তরের আলোচনার সময় পাকিস্তান সরাসরি জানিয়েছিল যে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভেক্টর প্রস্তুত আছে, এবং সেগুলিকে অবিলম্বে সক্রিয় করতে বলা হয়েছিল। এই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, সে সময় পাকিস্তান চিনের কাছ থেকে রিয়েল-টাইমে সামরিক ইনপুট পাচ্ছিল। তিনি আরও দাবি করেন, বিগত পাঁচ বছরে পাকিস্তানের ৮১ শতাংশ সামরিক সরঞ্জাম এসেছে চিন থেকেই। শুধু অস্ত্র সরবরাহই নয়, তিনি বলেন, চিন এই পরিস্থিতিকে ‘লাইভ ল্যাবরেটরি’-র মতো ব্যবহার করছে—নিজেদের অস্ত্রের কার্যকারিতা পরখ করে নিচ্ছে তৃতীয় দেশের মাটিতে।

চিনের কৌশলগত চিন্তাধারার ব্যাখ্যায় লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাহুল আর সিংহ তুলে ধরেছেন ‘থার্টি-সিক্স স্ট্র্যাটেজেমস’-এর বিখ্যাত নীতি—”borrowed knife to kill”। অর্থাৎ, সরাসরি সংঘাতে না গিয়ে অন্যের হাত ধরে শত্রুকে আঘাত হানা। তাঁর ব্যাখ্যায়, চিন নিজের সীমান্তে সরাসরি সংঘর্ষে না গিয়ে পাকিস্তানকে দিয়ে ভারতের উপর আক্রমণ ঘটাতে চাইছে। তিনি বলেন, “চিন বরাবরই এই পথ মেনে চলে। নিজেরা কাদা ছোড়াছুড়ির খেলায় না নেমে, পাকিস্তানকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে চলেছে—কখনও ভারতকে ঘায়েল করতে, আবার কখনও নিজেদের অস্ত্র ও প্রযুক্তি পরীক্ষা করতে।”

অপারেশন সিঁদুরে শুধু চিন নয়, তুরস্কের ভূমিকাও বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে সেনা মহলের পর্যবেক্ষণে। সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্তারা জানিয়েছেন, পাকিস্তানকে রাজনৈতিক ও গোয়েন্দা স্তরে সহযোগিতা করেছে তুরস্ক। সংঘাত শুরুর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ সাক্ষাৎ করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে, যেখানে ভারতের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে তুর্কি নেতৃত্ব।

অপারেশন সিঁদুর শুরু হয় ৭ মে। তার ঠিক আগে, ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগামে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের গুলিতে প্রাণ হারান ২৬ জন—যাঁদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। এই নির্মম ঘটনার পরই ভারতীয় সেনা চালায় পাল্টা প্রতিক্রিয়া, যার ফলশ্রুতিতেই শুরু হয় এই সামরিক অভিযান। চারের বেশি দিন ধরে চলা সংঘাতে ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই ব্যবহার করে ড্রোন, যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, এবং ভারী গোলাবারুদ। জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্চ ও রাজৌরি জেলায় প্রচণ্ড আঘাত হানে পাকিস্তান। প্রাণ হারান অন্তত ১০ জন সাধারণ মানুষ। পালটা জবাবে ভারত ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে থাকা পরিকাঠামো নির্ভুলভাবে হামলা চালায়। সেনার ডেপুটি চিফ অব স্টাফ জানান, এবার নাগরিক এলাকাগুলি বড় আঘাতের মুখে পড়েনি ঠিকই, কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য আরও শক্তিশালী এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে।

দীর্ঘ চার দিনের সংঘাত শেষে, ১০ মে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত প্রশমনের লক্ষ্যে এক সমঝোতায় পৌঁছানো হয়। ভারতের দাবি, এই অভিযানে অন্তত ১০০ জন জঙ্গিকে নির্মূল করা হয়েছে, যা সামরিক কৌশলের বড় সাফল্য হিসেবেই ধরা হচ্ছে। তবে সেনা কর্তাদের মতে, অপারেশন সিঁদুর শুধু পাকিস্তানকে লক্ষ্য করেই চালানো হয়নি। বরং এই অভিযানে প্রতিফলিত হয়েছে একটি বৃহত্তর ছায়াযুদ্ধের ছবি—যেখানে পর্দার আড়াল থেকে পাকিস্তানকে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করেছে চিন ও তুরস্ক। চিন সরবরাহ করেছে প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা সহায়তা, আর তুরস্ক দিয়েছে কূটনৈতিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা।