ডিজিটাল ডেস্ক, ২৭ অগাস্ট : টানা ভারী বৃষ্টির জেরে ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যায় কার্যত বিপর্যস্ত জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি (Vaishno Devi Route Disaster)। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, প্রবল বৃষ্টিতে পাথর, কাদা এবং ধ্বংসাবশেষ জমে যাওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়ক। নেটওয়ার্ক পরিষেবাও প্রায় সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। ফাইবার অপটিক লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা। এমনকি বিএসএনএল ল্যান্ডলাইন পর্যন্ত অচল হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ফলে জনজীবন একপ্রকার স্থবির।
এদিকে দুর্গাপুজো আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ দূরে। পুজোর সময়টা অনেক বাঙালির কাছেই ছুটি কাটানোর সুবর্ণ সুযোগ। বহু মানুষ ইতিমধ্যেই বেড়ানোর পরিকল্পনা সেরে রেখেছেন—কেউ জম্মু-কাশ্মীর, কেউ হিমাচল, আবার কেউ বা উত্তরাখণ্ডে যাওয়ার টিকিট বুক করেছেন মাসখানেক আগেই। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির জেরে বহু পর্যটকই সেই ভ্রমণের পরিকল্পনা বাতিল বা পরিবর্তনের কথা ভাবছেন।
পুজোর আগে উত্তর ভারত সফর কার্যত অনিশ্চয়তার মুখে। ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলির মতে, দুর্গাপুজোর ছুটিতে যে সব পর্যটন প্যাকেজ বুক করা হয়েছিল, তার অনেকগুলোই এখন বাতিল হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে এজেন্সিগুলিই প্রোগ্রাম বাতিল করছে, আবার অনেক পর্যটক নিজেরাই নিরাপত্তা ও অনিশ্চয়তার কথা ভেবে ভ্রমণের পরিকল্পনা বাতিল করছেন।
কারণ, পাঞ্জাব থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত একাধিক অঞ্চল বৃষ্টির জেরে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। রাস্তাঘাট ধসে গিয়েছে, সেতু ভেঙে পড়েছে, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত—সব মিলিয়ে পরিষেবা স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে বলেই মনে করা হচ্ছে। স্থানীয় জনজীবন যদি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে পর্যটকদের পরিষেবাও ব্যাহত হবে—এটাই বড় চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এর পাশাপাশি আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আবহাওয়ার তেমন উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অন্তত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা থাকছে। অথচ ২৮ সেপ্টেম্বর থেকেই শুরু দুর্গাপুজো। ফলে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সময় খুবই সীমিত।
জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহও জানিয়েছেন পরিস্থিতির ভয়াবহতা। তাঁর কথায়, “যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। কিছুটা ডেটা জিও-তে পাওয়া গেলেও, নেই ওয়াইফাই, নেই ব্রাউজিং, বন্ধ সোশ্যাল মিডিয়াও। মনে হচ্ছে যেন ২০১৪ কিংবা ২০১৯ সালের সেই ভয়ংকর সময়েই ফিরে গেছি।”
জম্মু অঞ্চলে টানা বৃষ্টিপাত ও ভূমিধস ভয়াবহ বিপর্যয়ের চেহারা নিয়েছে। একাধিক সেতু ভেঙে পড়েছে, বহু জায়গায় সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। রেল চলাচলও ভীষণভাবে প্রভাবিত—কাটরা, উদমপুর ও জম্মু থেকে অন্তত ১৮টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি, বৈষ্ণো দেবী যাত্রা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আঢকুয়ারি এলাকায় তীর্থপথের মাঝামাঝি অংশে ভয়াবহ ভূমিধসে অন্তত ৩২ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ২০ জনেরও বেশি। ইন্দ্রপ্রস্থ ভোজনালয়ার কাছে প্রায় ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই পথে ধস নামার ফলে অনেকে এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে রয়েছেন বলে আশঙ্কা। এনডিআরএফ, সেনা ও রাজ্য প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে উদ্ধারকাজ চলছে।
বুধবার সকালে গাজিয়াবাদের হিন্দন এয়ারফোর্স স্টেশন থেকে এনডিআরএফের জরুরি ত্রাণসামগ্রী নিয়ে একটি সি-১৩০ বিমান জম্মু পৌঁছেছে। সেই সঙ্গে চিনুক ও এমআই-১৭ ভি৫ হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে জম্মু, উধমপুর, শ্রীনগর ও পাঠানকোটে উদ্ধার ও সরবরাহ কাজে ব্যবহারের জন্য।
দোদা জেলাতেও প্রবল বর্ষণে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে এবং বহু ঘরবাড়ি জলের তোড়ে ভেসে গেছে। চেনাব নদীর জল বিপজ্জনকভাবে বেড়ে ওঠায় দোদাকে কিস্তওয়ার-বাটোটি জাতীয় সড়কের সঙ্গে যুক্ত করা দোদা সেতুও চরম ঝুঁকির মুখে।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিন নতুন করে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে এবং ভূমিধসের আশঙ্কাও প্রবল। নিম্নাঞ্চল থেকে বহু মানুষকে ইতিমধ্যেই নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং পরিস্থিতি সামলাতে জেলা প্রশাসনের তরফে রাতের চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
হিমালয় অঞ্চলের পরিবেশবিদরা সতর্ক করেছেন, অপরিকল্পিত নির্মাণ, অতিরিক্ত পর্যটন চাপ এবং পরিবেশবিধ্বংসী উন্নয়ন প্রকল্পই এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগকে আরও ঘনীভূত করছে। তাদের মতে, প্রকৃতিকে উপেক্ষা করে গড়ে ওঠা পরিকাঠামোই আজকের এই বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ।