ডিজিটাল ডেস্ক ১লা অগাস্টঃ প্রতিশ্রুতি মতোই পুজো কমিটিগুলিকে বড়সড় উপহার দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দুর্গাপুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, এ বছর রাজ্যের প্রতিটি পুজো কমিটি পাবে এক লক্ষ দশ হাজার টাকা অনুদান। আগের বছরের তুলনায় এই অনুদান ২৫ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে সঙ্গে যোগ হল বিদ্যুতের ছাড়। পুজো কমিটিগুলিকে বিদ্যুতের মাসুলেও ৮০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার জন্য সিইএসই এবং রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন পর্ষদকে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি ঘোষণা করেছেন, আগামী ৫ অক্টোবর পুজো কার্নিভাল হবে কলকাতায়। তার আগে ২, ৩ এবং ৪ অক্টোবর— এই তিন দিন প্রতিমা বিসর্জন হবে(Durga Puja News)।
এ বছর সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহেই শুরু হচ্ছে শারদোৎসব, আর তার প্রস্তুতিতে ইতিমধ্যেই ব্যস্ত পুজো কমিটিগুলি। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে রাজ্যের বিভিন্ন দুর্গাপুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, ‘‘কলকাতা পুলিশ এবং রাজ্য পুলিশের মধ্যে যেন সমন্বয় থাকে। সব কন্ট্রোলরুমকে সারা ক্ষণ সক্রিয় রাখতে হবে। ভিড় এড়াতে প্রবেশ এবং বেরোনোর আলাদা পথ রাখতে হবে। পুজোমণ্ডপে পাবলিক অ্যাড্রেসাল সিস্টেম যাতে থাকে, দেখতে হবে সেটাও। বিদেশিদের যাতে কোনও ভাবে সম্মানহানি না হয়। পরিবহণ দফতরকে বলব বেশি গাড়ি চালাতে, যাতে মানুষ সময়ে সময়ে গাড়ি পান বাড়ি ফেরার জন্য। মেট্রোয় যাতে একটু বেশি ক্ষণ চলে, সে বিষয়ে আধিকারিকদের কথা বলতে বলব। লোকাল ট্রেনও যাতে পাওয়া যায় রাতে। পুজোমণ্ডপগুলিতে অ্যাম্বুল্যান্স প্রস্তুত রাখতে বলব। পদপিষ্টের ঘটনা যাতে না ঘটে, সেটাও দেখতে হবে। বিসর্জনের জায়গায় আলোর ব্যবস্থা করতে হবে।’
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে রাজ্য জুড়ে এক সামাজিক, সাংস্কৃতিক আবহ তৈরি করেছেন মমতা। সরকারি অনুদান থেকে শুরু করে বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, মহিলাদের জন্য পিঙ্ক পুলিশ, স্বাস্থ্য পরিষেবা— সমস্ত ক্ষেত্রেই পুজোর সময় নজরদারি বাড়ানো হয়। এ বারও যাতে তার অন্যথা না হয়, সেই নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি, পুজোমণ্ডপগুলিতে কড়া নজরদারি রাখার কথাও বলেছেন। তিনি জানান, ড্রোন, সিসি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে নজরদারি চালাতে হবে। মণ্ডপে আসা মহিলাদের নিরাপত্তা, প্রবীণদের সুবিধার দিকটিও পুজো কমিটিগুলিকে খেয়াল রাখতে বলেছেন তিনি। আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তা নজরে রেখেই অনুদানের অঙ্ক বাড়িয়ে এক লাখ টাকা করা হল বলে অভিযোগ বিরোধীদের। তাদের দাবি, গত বছর লোকসভা ভোট ছিল। তৃণমূল তাতে ভাল ফল করেছিল। সে বছর অনুদান বৃদ্ধি করে পুজো কমিটিগুলিকে ‘পুরস্কার’ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সাল থেকে রাজ্যের দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে আর্থিক অনুদান দেওয়া শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম বছর প্রতিটি কমিটিকে দেওয়া হয়েছিল ১০ হাজার টাকা করে, সঙ্গে ছিল বিদ্যুৎ বিলে ২৫ শতাংশ ছাড়ের সুবিধা।
২০১৯ সালে অনুদানের অঙ্ক বেড়ে হয় ২৫ হাজার টাকা। কোভিডের সময় সেই অঙ্ক একধাক্কায় বাড়িয়ে করা হয় ৫০ হাজার। ২০২২ সালে অনুদান বেড়ে হয় ৬০ হাজার টাকা এবং ২০২৩ সালে তা হয় ৭০ হাজার। এবার, ২০২৪ সালে আরও ১৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে অনুদান পৌঁছল ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকায়। একই সঙ্গে বেড়েছে অনুদানপ্রাপ্ত পুজো কমিটির সংখ্যাও। তবে গত বছর, আরজি কর হাসপাতাল আন্দোলনের আবহে কিছু পুজো কমিটি রাজ্য সরকারের অনুদান ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তখন মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন, যারা অনুদান নিতে চায় না, তাদের বাদ দিয়ে নতুন কমিটিগুলিকে সেই টাকা দেওয়া হবে। এ বছর অনুদান ফেরত দেওয়া সেই সব পুজো কমিটিগুলি কি আবার সরকারের অনুদান গ্রহণ করবে? এখন নজর রয়েছে সেদিকেও।