Nabanna On Bengali Film Screening : নবান্নের নতুন নির্দেশিকা! রাজ্যের সব হলে দিনে অন্তত একটি বাংলা ছবি দেখাতেই হবে ‘প্রাইম টাইমে’!

73

ডিজিটাল ডেস্ক, ১৩ অগাস্ট : পশ্চিমবঙ্গের সব সিনেমাহলে দিনে অন্তত একটি বাংলা ছবি দেখানো বাধ্যতামূলক করল নবান্ন। সারা বছর ধরে এই নিয়ম কার্যকর থাকবে। নতুন নির্দেশিকায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ‘প্রাইম টাইম’-এ অন্তত একটি বাংলা সিনেমা প্রদর্শন করতেই হবে।

বুধবার রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের পক্ষ থেকে এক নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত সিনেমাহল ও মাল্টিপ্লেক্সের প্রতিটি স্ক্রিনে বছরে ৩৬৫ দিনই ‘প্রাইম টাইম’-এ অন্তত একটি বাংলা ছবি দেখানো বাধ্যতামূলক। প্রাইম টাইম হিসেবে ধরা হয়েছে দুপুর ৩টে থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময়সীমা। অর্থাৎ, ওই সময়ের মধ্যে একটিও বাংলা ছবি দেখাতেই হবে (Nabanna On Bengali Film Screening)।

এই নির্দেশিকা ১৯৫৪ সালের পশ্চিমবঙ্গ চলচ্চিত্র আইন অনুসারে জারি করা হয়েছে। রাজ্য সরকার জানিয়েছে, প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করা হবে। পাশাপাশি নবান্ন জানিয়েছে, নির্দেশিকা জারির পর থেকেই তা অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে এবং পরবর্তী কোনো নির্দেশ আসা পর্যন্ত এটাই বলবৎ থাকবে।

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে প্রবেশ করেছে বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতিসত্তার প্রসঙ্গ। রাজনৈতিক বিতর্কে এই ইস্যু ক্রমেই জোরাল হয়ে উঠেছে। শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে এই নিয়ে সংঘাত চরমে উঠেছে। এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে রাজ্যের সিনেমাহলগুলিতে বাংলা ছবির প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করার নবান্নর সাম্প্রতিক নির্দেশিকাকে অনেকেই ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার রাজনৈতিক বার্তা হিসেবেই দেখছেন।

এদিকে, দেশের অন্তত ৫ থেকে ৭টি রাজ্যে বাংলাভাষীদের উপর নিগ্রহের অভিযোগ ঘিরে ইতিমধ্যেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে সরব হয়েছেন এবং ‘ভাষা আন্দোলন’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন। তাঁর দাবি, “বাংলায় প্রতিভা আছে বলেই বাংলার মানুষের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে। এটা আমরা কোনওভাবেই মানব না।”

বাংলা ভাষা ও বাঙালি পরিচয়কে রক্ষার লড়াইকে সরাসরি রাজনীতির ময়দানে নিয়ে গিয়েছেন মমতা। বিজেপিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “যখন বাঙালি ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করছিল, তখন তোমরা কোথায় ছিলে? ইংরেজদের দালালি করছিলে।”

তৃণমূল নেত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এই আন্দোলন শুধু রাজনৈতিক মঞ্চে সীমাবদ্ধ থাকবে না। তিনি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “বিদ্বজ্জন, খেলোয়াড়, শিল্পী—যাঁরা বাংলাকে ভালবাসেন, তাঁরা নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রতিবাদ করুন। প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। বাংলা হার মানে না, সেটা বুঝিয়ে দিন।” ভাষা-আত্মমর্যাদা এবং সাংস্কৃতিক অস্তিত্বের এই লড়াইকে আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে দিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী।

অনেকের মতে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশল হিসেবে তৃণমূল বাংলা ভাষা ও বাঙালি অস্মিতাকে প্রধান হাতিয়ার করতে চাইছে। সেই লক্ষ্যেই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন, প্রতি শনিবার এবং রবিবার তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা ‘ভাষা আন্দোলন’-এর নামে মিছিল করে বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করবেন।

শুধু রাজনৈতিক স্তরে নয়, এবার প্রশাসনিক দিক থেকেও বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। ইতিমধ্যেই কলকাতা পুরসভা এলাকার দোকান ও প্রতিষ্ঠানে বাংলায় লেখা সাইনবোর্ড বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিয়েছে পুর কর্তৃপক্ষ। এবার আরও এক ধাপ এগিয়ে রাজ্যের সমস্ত সিনেমাহলে বাংলা ছবির প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করার নির্দেশিকা জারি করল নবান্ন। বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, এসবই রাজ্যের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মেরুকরণের প্রক্রিয়ার অংশ, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বাংলা ভাষা ও বাঙালি পরিচয়।