ডিজিটাল ডেস্ক, ২৭ অগাস্ট : খরচের হিসাব জমা না দিলে মিলবে না সরকারি অনুদান—বুধবার এই বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। এবছরও দুর্গাপুজো কমিটিগুলির অনুদান ঘিরে মামলার রেশ পৌঁছায় আদালতে। মামলাকারীদের অভিযোগ ছিল, অনুদানের টাকা কীভাবে খরচ হচ্ছে, তার কোনও স্পষ্ট হিসাব নেই। সেই প্রেক্ষিতে বিচারপতি সুজয় পাল ও বিচারপতি স্মিতা দাস দের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, যথাযথ ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ জমা দিলে তবেই মিলবে অনুদান (High Court On Pujo Grants)।
বিচারপতি সুজয় পাল এবং বিচারপতি স্মিতা দাস দে-র ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানায়, আদালতের আগের নির্দেশ মেনে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে যেসব দুর্গাপুজো কমিটি ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ জমা দিয়েছে, কেবল তারাই সরকারি অনুদান পাবে। এছাড়া রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পুজোর ছুটি শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে সমস্ত ক্লাবের খরচের হিসাব নিয়ে একটি রিপোর্ট আদালতে পেশ করতে হবে।
বুধবার রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত আদালতে জানান, অনুদানের টাকা পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে পুজো কমিটিগুলির কাছে পৌঁছয়। এ বছর ৪১,৭৯৯টি পুজো কমিটির মধ্যে মাত্র তিনটি ক্লাব এখনও পর্যন্ত খরচের হিসাব দেয়নি, এবং তিনটিই শিলিগুড়ির। এ কথা শুনে বিচারপতি সুজয় পাল রসিকতা করে বলেন, “সংখ্যাটা এতই কম, সেটা দেখতে মাইক্রোস্কোপ লাগবে।”
প্রসঙ্গত ২০১৮ সাল থেকে রাজ্য সরকার দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে আর্থিক অনুদান দেওয়া শুরু করে। প্রথম বছর প্রতিটি কমিটিকে দেওয়া হয় ১০ হাজার টাকা করে। ২০১৯ সালে সেই অনুদানের পরিমাণ একলাফে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়। এরপর থেকে প্রতি বছরই ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এই অনুদান।
দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে সরকারি অনুদান দেওয়া নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল হাই কোর্টে। মামলাকারীর অভিযোগ ছিল, এইভাবে সরকারি অর্থের অপব্যবহার হচ্ছে। তাঁদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও শামিম আহমেদ আদালতে সওয়াল করেন, জনগণের টাকা যথাযথ খাতে ব্যয় না করে, তা পুজো কমিটিগুলিকে বিলিয়ে দিচ্ছে সরকার।
উল্টো দিকে, রাজ্য সরকার দাবি করে—এই অনুদান আসলে জনগণের স্বার্থেই ব্যয় হচ্ছে। সরকারের যুক্তি ছিল, ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ প্রকল্পের প্রচার ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য পুলিশ এই অর্থ ব্যবহার করে। এছাড়া কোভিড পরিস্থিতিতেও বেশ কিছু বিধিনিষেধ কার্যকর করতে এই অর্থ খরচ হয়েছিল।
এই বিতর্কের প্রেক্ষিতে হাই কোর্ট তখন নির্দেশ দেয়, কোন পুজো কমিটি কোথায় এবং কীভাবে এই টাকা খরচ করছে, তার নির্দিষ্ট হিসাব দিতে হবে। মামলাকারীদের আইনজীবীর অভিযোগ ছিল, বহু পুজো কমিটি সেই হিসাব জমা দেয়নি। এরপরেই আদালত রাজ্যের অবস্থান জানতে চায়। বুধবার সেই সংক্রান্ত তথ্য পেশ করে রাজ্য সরকার।
আদালত স্পষ্ট করে জানায়, যারা ইতিমধ্যেই এই হিসাব দিয়েছে, শুধু তারাই অনুদান পাওয়ার যোগ্য। যেসব কমিটি এখনও হিসাব দেয়নি বা জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের কোনও অর্থ দেওয়া যাবে না। আগের নির্দেশ অনুসারে, পুজো শেষ হওয়ার পর নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট দাখিল করা বাধ্যতামূলক বলেও জানায় আদালত।
এই মামলায় রাজ্য সরকারকে হলফনামা দিয়ে অনুদানের বিস্তারিত তথ্য পেশ করতে বলা হয়েছিল। সেই প্রেক্ষিতে এদিন রাজ্য তাদের বক্তব্য দেয়। তবে অনুদান বন্ধে কোনও নির্দেশ দেয়নি আদালত, বরং স্বচ্ছতা ও নির্দিষ্ট নিয়ম মানার উপরেই জোর দিয়েছে।