CPM Opens Party Office For Marriage : ভিনজাতে বিয়েতে বাধা? পার্টি অফিস খুলে দিচ্ছে সিপিএম

41

ডিজিটাল ডেস্ক, ২৬ অগাস্ট : তামিলনাড়ু সিপিএমের সাম্প্রতিক ঘোষণায় রাজনৈতিক মহলে তৈরি হয়েছে জোর আলোড়ন। রাজ্যে ভিনজাতে বিয়ে হলে এবং তাতে বাধা সৃষ্টি করলে, সেক্ষেত্রে সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে পার্টি—এমনই জানিয়েছে তারা। এমনকি সিপিএম ঘোষণা করেছে, ভিনজাতীয় বিবাহে কেউ সমস্যায় পড়লে, তাঁদের জন্য খুলে দেওয়া হবে পার্টি অফিসের দরজা। বিয়ে সম্পন্ন করতে প্রয়োজনে আশ্রয় দেবে সিপিএম। সামাজিক বিভাজনের বিরুদ্ধে এই অবস্থানকে ‘প্রগতিশীল পদক্ষেপ’ বলে ব্যাখ্যা করেছে দলটি (CPM Opens Party Office For Marriage)।

গত কয়েক বছরে তামিলনাড়ুতে জাতপাতের হিংসা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে শুধু তিরুনেলভেলি জেলাতেই গত এক বছরে জাতিগত বিভাজনের জেরে ঘটেছে ২৪০টি খুন। এই ক্রমবর্ধমান হানাহানির মধ্যেই জাতপাতের বিরুদ্ধে স্পষ্ট বার্তা দিতে উদ্যোগী হয়েছে সিপিএম।

কিছুদিন আগে তিরুনেলভেলিতে ভিনজাতে বিয়ে করতে চাওয়া এক দম্পতিকে সাহায্য করতে সিপিএম পার্টি অফিস খুলে দিয়েছিল। ওই পার্টি অফিসেই এক নিম্নবর্ণের পাত্র ও উচ্চবর্ণের পাত্রীর বিয়ের আয়োজন করা হয়। তবে এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে পাত্রীর পরিবার। অভিযোগ, তাঁদের রোষেই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় পুরো পার্টি অফিস।

তবু সিপিএম দমেনি। বরং আরও দৃঢ়ভাবে জানিয়েছে, জাতপাতের নামে বিভাজন মেনে নেওয়া হবে না। ভবিষ্যতেও এমন ভিনজাত বিয়েতে বাধা এলে পাশে দাঁড়াবে দল, প্রয়োজনে আরও পার্টি অফিস খুলে দেবে বলেও জানিয়েছে তারা।

আসলে গত কয়েক বছরে খানিকটা চমকপ্রদভাবে তামিলনাড়ুতে জাতপাতের হানাহানি হু হু করে বাড়ছে। তামিলনাড়ুর তিরুনেলভেলি জেলায় এক বছরে ২৪০টি খুনের ঘটনা ঘটেছে শুধুমাত্র জাতপাতের বিভাজনকে কেন্দ্র করে। কিছুদিন আগে ওই তিরুনেলভেলি জেলায় সিপিএম ভিনজাতের বিয়ের জন্য একটি পার্টি অফিস খুলে দিয়েছিল। নিম্নবর্ণের পাত্রের সঙ্গে উচ্চবর্ণের পাত্রের বিয়ে সম্পন্ন হয় ওই পার্টি অফিসেই। যদিও সেটার জন্য পাত্রীর পরিবারের রোষের মুখে পড়ে সিপিএম নেতৃত্ব। গোটা পার্টি অফিস ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে তাতে দমতে নারাজ বামেরা।

তামিলনাড়ু সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক পি সন্মুগম সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “তিরুনেলভেলিতে আমাদের পার্টি অফিস গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তাতেও আমরা দমে যাইনি। এবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, রাজ্যের প্রতিটি পার্টি অফিসেই ভিনজাতের বিয়ে সম্পন্ন করা হবে। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটাই সময়োপযোগী পদক্ষেপ।”

উল্লেখযোগ্যভাবে, পরিসংখ্যান বলছে—তামিলনাড়ুতে জাতপাত ঘিরে যেসব হত্যার ঘটনা ঘটছে, তার একটি বড় অংশই প্রেম ও বিয়ে সংক্রান্ত। সেই প্রেক্ষিতে, এই ধরনের দম্পতিদের পাশে দাঁড়িয়ে বিয়ের আয়োজনকে সিপিএম জনসংযোগের একটি কৌশল হিসেবেও ব্যবহার করতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তামিলনাড়ুতে বর্তমানে সিপিএম ও সিপিআই ডিএমকের নেতৃত্বাধীন শাসকজোটের শরিক। ইতিমধ্যেই এই দুই বামদল মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনের কাছে দাবি জানিয়েছে, ভিনজাতে বিয়েতে বাধা দেওয়ার প্রবণতা রুখতে কঠোর আইন আনা হোক। সবমিলিয়ে, আগামী বছরের নির্বাচনের আগে জাতপাতবিরোধী লড়াইকেই রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে জোরদার করতে চাইছে সিপিএম।

বাংলায় তামিলনাড়ুর মতো পদক্ষেপের সম্ভাবনা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এই প্রসঙ্গে বঙ্গ সিপিএমের তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্যে এখনও ভিনজাতের বিয়ে তেমন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়নি। তবে ভিনধর্মের বিয়েতে অনেক সময়ই আপত্তির মুখে পড়তে হয়—এমন ঘটনাও সামনে এসেছে।