Kalyan Banerjee Resignation Accepted : অভিষেকের জন্য অপেক্ষা নয়! কল্যাণের ইস্তফা গ্রহণ করে কাকলিকে দায়িত্ব, স্পষ্ট হচ্ছে কোন বার্তা?

52

ডিজিটাল ডেস্ক, ৫ অগাস্ট : ২৪ ঘণ্টাও পেরোল না, তার মধ্যেই গৃহীত হল কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফাপত্র (Kalyan Banerjee Resignation Accepted)। লোকসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতকের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য সোমবার বিকেলে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। মঙ্গলবার দুপুরেই সেই পদত্যাগ গ্রহণ করেন তৃণমূলের সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সিদ্ধান্তের কথা তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জানানো হয়েছে। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জায়গায় লোকসভায় তৃণমূলের নতুন মুখ্য সচেতক করা হয়েছে বারাসতের সাংসদ ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে। অন্যদিকে, কাকলি ঘোষ দস্তিদারের ছেড়ে যাওয়া পদ— অর্থাৎ লোকসভায় তৃণমূলের উপ-দলনেতার দায়িত্ব পেয়েছেন বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায়। তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দ্রুত এই নির্দেশ কার্যকর করতে হবে।

পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এই ঘটনার মাধ্যমে একটি বিষয় পরিষ্কার—কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর স্পষ্টতই ক্ষুব্ধ ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে কারণেই তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণে এক মুহূর্তও দেরি করেননি দলনেত্রী। তবে কল্যাণও যে সহজে মাথা নত করেননি, তা স্পষ্ট তাঁর প্রতিক্রিয়ায়। ইস্তফা গ্রহণের পর তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “চেয়ারপার্সনকে বলছি, ইস্তফা গ্রহণের জন্য ধন্যবাদ।”— যা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

তৃণমূলের ওই ঘোষণার পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে— এত দ্রুত কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফা গৃহীত হল কেন? বিশেষ করে, যখন সোমবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে তাঁকে ফোন করে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, তখনও কি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল? আরও প্রশ্ন উঠেছে— কল্যাণের ইস্তফার পরপরই কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে মুখ্য সচেতক এবং শতাব্দী রায়কে উপ-দলনেতা পদে বসিয়ে কি তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্ব একপ্রকার ‘সংবাদহীন বার্তা’ দিলেন কল্যাণকে?

এই প্রশ্নগুলির পেছনে যে সম্ভাব্য কারণ উঠে আসছে, তার কেন্দ্রে রয়েছে শ্রীরামপুরের সাংসদের সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য ও পদক্ষেপ। মূলত মহুয়া মৈত্রকে ঘিরেই কল্যাণের একাধিক প্রকাশ্য মন্তব্য এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণ দলীয় অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যদিও মহুয়া ছাড়া অন্য কেউ সরাসরি মুখ খোলেননি, কিন্তু দলের অন্দরমহলে বেশ কয়েকজন মহিলা সাংসদ তাঁর ব্যবহার ও ভাষা নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে ছিলেন বলে খবর। তাঁদের অভিযোগ ছিল, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়মিত অশালীন ও অপমানজনক ভাষা ব্যবহার করেন, এমনকি প্রকাশ্যেও।

সোমবার কল্যাণ ফের সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হন মহুয়াকে নিয়ে। শুধু তাই নয়, তিনি প্রকাশ্যে প্রশ্ন তোলেন—লোকসভায় কারা নিয়মিত আসেন, কারা অনুপস্থিত থাকেন, এমনকি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভার্চুয়াল বৈঠকে ‘অসত্য’ বলেছেন বলেও সরাসরি মন্তব্য করেন। এই সমস্ত ঘটনার পরেই কল্যাণ মুখ্য সচেতকের পদ থেকে ইস্তফা দেন। এবং পরদিনই সেই ইস্তফা গ্রহণ করে দলের তরফে নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করে দেওয়া হয়। পর্যবেক্ষকদের মতে, এতে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হল—দলীয় শৃঙ্খলা ও নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান মেনে নেওয়া হবে না।

দলের নির্দেশ অনুযায়ী মঙ্গলবার থেকেই নতুন দায়িত্বে কাজ শুরু করেছেন কাকলি ঘোষ দস্তিদার। এদিন তিনি ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে অংশ নেন বারাসতের সাংসদ হিসেবে, তৃণমূলের মুখ্য সচেতকের নতুন ভূমিকায়। অন্যদিকে, কাকলির আগের পদ— লোকসভায় উপ দলনেতার দায়িত্ব পেয়েছেন বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায়। দলীয় এই রদবদলের পর কাকলি ও শতাব্দীর নতুন দায়িত্বের জন্য তাঁদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তিনি তৃণমূলের এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে শুভকামনা জানান দু’জনকে।