Kankurgachi Murder Case : কাঁকুড়গাছি হত্যামামলায় তৃণমূল বিধায়ক-সহ ১৮ জনকে সমন পাঠাতে নির্দেশ! সিবিআইকে ধমক কোর্টের!
ডিজিটাল ডেস্ক, ৪ জুলাই : দু’বছর আগে প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা হলেও, কেন চার বছর পরে অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দেওয়া হল—এই প্রশ্নে সিবিআইকে কড়া ভর্ৎসনা করল আদালত। বিচারক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এটা কি রসিকতা হচ্ছে?” আদালতের এই মন্তব্য তদন্ত প্রক্রিয়ার গতি ও সময়সীমা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দেয়, বিশেষ করে এমন একটি স্পর্শকাতর মামলায়, যার সঙ্গে গণতান্ত্রিক অধিকার এবং আইনশৃঙ্খলার সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে।
কাঁকুড়গাছি খুন কাণ্ডে সিবিআইয়ের অতিরিক্ত চার্জশিট, ১৮ জনের বিরুদ্ধে সমন জারি (Kankurgachi Murder Case)। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার পর কাঁকুড়গাছিতে খুন হন বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকার। সেই মামলায় সম্প্রতি অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই, যেখানে নাম রয়েছে মোট ১৮ জনের। অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন বেলেঘাটার তৃণমূল বিধায়ক পরেশ পাল, কলকাতা পুরসভার দুই কাউন্সিলর স্বপন সমাদ্দার এবং পাপিয়া ঘোষও। আদালতের নির্দেশ শুক্রবার কলকাতার বিচার ভবন থেকে ওই ১৮ জনের প্রত্যেককেই সমন পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালত সিবিআই-কে চার্জশিটের প্রতিলিপিও পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।
শুনানির শুরুতেই বিচারক সিবিআইয়ের কাছে জানতে চান, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। জবাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী জানান, ওয়ারেন্ট (সমন) জারি করা হতে পারে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। এর পরে বিচারক প্রশ্ন তোলেন—১৮ অভিযুক্তের মধ্যে কাউকে গ্রেফতারের চেষ্টা কি করা হয়েছিল? সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার সোজাসাপটা বলেন, “না, তা হয়নি।” আদালত ফের প্রশ্ন করে জানতে চায়, তবে কাউকে গ্রেফতার করা জরুরি ছিল কি না। তদন্তকারী অফিসারের জবাব, “না, ওঁরা তদন্তে সহযোগিতা করছিলেন।”
আদালত শুনানিতে জানতে চান—অভিযুক্তদের পালানোর সম্ভাবনা রয়েছে কি না। জবাবে সিবিআই জানায়, তদন্তে তেমন কোনো ইঙ্গিত মেলেনি। এই তথ্যের ভিত্তিতে বিচারক মত দেন, গ্রেফতারি পরোয়ানার প্রয়োজন নেই। সেই অনুযায়ী আদালত নির্দেশ দেয়, ১৮ জন অভিযুক্তকে সমন পাঠানো হোক। শুধু তাই নয়, মূল চার্জশিটে যাঁদের নাম রয়েছে—অর্থাৎ আরও ২০ জন অভিযুক্তের প্রতিও সমন জারি করার নির্দেশ দেয় আদালত।
এই মামলায় আদালতের পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে, তদন্তের স্বচ্ছতা ও কার্যকরতা বিচারব্যবস্থার প্রধান লক্ষ্য।
বিচারকের নির্দেশের পর সিবিআই আদালতকে জানায়, চার্জশিটের কপি অভিযুক্তদের পাঠাতে তাদের প্রায় এক মাস সময় লাগবে। এই বক্তব্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারক। তিনি কটাক্ষ করে বলেন, “চার বছর পর সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দিচ্ছেন। এটা কী ‘ম্যাটার অফ জোক’? এতদিন কী করছিলেন? চার্জশিটে তো দেখলাম তথ্যপ্রমাণ দু’বছর আগেই সংগ্রহ করা হয়েছে!” তিনি আরও মন্তব্য করেন, “তদন্তের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে মানে এই নয়, সেটি খামখেয়ালি বা ইচ্ছেমতো ব্যবহার করা যাবে।” বিচারক জানান, মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ১৮ জুলাই। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিনই ১৮ জন অভিযুক্তকে আদালতে হাজির থাকতে বলা হবে।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে হিংসার অভিযোগ। অভিযোগ, সেই সময়েই ভোট-পরবর্তী হিংসার শিকার হন বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকার। ২ মে, ফলপ্রকাশের দিনই কাঁকুড়গাছিতে নির্মমভাবে পিটিয়ে, গলায় কেবল টিভির তার পেঁচিয়ে খুন করা হয় অভিজিৎকে। শুধু অভিজিৎই নয়—হামলার শিকার হয়েছিলেন তাঁর দাদা বিশ্বজিৎ এবং মা মাধবী দেবীও। ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হলেও, অনেক অভিযুক্ত এতদিন অধরাই ছিলেন। তবে গত সপ্তাহে এই মামলার অন্যতম মূল অভিযুক্ত অরুণ দে-কে অবশেষে গ্রেফতার করেছে সিবিআই।