ডিজিটাল ডেস্ক, ২ অগাস্ট : শুক্রবার বিহারে সংশোধিত ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। আর সেই তালিকা প্রকাশের পরই বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন আরজেডি নেতা। সাংবাদিক সম্মেলন করে লালুপ্রসাদ যাদবের পুত্র প্রশ্ন তোলেন—“ভোটার তালিকায় যদি আমার নামই না থাকে, তা হলে আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব কী করে (Tejashwi Yadav On Bihar Voter List)?”
শুক্রবার বিহারের সংশোধিত ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। আর তার ঠিক পরদিনই সাংবাদিক সম্মেলনে বিস্ফোরক দাবি করেন তেজস্বী যাদব। তিনি জানান, সংশোধিত তালিকা থেকে তাঁর নিজের নামই বাদ পড়েছে। লালুপুত্রের বক্তব্য, বিএলও-র কাছে গিয়ে প্রয়োজনীয় সমস্ত নথিপত্র জমা দিয়ে ফর্ম পূরণ করেছিলেন তিনি। তবু নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে তাঁর এপিক নম্বর দিয়ে খুঁজলেও নাম দেখা যাচ্ছে না ভোটার তালিকায়। সাংবাদিকদের সামনে নিজের ফোনে সেই তথ্যও দেখান তিনি।
তেজস্বী যাদবের অভিযোগের জবাবে মুখ খুলেছে নির্বাচন কমিশন। তাঁর দাবি নাকচ করে কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, সংশোধিত ভোটার তালিকার ক্রমিক নম্বর ৪১৬-তে তেজস্বীর নাম স্পষ্টভাবে রয়েছে। কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই তালিকায় তেজস্বীর এপিক নম্বর হল RAB0456228। অন্যদিকে, সাংবাদিক সম্মেলনে তেজস্বী নিজেই যে এপিক নম্বর উল্লেখ করেছেন—RAB2916120—তা কমিশনের রেকর্ডে তাঁর নামে নেই। ফলে কমিশনের দাবি, তেজস্বীর অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং বিভ্রান্তিকর।
তেজস্বী যাদবের অভিযোগে নতুন করে বিতর্ক দানা বাঁধছে বিহারে। তিনি দাবি করেছেন, খসড়া ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে প্রায় ৬৫ লাখ ভোটারের নাম—যা মোট ভোটারের প্রায় ৮.৫ শতাংশ। তেজস্বীর অভিযোগ, কমিশনের প্রকাশিত তালিকায় ভোটারের ঠিকানা, বুথ নম্বর কিংবা এপিক নম্বর কিছুই নেই, ফলে কার নাম বাদ পড়েছে তা বোঝার কোনও উপায় নেই।
প্রসঙ্গত, বিহারে SIR নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছে ‘ইন্ডিয়া’ জোট। সংসদ থেকে জনসভা—বিভিন্ন মঞ্চে বিরোধী দলনেতারা SIR-কে নিশানা করে বারবার অভিযোগ তুলেছেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কারচুপির।
বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’ (Special Intensive Revision বা SIR) চালাচ্ছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে শুক্রবার দুপুরে প্রকাশিত হয়েছে সংশোধিত খসড়া ভোটার তালিকা। আর তাতেই দেখা গিয়েছে, তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ৬৫ লক্ষেরও বেশি নাম।
কমিশনের দাবি, যাঁরা ইতিমধ্যেই মৃত, অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়েছেন বা একাধিক ঠিকানায় নাম রয়েছে, মূলত তাঁদেরই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় বিহারে ভোটারের সংখ্যা ছিল প্রায় ৭ কোটি ৯০ লক্ষ। এসআইআর শেষ হওয়ার পর সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ৭ কোটি ২৪ লক্ষে। কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ভোটার বাদ পড়েছেন রাজধানী পটনা থেকে— প্রায় ৩ লক্ষ ৯৫ হাজার। এছাড়া মধুবনীতে ৩ লক্ষ ৫২ হাজার, পূর্ব চম্পারণে ৩ লক্ষ ১৬ হাজার এবং গোপালগঞ্জ জেলায় ৩ লক্ষ ১০ হাজার ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
তবে এই সমীক্ষা ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রবল বিতর্ক। বিরোধীদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন বিজেপির ইঙ্গিতেই কাজ করছে এবং এই ‘ভোটার পরিস্কারের’ নামে কার্যত ভোট চুরির চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আরও একটি অভিযোগ উঠে এসেছে—কমিশন ভোটার যাচাইয়ের জন্য যে নথিপত্র চেয়েছে, তাতে ভোটার কার্ড, আধার বা রেশন কার্ডের মতো সহজলভ্য ও প্রচলিত প্রমাণপত্র রাখা হয়নি। এই সিদ্ধান্তকে ভোটাধিকার হরণের চেষ্টা বলে আখ্যা দিয়ে বিরোধীরা ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছে।