ডিজিটাল ডেস্ক ৯ই জুলাইঃ আর জি কর কাণ্ডের বছর পার। শনিবার নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে। যদিও প্রশাসনের তরফ থেকে এখনও এ বিষয়ে কোনও অনুমতি চাওয়া হয়নি বলেই দাবি রাজ্য পুলিশ কর্তাদের। তবে উত্তেজনা এড়াতে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে কলকাতা পুলিশ। নবান্ন অভিযানের জেরে শনিবার শহর কলকাতার বেশ কিছু রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লালবাজার। নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে শনিবার ভোর ৪টে থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রয়োজন অনুযায়ী কলকাতার একাধিক রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে লালবাজার সূত্রে খবর। এই সময়কালে শুধুমাত্র জরুরি পরিষেবার গাড়ি চলাচল করতে পারবে। অন্য সব ধরনের পণ্যবাহী গাড়ি নিষিদ্ধ থাকবে(Nabanna Abihijan)।
যান নিয়ন্ত্রিত যে রাস্তাগুলিতে—–
যান নিয়ন্ত্রিত রাস্তাগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্যাসাগর সেতু, খিদিরপুর রোড, তারাতলা রোড, সার্কুলার গার্ডেনরিচ রোড, হাইড রোড, জওহরলাল নেহরু রোড, আরআর অ্যাভিনিউ, রেড রোড, ডাফরিন রোড, মেয়ো রোড, এজেসি বোস রোড, এসএন ব্যানার্জি রোড, এমজি রোড, ব্র্যাবোর্ন রোড এবং হাওড়া সেতু। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, শহরে ট্র্যাফিক স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনসাধারণকে রুট প্ল্যান করে বেরোনোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যারিকেডগুলির কাঠামো এবার পুরোপুরি বদলে দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় সিমেন্ট ঢেলে লোহার বিম গভীরভাবে পোঁতা হয়েছে, তার উপর বসানো হয়েছে মোটা লোহার রডের তৈরি খাঁচা-আকৃতির গঠন। এমন নিরাপত্তা বলয় অতীতে দেখা যায়নি। এই বিশেষ ব্যারিকেড ভাঙতে গেলে বিপুল জনবল, সরঞ্জাম এবং দীর্ঘ সময় লাগবে—যা কোনও তাৎক্ষণিক আন্দোলনের পক্ষে কার্যত অসম্ভব বলে নিরাপত্তা বাহিনীর দাবি।
কন্টেনার দিয়ে রাস্তা আটকাল পুলিশ—–
নবান্ন অভিযানের আগে বিভিন্ন জায়গায় দুর্ভেদ্য দুর্গের মতো ব্যবস্থা করা হয়েছে। বড় বড় কন্টেনার দিয়ে রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে। নবান্ন সংলগ্ন সমস্ত রাস্তা কার্যত দুর্গে পরিণত করেছে হাওড়া পুলিশ প্রশাসন। বিভিন্ন রাস্তায় স্টিল ও লোহার ব্যারিকেড এবং উঁচু স্টিলের বেড়া দিয়ে রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কন্টেনার ছাড়াও জলকামান রাখা হয়েছে।
নবান্ন অভিযানে সামিল হচ্ছে তামান্নার পরিবার——-
নবান্ন অভিযানে সামিল হতে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিল তামান্না খাতুনের পরিবার। তিলোত্তমার পরিবারের সঙ্গে তামান্নার বাবা-মাও বিচার চাইতে মিছিলে সামিল হতে নদিয়ার পলাশী স্টেশন থেকে ট্রেনে চড়ে সিপিএম কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে কলকাতা রওনা দিলেন। প্রসঙ্গত, কালীগঞ্জে বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনের ফল ঘোষণার পর তৃণমূলের বিজয়োল্লাসের সময় বোমার আঘাতে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তামান্নার মৃত্যু হয়। তার পরিবারের অভিযোগ, এখনও পর্যন্ত অধিকাংশ অভিযুক্ত অধরা। তামান্নার মা বলেন, তিনিও মেয়ের খুনের বিচার চাইতে কলকাতায় তিলোত্তমার বাবা-মায়ের সঙ্গে পা মেলাবেন নবান্ন অভিযানে।
‘মানুষের প্রতিবাদের ঝড়ে সব ব্যারিকেড উড়ে যাবে’, তিলোত্তমার বাবা-মা। এদিন নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছেন তাঁরা। সবাইকে সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে, নবান্ন অভিযান আটকাতে নানা ব্যবস্থা নিয়ে পুলিশ। কন্টেনার, ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা আটকানো হয়েছে। এই নিয়ে এদিন তিলোত্তমার বাবা-মা বলেন, কোনও ব্যারিকেড দিয়ে মানুষের প্রতিবাদ থামানো যাবে না। মানুষের প্রতিবাদে সব ব্যারিকেড উড়ে যাবে।
নবান্ন অভিযান নিয়ে শুক্রবার এডিজি আইনশৃঙ্খলা জাভেদ শামিম, এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতীম সরকার, কলকাতা ও হাওড়ার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা এবং প্রবীণ ত্রিপাঠি সাংবাদিক বৈঠক করেন। শান্তিপূর্ণ মিছিলের ক্ষেত্রে পুলিশের কোনও আপত্তি নেই বলেই জানান এডিজি আইনশৃঙ্খলা জাভেদ শামিম। এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতীম সরকারের বক্তব্যও প্রায় একই। তিনি জানান, নবান্নের আশেপাশে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ ধারা জারি রয়েছে। তাই যেকোনও জমায়েত নিষিদ্ধ। মন্দিরতলা বাসস্ট্যান্ড, বঙ্কিম সেতুর নিচে এবং হাওড়া ময়দানে জমায়েত করা যাবে। ৩টি জায়গা মিলিয়ে ১২০০ জন থাকতে পারেন মিছিলে। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশমতো বিকল্প জায়গা হিসাবে সাঁতরাগাছি বাসস্ট্যান্ডকে বেছে দেওয়া হয়েছে। সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই। সেক্ষেত্রে প্রশাসনও মিছিলকারীদের পূর্ণ সহযোগিতা করবে। তবে কোনও সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা যাবে না। সেক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পুলিশ বাধ্য হবে বলেই জানান পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা।