ডিজিটাল ডেস্ক ৭ই জুলাইঃ ভিনরাজ্যে বাঙালি হত্যার অভিযোগে উত্তাল গোটা দেশের রাজ্য রাজনীতি। এবার তার প্রতিবাদে সুর চড়িয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বৃহস্পতিবার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবসে আরও একবার তোপ দাগলেন মমতা। বললেন,“বাংলার উপর ভাষা সন্ত্রাস বরদাস্ত করব না।” সম্প্রতি বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের বিরুদ্ধে একাধিক রাজ্যে ঘটে চলা অপমানজনক ঘটনার প্রতিবাদে নতুন করে ‘ভাষা আন্দোলন’-এর ডাক দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৭শে জুলাই থেকে রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে শুরু হয়েছে এই আন্দোলন—মিছিল, অবস্থান-বিক্ষোভের মাধ্যমে। বোলপুরে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুণ্যভূমিতে পায়ে হেঁটে এই কর্মসূচির সূচনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে(Mamata Banerjee)।
ঝাড়গ্রামে আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানের সূচনার আগে X হ্যান্ডেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, “বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবসে আমাদের প্রাণের ঠাকুরকে জানাই আমার অন্তরের শ্রদ্ধা ও প্রণাম। বছরের প্রতিটি দিনে, প্রতিটি মূহূর্তে তিনি আমাদের ঘিরে রয়েছেন। বিশেষত, আজ শুধু বাংলা ভাষা বলার জন্য বাঙালির ওপর যখন সন্ত্রাস নেমে আসছে, তখন তিনিই আমাদের লড়াই করার প্রেরণা। রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষার সর্বকালীন শ্রেষ্ঠ প্রতিভা। আজ যখন তাঁর ভাষার ওপর আক্রমণ নেমেছে, তখন আমরা দু:খিত, ব্যথিত, মর্মাহত। “চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির”, সেই ভারতের নির্মাণে রবীন্দ্রনাথ-ই আমাদের ধ্রুবতারা। রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন থেকে তাঁকে প্রণাম জানিয়ে, আমরা ভাষা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছি। যতদিন এই বাংলা-বিদ্বেষ চলবে – আমরা লড়াই চালিয়ে যাবো। আর এই লড়াইয়ের পথে রবীন্দ্রনাথই আমাদের পথনির্দেশক। আজ আমাদের নতুন করে শপথ নেবার দিন – ‘বাংলার ওপর ভাষা সন্ত্রাস মানবো না’।”
এই আবহেই সৃষ্টি হয়েছিল দিল্লি পুলিশের একটি সরকারি চিঠি ঘিরে বিতর্ক, যেখানে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই চিঠি এক্স-এ প্রকাশ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। চিঠিতে বলা হয়েছে, কিছুদিন আগে বাংলাদেশি সন্দেহে আটজনকে আটক করে দিল্লি পুলিশ এবং তাঁদের কাছ থেকে যে নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তা বাংলা ভাষায় লেখা। এসব নথি অনুবাদের জন্য একজন বাংলা অনুবাদকের প্রয়োজন—এই মর্মে একটি আবেদন জানানো হয়।
আর সেই চিঠিতেই বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি’ ভাষার তকমা দেওয়া হয়েছে। তার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল। যে ভাষা ধ্রুপদী ভাষার তকমা পেয়েছে, যে ভাষায় বিশ্ববরেণ্য সমস্ত সৃষ্টিকর্ম হয়েছে, যে ভাষা দেশের অন্যতম ‘অফিশিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ’, তাকে ‘বাংলাদেশি’ বলে তকমা দেওয়ার অর্থ সংবিধানকে অপমান। নিজের এক্স হ্যান্ডলে এমনই মত প্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এই ঘটনাকে ‘অপমানজনক, সংবিধান-বিরোধী, দেশবিরোধী’ বলে দিল্লি পুলিশকে বিঁধেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।