USA Tariff Effect On Trade : ট্রাম্পের ‘শুল্কবোমা’! কোন কোন ক্ষেত্রে পড়তে চলেছে প্রভাব?

66

ডিজিটাল ডেস্ক, ২৭ অগাস্ট : ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ফলে ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যে মোট শুল্কহার গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে। এর জেরে দেশীয় বাজারে গুরুতর প্রভাব পড়েছে, বিশেষ করে বিপর্যস্ত হয়েছে দেশের বস্ত্র ও পোশাক উৎপাদন শিল্প। জানা গিয়েছে, অতিরিক্ত শুল্কের চাপ সামলাতে না পেরে দেশের একাধিক বড় শহরে বহু পোশাক প্রস্তুতকারক সংস্থা উৎপাদন কার্যক্রম কার্যত বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে (USA Tariff Effect On Trade)।

ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের সভাপতি এস.সি. রালহান জানিয়েছেন, বিপুল হারে শুল্ক বৃদ্ধির ফলে তিরুপুর, নয়ডা এবং সুরাটের মতো শহরের বহু বস্ত্র উৎপাদনকারী সংস্থা উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। তাঁর মতে, অতিরিক্ত শুল্কের কারণে ভারত ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের মতো প্রতিযোগী দেশের তুলনায় রফতানির দৌড়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে।

এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছে মূল্যবান পাথর, গয়না, চিংড়ি, কার্পেট এবং আসবাবপত্র প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি। ট্রেড থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক ‘গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ’-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে আমেরিকায় ভারতের রফতানি প্রায় ৪৩ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৮৭ বিলিয়ন ডলার থেকে নেমে ৪৯.৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছতে পারে।

রিপোর্ট অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্কের ফলে চরম বিপদের মুখে পড়েছে ভারত থেকে চিংড়ি রপ্তানি। চলতি অর্থবর্ষে (২০২৪-২৫) এই খাতে যেখানে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হয়েছে, সেখানে ৫০ শতাংশ শুল্কের কারণে তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

শুধু চিংড়ি নয়, অন্যান্য খাতেও ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। পেট্রোপণ্যের উপর আরোপিত হয়েছে ৬.৯ শতাংশ শুল্ক, যেখানে গত অর্থবর্ষে এই খাতে ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৪.১ বিলিয়ন ডলার। অর্গ্যানিক কেমিক্যালের উপর ৫৪ শতাংশ শুল্ক বসেছে—এই খাতে আগের বাণিজ্য ছিল ২.৭ বিলিয়ন ডলার। কার্পেট শিল্পেও চাপানো হয়েছে ৫২.৯ শতাংশ শুল্ক। সবচেয়ে বেশি শুল্কের চাপ পোশাক রপ্তানিতে—৬০.৩ থেকে ৬৩.৯ শতাংশ পর্যন্ত। এই খাতেই গত বছর ভারত ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল মার্কিন বাজারে। সব মিলিয়ে, বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত শুল্ক ভারতের রপ্তানি অর্থনীতিকে বড়সড় ধাক্কা দিতে চলেছে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

টেক্সটাইল শিল্পে ভয়াবহ ধাক্কা—এই খাতে চাপানো হয়েছে ৫৯ শতাংশ শুল্ক। হীরে, সোনার গয়না এবং অন্যান্য মূল্যবান পাথরের রপ্তানিতেও আরোপ হয়েছে ৫২.১ শতাংশ শুল্ক। স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম ও তামার ক্ষেত্রে শুল্কের হার ৫১.৭ শতাংশ, মেশিনারি রপ্তানিতে ৫১.৩ শতাংশ। গাড়ি ও তার যন্ত্রাংশের ওপর ২৬ শতাংশ এবং আসবাবপত্রে ৫২.৩ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।

যদিও বেশিরভাগ ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক চাপানো হলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাত পেয়েছে ছাড়। ওষুধ রপ্তানিতে কোনও শুল্ক আরোপ করা হয়নি। গত অর্থবর্ষে ভারত থেকে আমেরিকায় ৯.৮ বিলিয়ন ডলারের ওষুধ রপ্তানি হয়েছিল। ছাড় দেওয়া হয়েছে ভারতে তৈরি স্মার্টফোন, বিশেষ করে আইফোনের ওপর। উল্লেখযোগ্যভাবে, আমেরিকায় বিক্রি হওয়া আইফোনের বড় অংশই ভারতে তৈরি। এই রপ্তানির পরিমাণ গত বছর দাঁড়িয়েছিল ১০.৬ বিলিয়ন ডলার।