Narendra Modi On Bengali Emotion : এবারও মোদির মুখে ‘জয় কালী’! ফের বাঙালি আবেগে শান দিলেন মোদি

66

ডিজিটাল ডেস্ক, ২২ অগাস্ট : বাংলা ভাষায় কথা বললেই বাংলাদেশি সন্দেহে ভিনরাজ্যে বাঙালিদের হেনস্তার অভিযোগে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। এই ইস্যুতে প্রতিবাদে মুখর হয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। এর মধ্যেই দমদমের জনসভা থেকে বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে জোরালো সওয়াল করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi On Bengali Emotion)।

এদিনের সভামঞ্চ থেকে আবারও বাঙালি আবেগকে ছুঁয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়ার প্রসঙ্গে বলেন, “বিজেপি সরকার গর্বের সঙ্গে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে আরও শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছে। আমরাই বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দিয়েছি।”

তবে ভিনরাজ্যে বাঙালিদের হেনস্তার প্রসঙ্গে একটিও শব্দ খরচ করলেন না প্রধানমন্ত্রী। এই ইস্যুতে যখন রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন চলছে, তখন মোদির নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। পালটা কটাক্ষে মুখর হয়ে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “টেলিপ্রম্পটারে দেখে বাংলা বলেই কি বুঝব, তিনি বাংলাকে ভালোবাসেন? এটা নিছক দেখনদারি।”

বাংলায় এসে ‘বাঙালি না বাংলাদেশি’ বিতর্কে সম্পূর্ণ নীরব থাকলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে জনসভা থেকে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়ে বলেন, “অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াবই। একবার ভোট দিন, এরা নিজেরাই পালিয়ে যাবে।” প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের জবাবে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দিয়েছে তৃণমূল। সাংবাদিক বৈঠক করে তারা কটাক্ষ করে বলেছে, “যেখানে বাঙালি পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, সেখানে প্রধানমন্ত্রী চুপ কেন? আসল প্রশ্ন থেকে মন ঘোরাতেই অনুপ্রবেশ ইস্যু তুলে ভোটের রাজনীতি করছেন তিনি।”

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর ভাষণে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না নেওয়ার যে ইঙ্গিত ছিল, তা আগেই জানানো হয়েছিল দ্য ওয়ালে-র প্রতিবেদনে। ঠিক তেমনটাই ঘটল। যদিও নাম না করেও তৃণমূল সরকারকে আক্রমণে কোনও কার্পণ্য রাখলেন না প্রধানমন্ত্রী।

দমদমের সভা থেকে বাংলার ‘ভদ্রলোক’ সমাজের উদ্দেশে মোদীর স্পষ্ট বার্তা— “তৃণমূলকে বিদায় দিন, ওরা থাকলে বাংলার কোনও উন্নয়ন হবে না।”

প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, দিল্লি থেকে রাজ্যের জন্য যে উন্নয়নমূলক টাকা পাঠানো হয়, তা সাধারণ মানুষের কাজে লাগে না। সেই টাকা লুঠ হয়ে যাচ্ছে এবং তৃণমূলের ক্যাডারদের স্বার্থে ব্যয় হচ্ছে। মোদীর কথায়, “অন্য রাজ্যগুলোতে স্মার্ট সিটি মিশন ও পরিকাঠামো উন্নয়ন এগিয়ে চলেছে। কিন্তু বাংলায় তৃণমূল সরকার কেন্দ্রের প্রকল্পগুলিই আটকে দিচ্ছে। প্রশ্ন হল, বাংলার শিক্ষিত, ভদ্র মানুষরা কি এমন রাজনীতি মেনে নেবেন?”

তিনি আরও স্মরণ করিয়ে দেন, স্বাধীনতার পর কংগ্রেস এবং বাম শাসনের দীর্ঘ যুগ শেষে ২০১১ সালে মানুষ ‘মা-মাটি-মানুষ’-এর স্লোগানে আস্থা রেখেছিল। কিন্তু তাঁর দাবি, সেই আস্থার ফল আরও ভয়াবহ হয়েছে। দুর্নীতি, মহিলাদের ওপর নির্যাতন, অপরাধ প্রবণতা, কৃষকদের প্রতি অবহেলা— সব ক্ষেত্রেই তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র অভিযোগ তোলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুক্রবার দমদমের সভা থেকে একাধিক ইস্যুতে তৃণমূল ও বিরোধী জোটের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানান। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে বাঙালির অধিকার, নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং অনুপ্রবেশের মতো স্পর্শকাতর বিষয়।

মোদীর স্পষ্ট বার্তা, “বাংলা কাজ চায়, বাংলা মেয়েদের নিরাপত্তা চায়, কৃষকদের সম্মান চায়। আর অপরাধীদের জায়গা সরকারে নয়, জেলে। এই পরিবর্তন আনতে পারে একমাত্র বিজেপি।” তিনি আশ্বাস দেন, বাংলায় বিজেপি সরকার এলে শুরু হবে শিল্পের নবজাগরণ। দমদম-সহ একাধিক শিল্পাঞ্চলকে ফের কারখানার শহরে রূপান্তর, মেট্রো ও রেলের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, গঙ্গা ঘিরে ক্রুজ এবং হেরিটেজ ট্যুরিজমের উন্নয়ন, এবং তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর জোরালো ঘোষণা— “বিকশিত বাংলা মোদীর গ্যারান্টি।”

সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সাফল্য তুলে ধরে মোদী কংগ্রেসকে আক্রমণ করে বলেন, “কংগ্রেস সেনাকে বিদেশি অস্ত্রে নির্ভরশীল করে রেখেছিল, আর বিজেপি দেশীয় অস্ত্রেই পাকিস্তানকে শিক্ষা দিয়েছে।” ইছাপুরে অত্যাধুনিক রাইফেল উৎপাদনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি দাবি করেন, প্রতিরক্ষা শিল্প বাংলায় নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে এবং স্থানীয়দের জন্য কর্মসংস্থানের দরজা খুলছে।

অনুপ্রবেশ ইস্যু তাঁর ভাষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিল। মোদীর অভিযোগ, “অনুপ্রবেশকারীরা বাংলার চাকরি কেড়ে নিচ্ছে, কৃষকদের জমি দখল করছে, মা-বোনেদের উত্যক্ত করছে। বাংলার ডেমোগ্রাফিক চেহারা পাল্টে যাচ্ছে। একমাত্র বিজেপিই এই অনুপ্রবেশ রুখতে সক্ষম।” পাশাপাশি তিনি তৃণমূল, কংগ্রেস এবং ইন্ডি জোটের একাধিক দলকে তুষ্টিকরণের রাজনীতিতে লিপ্ত বলে আক্রমণ করেন।

মোদী সংসদে আনা অ্যান্টি-কোরাপশন বিলের প্রসঙ্গও তোলেন। তাঁর অভিযোগ, “ছোট কর্মচারী ৫০ ঘণ্টা জেলে থাকলেই চাকরি যায়, অথচ তৃণমূলের মন্ত্রী-নেতারা দুর্নীতির মামলায় জেলে গিয়েও পদ আঁকড়ে বসে থাকেন।” উদাহরণ হিসেবে তিনি তৃণমূলের একাধিক মন্ত্রীর জেল যাত্রা তুলে ধরেন এবং কটাক্ষ করেন, “তৃণমূল না আইন মানে, না সংবিধান।”

সংবিধানের ১৩০তম সংশোধনী বিল প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একসঙ্গে কংগ্রেস, তৃণমূল, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং বাম শিবিরকে এক হাত নেন। তাঁর মন্তব্য, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সত্যিকারের লড়াই করতে গেলে আবেগ নয়, প্রয়োজন যুক্তিসম্মত ও সাহসী সিদ্ধান্ত। সেই পথে চললে কেউই রেহাই পাবে না— দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোনও রাজনৈতিক দলেরই ছাড় থাকার কথা নয়।

কলকাতা শহরের এই জনসভা নিঃসন্দেহে বিজেপির নির্বাচনী প্রস্তুতিরই অঙ্গ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একদিকে আবেগের সুরে শহরের পরিচিত চিত্র— কুমোরটুলির প্রতিমা তৈরির দৃশ্য, বড়বাজার ও পার্ক স্ট্রিটের কেনাকাটার ব্যস্ততা— তুলে ধরে বাঙালির মন ছুঁতে চেয়েছেন, অন্যদিকে উন্নয়ন ও দুর্নীতিবিরোধী বার্তা দিয়ে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করেছেন। এই সভায় মোদীর একাধিকবার উচ্চারিত স্লোগান— “বাঁচতে চাই, বিজেপি তাই”— ইতিমধ্যেই বিজেপির নির্বাচনী প্রচারের মূল মন্ত্র হয়ে উঠছে।

বিজেপি কর্মীদের এই স্লোগান দিয়ে চাঙ্গা করতে চাইলেও বাংলার উন্নয়নের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা মিলল না মোদীর ভাষণে।