Police On Nabanna Abhijan : নবান্ন অভিযানকারীদের জমায়েতের বিকল্প জায়গা বেঁধে দিল পুলিশ, ‘অমান্য করলে কড়া পদক্ষেপ’-এর বার্তা!

21

ডিজিটাল ডেস্ক, ৮ অগাস্ট : আরজি কর-কাণ্ডের এক বছর পূর্তিতে শনিবার নবান্ন বা কালীঘাট অভিযানের অনুমতি দেওয়া যাবে না—এই মর্মে শুক্রবার স্পষ্ট বার্তা দিল কলকাতা ও রাজ্য পুলিশ। বিক্ষোভ-প্রতিবাদ করতে চাইলে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হবে বলেও জানানো হয়েছে। পুলিশের তরফে বিকল্প হিসেবে দু’টি জায়গার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে বিক্ষোভের জন্য। একই সঙ্গে হুঁশিয়ারিই দেওয়া হয়েছে, কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে বা নির্ধারিত বিধিনিষেধ অমান্য করলে, তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে (Police On Nabanna Abhijan)।

শুক্রবার এক সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা নবান্ন অভিযান ঘিরে কড়া বার্তা দিলেন। সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম, এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতীম সরকার এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা। এডিজি জাভেদ শামিম জানান, শান্তিপূর্ণ মিছিলের ক্ষেত্রে পুলিশের কোনও আপত্তি নেই। তবে নবান্নের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জমায়েত একেবারেই নিষিদ্ধ।

এডিজি সুপ্রতীম সরকার জানান, নবান্ন চত্বরে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ নম্বর ধারা জারি রয়েছে, যার ফলে কোনওরকম জমায়েত বা প্রতিবাদ কর্মসূচি সেখানে করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, মিছিলে অংশগ্রহণের জন্য মন্দিরতলা বাসস্ট্যান্ড, বঙ্কিম সেতুর নিচে এবং হাওড়া ময়দান—এই তিনটি জায়গা নির্দিষ্ট করা হয়েছে, যেখানে সর্বাধিক ১২০০ জন অংশ নিতে পারবেন।

কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, সাঁতরাগাছি বাসস্ট্যান্ডকে বিকল্প জমায়েত স্থল হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল বা প্রতিবাদ কর্মসূচি করা যাবে এবং প্রশাসনও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে। তবে পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “কোনও সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হলে, পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।”

শনিবার আরজি কর-কাণ্ডের নির্যাতিতার মা-বাবার ডাকা নবান্ন অভিযানে উত্তেজনা বাড়ছে। এই কর্মসূচিকে ইতিমধ্যেই সমর্থন জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। গত বছর ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর ডাকে যে নবান্ন অভিযান হয়েছিল, তাতে বিজেপিও প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছিল। এ বারও পুলিশ জানিয়েছে, বিজেপির সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছিল, তবে তারা জানিয়েছে, এই কর্মসূচি সম্পর্কে তাদের কোনও নির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে সূত্রের খবর, শনিবারের অভিযানে ‘ছাত্র সমাজ’-এর নেতারাও উপস্থিত থাকতে পারেন। যদিও এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।

আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে ফের সক্রিয় হলেন চিকিৎসক ও সাধারণ নাগরিকেরা। শুক্রবার শহর জুড়ে ‘রাত দখল’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট। শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে জমায়েতের পরিকল্পনা করা হয়েছে। নির্যাতিতার মা-বাবাও সেখানে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন।

পরদিন, শনিবার নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছেন নির্যাতিতার পরিবার। তৃণমূল ছাড়া সব রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের এই প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। তবে একটি শর্তে—এই মিছিলে কোনও দলীয় পতাকা ব্যবহার করা যাবে না। তাঁদের দাবি, এটি কোনও রাজনৈতিক দল নয়, সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ। এদিকে, নবান্ন অভিযানে জনজীবন বিঘ্নিত হতে পারে আশঙ্কা করে হাওড়ার এক বাসিন্দা কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছেন। এর আগেও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আদালতে মামলা হয়েছিল। সেই মামলাটি বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে বিচারাধীন রয়েছে।

নবান্ন অভিযান ঘিরে কলকাতা হাই কোর্টে দুটি মামলা হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। তার মধ্যে একটি মামলার রায়ের বিষয়বস্তু সম্পর্কে তারা অবগত। পুলিশ জানায়, আদালত একদিকে যেমন ‘শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ’কে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, তেমনই স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছে, কোনওরকম হিংসা বা সরকারি সম্পত্তি নষ্ট বরদাস্ত করা হবে না। সেই অনুযায়ী, প্রয়োজন হলে রাজ্য প্রশাসন বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

এর পরেই পুলিশের তরফে জানানো হয়, নবান্ন রাজ্য সরকারের সদর দফতর এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ভবন। ফলে এই ভবন ও আশপাশের এলাকায় সবসময়ই উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা বজায় থাকে। সেখানে কার্যকর রয়েছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ ধারা (সাবেক ১৪৪ ধারা), যা জমায়েত ও প্রতিবাদ নিষিদ্ধ করে। তাই ওই এলাকায় কোনও ধরনের মিছিল বা বিক্ষোভ কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। তবে বিকল্প হিসেবে পুলিশের তরফে দুটি জায়গার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে—সাঁতরাগাছি বাসস্ট্যান্ড এবং রানি রাসমণি রোড। আইন মেনে এই দুই স্থানে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি করা যেতে পারে। হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, “শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের জন্য আগে থেকে আবেদন করুন। কোথা থেকে কতজন অংশ নেবেন, কীভাবে আসবেন—সেই তথ্য দিলে পুলিশও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবে।”

শনিবার কালীঘাট চলো অভিযানে হস্তক্ষেপ করল না কলকাতা হাই কোর্ট। ‘অভয়া মঞ্চ’ ও চিকিৎসকদের যৌথমঞ্চের ডাকে আয়োজিত এই মিছিলের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রোড এবং হাজরা রোড ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিরা। শুনানিতে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ জানিয়ে দেন, যেহেতু পুলিশ ইতিমধ্যেই এই কর্মসূচির জন্য কোনও অনুমতি দেয়নি, তাই আদালতের পক্ষ থেকে এখনই কোনও হস্তক্ষেপ করার প্রয়োজন নেই।

বিচারপতি আরও স্পষ্ট করেন, কেউ যদি আইন ভাঙে, তবে পুলিশ নিজের ক্ষমতাবলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবে। ফলে, কালীঘাট চলো অভিযানে এখনই নিষেধাজ্ঞা জারি করল না আদালত, বরং পরিস্থিতির উপর নজর রেখে আইন রক্ষার দায়িত্ব পুলিশের উপরই ছেড়ে দিল।

কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা জানিয়েছেন, শনিবার বিকেলে অভয়া মঞ্চের ডাকা কালীঘাট অভিযানেও অনুমতি দেওয়া হবে না। আয়োজকদের এই সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এবং তাঁদের জন্য বিকল্প জায়গাও নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

মনোজ বর্মা বলেন, “এই সময়ে সিসিটিভি ক্যামেরা, ড্রোনের মতো প্রযুক্তি রয়েছে। ফলে কেউ আইন ভাঙলে বা অপ্রীতিকর কিছু করলে সহজেই চিহ্নিত করা যাবে। পুলিশের তরফে নির্ধারিত বিকল্প স্থান ছাড়াও প্রয়োজন অনুযায়ী অন্যত্রও ব্যবস্থা রাখা হবে।” এদিকে, রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার সাফ জানিয়েছেন, “বিকল্প জায়গা ছাড়া অন্য কোথাও যদি জমায়েতের চেষ্টা হয়, তাহলে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এটুকু একেবারে স্পষ্ট—নবান্ন ও সংলগ্ন এলাকায় কোনও জমায়েত বা মিছিলের অনুমতি দেওয়া হবে না।”