ডিজিটাল ডেস্ক, ২৯ জুলাই : পহেলগাঁও হামলাকে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় গোয়েন্দা ব্যর্থতা বলে আক্রমণ করলেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। সংসদে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে নিশানা করেন (Priyanaka Gandhi On Pahalgam Attack)। প্রিয়াঙ্কা প্রশ্ন তোলেন, “একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রে কীভাবে এত বড় নিরাপত্তার ফাঁক থেকে গেল? কেন প্রধানমন্ত্রী মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দায় নিচ্ছেন না?”
সোমবার শ্রীনগরের দাচিগাম জঙ্গলে নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে মৃত্যু হয় তিন জঙ্গির। ঠিক সেই দিন থেকেই সংসদে শুরু হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে আলোচনা। মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে ঘোষণা করেন, পহেলগাঁও হামলায় জড়িত তিন জঙ্গিই সেনার অভিযানে নিহত হয়েছে। বিরোধীরা যখন ওই জঙ্গিদের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তখন শাহ তাদের কঠোর ভাষায় জবাব দেন।
এরপর বিরোধী পক্ষের হয়ে বক্তব্য রাখতে উঠে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, “প্রতিরক্ষামন্ত্রী এক ঘণ্টা ধরে বক্তব্য রেখেছেন। শাসকদলের একাধিক সাংসদও নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন—অপারেশন সিঁদুর থেকে সন্ত্রাসবাদ, জাতীয় নিরাপত্তা থেকে ইতিহাস পর্যন্ত সবই উঠে এসেছে। কিন্তু একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে—২২ এপ্রিল ২০২৫-এ যখন ২৬ জন নিরীহ মানুষকে তাঁদের পরিবারের সামনে নৃশংসভাবে খুন করা হল, তখন প্রশাসন কোথায় ছিল? এই হামলা কীভাবে ঘটল, আর কেন ঘটতে দেওয়া হল?”
কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সংসদে বলেন, “জঙ্গিরা জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে এক ঘণ্টা ধরে পরিকল্পিতভাবে হিন্দু পর্যটকদের খুন করল! বৈসরনের মতো একটি জনপ্রিয় পর্যটনস্থলে সেই সময় কোনও নিরাপত্তা কেন ছিল না? সরকার কি পর্যটকদের স্রেফ ঈশ্বরের ভরসায় ছেড়ে দিয়েছিল?” তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, “সীমান্ত পেরিয়ে এই জঙ্গিরা কীভাবে ভারতে ঢুকল? গোটা ঘটনা স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে বড় গোয়েন্দা ব্যর্থতার নিদর্শন।”
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী স্মরণ করিয়ে দেন, মুম্বই হামলার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনৈতিক দায়িত্ব স্বীকার করে পদত্যাগ করেছিলেন। সেই প্রেক্ষিতে তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এবার পহেলগাঁও হামলার দায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নেবেন না কেন?”
২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারান ভারতের ২৫ জন পর্যটক এবং এক স্থানীয় বাসিন্দা। ঘটনার পর থেকে প্রায় তিন মাস ধরে আত্মগোপনে ছিল ওই হামলার সঙ্গে যুক্ত জঙ্গিরা। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি জঙ্গি মুসা একটি টি৮২ আল্ট্রাসেট কমিউনিকেশন ডিভাইস চালু করে। এটি এক ধরনের স্যাটেলাইট ফোন, যা পহেলগাঁও হামলার সময় ব্যবহার করেছিল জঙ্গিরা। ফোনটি ফের সক্রিয় হতেই সেনাবাহিনী জঙ্গিদের অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হয় এবং শুরু হয় ‘অপারেশন মহাদেব’-এর চূড়ান্ত প্রস্তুতি।
গত কয়েকদিন ধরে সেনা জঙ্গিদের গতিবিধি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছিল। পরিকল্পনা ছিল, জঙ্গিরা এমন জায়গায় প্রবেশ করলেই তাদের ঘিরে ফেলে পালানোর সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হবে। ঠিক সেই পরিস্থিতি তৈরি হতেই সোমবার চালানো হয় অভিযান। কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, ‘অপারেশন মহাদেব’ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং হামলার মূল অভিযুক্তদের নিকেশ করা হয়েছে।