ডিজিটাল ডেস্ক, ১৩ অগাস্ট : বিহারের পর এবার পশ্চিমবঙ্গেও ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য SIR (Special Intensive Revision) প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে বলে জানা গেছে। এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশন গত ৮ আগস্ট রাজ্য সরকারকে একটি চিঠি পাঠায় (SIR In Bengal)।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টে এই বিষয়ে শুনানিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষের আইনজীবী গোপালশংকর নারায়ণ প্রশ্ন তোলেন, “একটি রাজ্যের অনুমতি ছাড়াই কি SIR প্রক্রিয়া চালু করা যায়?” পাশাপাশি তিনি জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রাজ্যের আরও কিছুটা সময় প্রয়োজন।
বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চে বুধবার বিহারে চলমান SIR (Special Intensive Revision) প্রক্রিয়া নিয়ে শুনানি হয়। শুনানির শুরুতেই আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁর বক্তব্য, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে যাঁদের নাম ভোটার তালিকায় ছিল, তাঁদের অনেকের নাম কীভাবে হঠাৎ করে বিহারের SIR তালিকা থেকে বাদ গেল?
নাগরিকত্ব প্রমাণে কমিশনের চাওয়া নথি নিয়েও কড়া সমালোচনা করেন সিংভি। তিনি বলেন, “আধার কার্ড গ্রহণ করা হচ্ছে না। অথচ জল, বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোগ প্রায় প্রতিটি ঘরেই রয়েছে, তা-ও বিবেচনায় আনা হয়নি। পাসপোর্টের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু ভারতে মাত্র ২ শতাংশের কম মানুষের পাসপোর্ট আছে। আর যে নথিগুলি চাওয়া হয়েছে, সেগুলি সবার কাছেই নেই। যদি কারও নিজের জমি না থাকে, তাহলে তালিকার ৫, ৬, ৭ নম্বর নথি তো তিনি দিতেই পারবেন না। আমি ভাবছি, বিহারে আদৌ কত জন এই নিয়মে যোগ্য বলে গণ্য হবেন? কারণ বিহারে রেসিডেন্স সার্টিফিকেট বলেও কিছু নেই।”
এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিচারপতি সূর্যকান্ত পাল্টা মন্তব্য করেন, “যদি নির্বাচন কমিশন বলত ১১টি নথির সবগুলোই জমা দিতে হবে, তা হলে সেটা ভোটার-বিরোধী হত। কিন্তু এখানে তো বলা হয়েছে, ওই ১১টির মধ্যে যেকোনও একটি দিলেই হবে। তাহলে আপত্তির জায়গাটা কোথায়?”
তবে সিংভির প্রশ্ন, ভোটের মুখে হঠাৎ করে এই SIR চালুর প্রয়োজন হল কেন? সারাবছর ধরে এই কাজটা করা যেত না? বিষয়টি নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপের আশঙ্কাও উত্থাপন করেন তিনি।
এরপর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে আইনজীবী গোপাল শংকর নারায়ণ সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করে বলেন, “গত ৮ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের তরফে একটি নোটিস পাঠানো হয়। কিন্তু রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা না করেই কি SIR প্রক্রিয়া শুরু করা যেতে পারে?” তিনি কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “বিহারে গণহারে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। ভোট দেওয়া তো আমার সাংবিধানিক অধিকার। নির্বাচন কমিশন কীভাবে এভাবে ছেলেখেলা করতে পারে?” তবে পালটা মন্তব্য করেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী। তিনি বলেন, “এই প্রথম SIR হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কমিশন চাইলে সমস্ত ভোটারের নামই বাদ দিতে পারত। কিন্তু তারা তা করেনি।”
এর পরেই গোপাল শংকর নারায়ণ পশ্চিমবঙ্গে SIR প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার আর্জি জানান আদালতের কাছে।