Online Gaming Ban Law : ভারতে নিষিদ্ধ হচ্ছে অনলাইন গেমিং?

79

ডিজিটাল ডেস্ক, ২০ অগাস্ট : ভারতে এবার কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হল অনলাইন গেমিংয়ের ক্ষেত্রে। বুধবার লোকসভায় পাশ হয়েছে ‘দ্য প্রমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অব অনলাইন গেমিং বিল, ২০২৫’। এই বিল অনুযায়ী, আর্থিক লেনদেন যুক্ত সমস্ত ধরনের অনলাইন গেম নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব রয়েছে (Online Gaming Ban Law)। শুধু তাই নয়, এমন গেমের প্রচার চালালে তার উপরেও জরিমানা বসানোর বিধান রাখা হয়েছে।

১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল নিয়ে বিরোধীদের তীব্র প্রতিবাদের মধ্যেই লোকসভায় ধ্বনিভোটে পাশ হয়ে গেল অনলাইন গেমিং সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিল। ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের পরেই ‘দ্য প্রমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অব অনলাইন গেমিং বিল, ২০২৫’ অনুমোদিত হয়।

এই নতুন বিলে আর্থিক লেনদেনে যুক্ত অনলাইন গেমের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তহবিল স্থানান্তর বা সহায়তায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের প্রস্তাব রয়েছে। গত কয়েক বছরে ভারতে অনলাইন গেমিং শিল্প দ্রুত বিকশিত হয়েছে। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ₹১০,০০০ কোটি টাকার লেনদেন হয় অনলাইন গেমে বাজি ধরার ক্ষেত্রে। এই বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার জেরে অসংখ্য ছোট-বড় সংস্থা এই খাতে ব্যবসা শুরু করেছে, যা এখন এক বিশাল শিল্পে পরিণত হয়েছে।

এই নতুন আইন কার্যকর হলে বড়সড় ধাক্কা খেতে পারে দেশের অনলাইন গেমিং শিল্প। বিপদের মুখে পড়বে বহু সংস্থা, এবং কাজ হারাতে পারেন প্রায় দুই লক্ষ কর্মী। লক্ষাধিক কোটি টাকার বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়লে, তার থেকে যে বার্ষিক ₹২০,০০০ কোটি জিএসটি আদায় হত, তাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর থেকে অনলাইন গেমিংয়ের উপর ২৮ শতাংশ হারে জিএসটি ধার্য করা হয়েছিল। ফলে আর্থিক লেনদেন যুক্ত গেমিং নিষিদ্ধ হলে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির রাজস্বে বড়সড় ঘাটতি দেখা দিতে পারে। লোকসভায় বিল পাশ হওয়ার পর থেকেই অনিশ্চয়তার ছায়া পড়েছে ফ্যান্টাসি স্পোর্টস গেমিং সংস্থাগুলির ভবিষ্যতের উপর। যদিও অধিকাংশ সংস্থার দাবি, তারা কোনওভাবেই বাজি ধরা, অর্থ নয়ছয় বা অবৈধ জুয়ায় যুক্ত নয়, বরং নিয়ম মেনে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

ফ্যান্টাসি গেমিংয়ে অর্থের লেনদেন হয় ঠিকই, তবে তা সরাসরি নয়—একটা ঘুরপথে। এই ধরনের গেমে খেলোয়াড় বা তারকাদের নিয়ে অল্প টাকার বিনিময়ে একটি দল গঠন করতে হয়। এরপর সেই খেলোয়াড়েরা বাস্তব ম্যাচে কেমন পারফর্ম করলেন, তার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় পুরস্কার। অনেক সময় বিজয়ীদের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকার পুরস্কারও থাকে। ফলে একে সরাসরি ‘জুয়া’ বলা যায় না। ব্রিটেন, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলিতে অনলাইন গেমিং অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও, সেখানে এই খাতটি কঠোর নিয়ন্ত্রণের আওতায়। কেওয়াইসি বাধ্যতামূলক, বিজ্ঞাপন ও প্রচারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে, এবং সেই সব মানদণ্ড পূরণ করলেই ব্যবসার লাইসেন্স মেলে।

অনলাইন গেমিংয়ের উপর পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে বিকল্প নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেত—এমন মত প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞ মহল ও ব্যবসায়িক সংগঠনের একাংশ। তা সত্ত্বেও সরকার কেন এত কঠোর পদক্ষেপ নিল? সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরেই অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্মে বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন নিয়ে নানা অভিযোগ জমা পড়ছিল। বহু ব্যবহারকারী এই গেমে অংশ নিয়ে বড়সড় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এমনকি, সাম্প্রতিক সময়ে এমন অভিযোগও উঠেছে যে, ব্যবহারকারীর অজান্তেই তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে।
এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে লোকসভায় পাশ হওয়া নতুন বিলে অনলাইন গেমিং পরিচালনার ক্ষেত্রে এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।