Calcutta High Court: বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকার খুনের জামিন মামালায় হাইকোর্ট সরগরম

104

ডিজিটাল ডেস্ক ২৬শে জুলাইঃ 2021 সালে বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা পর খুন হন কলকাতার কাঁকুড়গাছির বাসিন্দা অভিজিৎ সরকার ৷ তিনি এলাকায় বিজেপি (BJP) কর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন ৷ আদালতের নির্দেশে অন্যান্য ভোট পরবর্তী হিংসার মামলার সঙ্গে এই ঘটনারও তদন্ত করছে সিবিআই(CBI) ৷ সম্প্রতি নিম্ন আদালতে এই মামলায় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করেছিল সিবিআই ৷ তার পর এই মামালার পরিপ্রেক্ষিতে যে দুজন জামিনের আবেদন করেছেন, তাঁদের একজন রত্না সরকার ৷ আর দ্বিতীয় জন কলকাতা পুলিশের হোমগার্ড দীপঙ্কর দেবনাথ ৷ শুক্রবার সেই জামিন মামলার শুনানি হয় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শুভ্রা ঘোষের বেঞ্চে ৷ শুনানিতে মামলাকারীদের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,‘‘সিবিআই প্রথমে এঁদের সাক্ষী হিসাবে উল্লেখ করেছিল চার্জশিটে। কিন্তু পরে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে এদেরকে অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ।” শুক্রবার সেই জামিন মামলার শুনানি হয় কলকাতা হাইকোর্টে ৷ এই খুনের মামলা যতই শুনানির দিকে গড়াতে থাকে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির সঙ্গে তীব্র বাদানুবাদে জড়াতে থাকেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় । তার জেরে মামলা থেকেই সরে দাঁড়ালেন বিচারপতি(Calcutta High Court)।

কল্যাণ আরও বলেন,‘‘নিম্ন আদালতের বিচারক সম্পূর্ণ ভুল কাজ করেছেন । অন্যান্য সমস্ত মামলায় সময় দেওয়া হয়েছে সব পক্ষের বক্তব্য শোনার । কিন্তু এই মামলায় পুলিশ আধিকারিকদেরকে কোনও সময় দেওয়া হয়নি তাঁদের আত্মপক্ষ সমর্থন করার । তাঁদেরকে হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।’’

তিনি আরও বলেন,‘‘এরা প্রত্যেকেই সিবিআই জুজুর মধ্যে রয়েছেন । অন্যদিকে অভিজিৎ সরকারের দাদা বিশ্বজিৎ সরকার যে বয়ান দিয়েছেন, তা সঠিক নয় । তিনি জানিয়েছেন রত্না সরকার একটি সাদা কাগজে অভিযোগ নিয়েছিলেন । পাশাপাশি ইটের গায়ে যে রক্তের দাগ লেগেছিল, সেই রক্ত পরিষ্কার করেছিলেন দীপঙ্কর দেবনাথ । এই তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ।’’

তখন বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ সিবিআই-এর আইনজীবীর কাছে জানতে চান, ‘‘সমন পাঠানো ছাড়া বিগত ৫ বছরে আপনারা কোনও পদক্ষেপ করেননি ? এখন কেন হঠাৎ করে এদেরকে সমান পাঠিয়ে গ্রেফতার করতে হল ?’’ সিবিআই-এর পক্ষে আইনজীবী জানান, ওই পুলিশকর্মীরা সমনের উত্তর দিয়েছিলেন । পাশাপাশি জামিনের আবেদন জানান ৷ সেই আবেদন খারিজ করে দেন বিচারক । এখানে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে পুলিশের একটা যোগসাজশ রয়েছে ।

কল্যাণকে ভর্ৎসনা বিচারপতির

তখন বিচারপতি জানান, এই মামলার শুনানির জন্য বেশ কিছু সময় প্রয়োজন, আইনি বিষয়ে খতিয়ে দেখার জন্য সময় লাগবে । এই মামলায় এখনই কোনও নির্দেশ দেওয়া সম্ভব নয় । তিনি আগামী 15 দিন কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে থাকবেন । মামলাকারী চাইলে অন্য কোনও বেঞ্চে আবেদন জানাতে পারেন । বিচারপতি বলেন, ‘‘আপনি চাইলে অন্য বেঞ্চে আবেদন করতে পারেন ৷ না-হলে 15 দিন অপেক্ষা করতে হবে । কারণ, এই মামলা বিস্তারিত শুনানি করা প্রয়োজন ।’’

কিন্তু আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিচারপতিকে রীতিমতো পীড়াপীড়ি করতে থাকেন ৷ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আর্জি জানান, আপাতত নিম্ন আদালতের নির্দেশের উপর অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দিন বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ । কিন্তু বিচারপতির সাফ বক্তব্য, তা সম্ভব নয় । কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তখন অন্য এক বিচারপতির নাম করেন ৷ সেই বিচারপতিও একই রকম আচরণ করেন বলে উল্লেখ করেন । বলেন, “আমাদের বিচারপতিদের কৃপা পেতে হয় । এটাই দুর্ভাগ্য ।”

এর পরেই চরম বিরক্ত হয়ে বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ কার্যত পালটা ধমক দেন শ্রীরামপুরের সাংসদকে ৷ জানিয়ে দেন যে আদালতে এই ধরনের আচরণ বরদাস্ত করা হবে না ৷ বিচারপতি বলেন, “এই আদালত আপনার লেকচার শুনতে রাজি নয় । আমি মামলা শুনব না, ছেড়ে দিচ্ছি ।’’