Abhishek Banerjee Called Kalyan Banerjee : কল্যাণের ইস্তফা! দীর্ঘ পোস্ট মহুয়ার বিরুদ্ধে! অভিমানী কল্যাণের মান ভাঙাতে অভিষেকের ফোন

73

ডিজিটাল ডেস্ক, ৪ অগাস্ট : লোকসভায় তৃণমূলের চিফ হুইপ পদ থেকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফা ঘিরে রাজ্য-রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে জোর চাঞ্চল্য। পরিস্থিতি সামাল দিতে এবার উদ্যোগী হলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee Called Kalyan Banerjee)।

সূত্রের খবর, কল্যাণের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিষেক তাঁকে অনুরোধ করেছেন, অন্তত আগামী তিন দিন যেন তিনি চিফ হুইপ হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে যান। পাশাপাশি, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই শ্রীরামপুরের এই অভিজ্ঞ সাংসদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি। দলের অন্দরে কল্যাণের ‘অভিমান’ ভাঙিয়ে সমাধানের পথ খুঁজতেই এই আলোচনার পরিকল্পনা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

সোমবার তৃণমূলের সাংসদদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে বসেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই বৈঠক শেষ হওয়ার পরপরই নিজের ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেন লোকসভায় দলের চিফ হুইপ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভার মুখ্য সচেতকের (চিফ হুইপ) পদ থেকে ইস্তফার কারণ হিসেবে শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর উপর আস্থা রাখেননি, আর সেই কারণেই তিনি পদত্যাগ করেছেন।

ঘটনাচক্রে, ইস্তফার ঠিক আগেই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স হ্যান্ডলে একটি বিস্তৃত পোস্টে মহুয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন, যা রাজনৈতিক মহলে নতুন জল্পনার জন্ম দেয়। এই টানাপড়েনের মধ্যেই ঘটে আরেক বড় পরিবর্তন—সেই দিনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভায় দলের নেতা হিসেবে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবর্তে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা করেন। সব মিলিয়ে, কল্যাণের ইস্তফাকে ঘিরে উঠে এসেছে নেতৃত্বে আস্থার অভাব, অভ্যন্তরীণ বিরোধ এবং প্রজন্মগত পালাবদলের নানা ইঙ্গিত।

প্রসঙ্গত, লোকসভায় চিফ হুইপ পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, ফোনে অভিষেক তাঁকে অনুরোধ করেন, আগামী তিন-চার দিন আগের মতোই মুখ্য সচেতকের দায়িত্ব পালন করতে। তিনি আরও বলেন, এতটা আবেগপ্রবণ বা মান-অভিমান করে সিদ্ধান্ত না নেওয়াই ভাল।

জানা গিয়েছে, ৭ আগস্ট অভিষেক দিল্লি যাচ্ছেন। সেখানেই কল্যাণের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠকে বসে বিষয়টি আলোচনার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। তৃণমূল সূত্রে খবর, কল্যাণের ইস্তফা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়নি। একইসঙ্গে, অভিষেকের ফোনালাপের পরেও কল্যাণ চিঠি প্রত্যাহার করছেন বলেও এখনো পর্যন্ত জানাননি। সব মিলিয়ে, বিষয়টি এখনও অনিশ্চয়তার মধ্যেই রয়েছে।

সোমবার এক্স-এ দেওয়া একটি পোস্টে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, “আমি মহুয়া মৈত্রর সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলোর দিকে নজর দিয়েছি। একটি পাবলিক পডকাস্টে তিনি তাঁর এক সহ-সাংসদকে ‘শুয়োর’ বলে অভিহিত করেছেন। এ ধরনের ভাষা শুধু অশালীন নয়, বরং গণতান্ত্রিক বাক্‌সংস্কৃতির প্রতি চরম অবমাননা।”

তিনি আরও লেখেন, “যাঁরা গালাগাল দিয়ে নিজের বক্তব্য প্রকাশ করেন, তাঁদের উচিত নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান ও আচরণ নিয়ে আত্মসমালোচনা করা। কোনও জনপ্রতিনিধি যখন ব্যক্তিগত আক্রমণ ও অশোভন ইঙ্গিতের আশ্রয় নেন, সেটা শক্তির প্রকাশ নয়—বরং নিজের ভিতরের অনিরাপত্তার প্রতিফলন।”

কল্যাণ আরও বলেন, “আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, একজন জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে জবাবদিহি চাওয়া স্বাভাবিক অধিকার। পুরুষ কিংবা নারী যেকেউ এর সম্মুখীন হতে পারেন। যদি তা অস্বস্তিকর বা অপ্রিয়ও হয়, তবুও সেটাকে ‘নারীবিদ্বেষ’ বলে আড়াল করা যায় না।”

শেষে তিনি যোগ করেন, “এটি সরাসরি অপমান। যদি এমন কথা একজন নারীর প্রতি বলা হত, দেশের সর্বত্র প্রতিবাদ হতো। কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রে এ ধরনের কথা বলা হয় এবং সেটা প্রশংসিত হয়—এটা দ্বৈতমানসিকতা। মহুয়া মৈত্র যদি ভাবেন এই অপমানের আড়ালে তাদের ব্যর্থতা লুকানো যাবে বা মনোযোগ ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব, তাহলে তারা ভুল করছেন। যুক্তি বা তথ্যের বদলে অপমানকে বেছে নেয়া কেউই গণতন্ত্রের রক্ষক হতে পারে না, এ কথা দেশের মানুষ খুব ভালো জানে।”