Roof Top Restaurant Reopening : আসছে পুজো,খুলছে শহরের রুফটপ রেস্তরাঁ?

67

ডিজিটাল ডেস্ক, ২৭ অগাস্ট : পুজোর আগে শহরের রুফটপ রেস্তরাঁগুলোতে আবারও প্রাণ ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে কলকাতা পুর প্রশাসন (Roof Top Restaurant Reopening)। তবে এবার কোনও ঢিলেমি নয়—ছাদে খাওয়াদাওয়ার অনুমতি মিলবে একগুচ্ছ কঠোর শর্ত মানার পরেই।

স্টিফেন কোর্ট কাণ্ডের মতো ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের স্মৃতি এখনও ভুলতে পারেনি শহরবাসী। সেই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখেই পুর প্রশাসনের কড়া বার্তা—‘ছাড়পত্র চাই? আগে অগ্নি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।’

পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম সাফ জানিয়েছেন, “নতুন কোনও রেস্তরাঁকে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। তবে যেগুলি আগেই ছিল, সেগুলি পুজোর আগেই চালু করা যাবে। কিন্তু রুফটপ চালু করতে হলে একাধিক নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে।”

পুরসভার নির্দেশ অনুযায়ী, রুফটপের কমপক্ষে ৫০ শতাংশ এলাকা খালি রাখতে হবে। বিশেষ করে, যেদিকে হাইড্রোলিক ল্যাডার প্রবেশ করতে পারে, সেই দিকটা যেন মুক্ত থাকে, যাতে জরুরি অবস্থায় দ্রুত উদ্ধারকাজ চালানো যায়। পাশাপাশি, প্রতিটি রেস্তরাঁয় রাখতে হবে উপযুক্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও অন্যান্য সুরক্ষা সরঞ্জাম।

সবমিলিয়ে, উৎসবের আগে শহরের রুফটপ রেস্তরাঁয় জমজমাট ভিড়ের সুযোগ থাকলেও, নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনওরকম আপস করতে নারাজ পুর প্রশাসন।

নতুন করে খুলতে চলা রুফটপ রেস্তরাঁগুলির জন্য একনজরে থাকল পুর প্রশাসনের নয়া শর্তাবলি ও নির্দেশিকা:

ছাদের বসার জায়গার অন্তত ৫০ শতাংশ খালি রাখতে হবে।

রাস্তার দিকে রেসকিউ স্পেস বাধ্যতামূলক।

থাকতে হবে চলমান ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা— যেমন জলের পাইপলাইন, ফায়ার এক্সটিংগুইশার, অ্যালার্ম সিস্টেম ইত্যাদি।

সিঁড়ি খোলা রাখতে হবে— কোনও অবস্থাতেই তা বন্ধ রাখা যাবে না।

কেন এই কড়াকড়ি?

গত কয়েক বছরে শহরে একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে।

২০১০ সালের স্টিফেন কোর্ট দুর্ঘটনায় ৪০ জনের মৃত্যু হয়। তদন্তে উঠে আসে— বিকল্প সিঁড়ি থাকলেও তা বন্ধ করে রাখার কারণে বহু প্রাণ হারাতে হয়।

২০২4 সালের এপ্রিল মাসে বড়বাজারের মেছুয়ার হোটেলে আগুনে ১৪ জনের মৃত্যু হয়। প্রশ্ন ওঠে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার ঘাটতি নিয়ে।

তার পরেই কলকাতা হাই কোর্টে মামলা হয় এবং পুর প্রশাসন জানায়, শহরে নতুন কোনও রুফটপ রেস্তরাঁর অনুমতি আর দেওয়া হবে না।

প্রশাসনের পদক্ষেপ ও মেয়রের বার্তা:

ঘটনার পরে রাজ্য সরকার একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতেই আবার খুলছে পুরনো রুফটপ রেস্তরাঁ, তবে কড়া শর্তে।

নতুন করে রেস্তরাঁ খোলার আগে দমকল বিভাগ থেকে অডিট করাতে হবে।

মেয়র ফিরহাদ হাকিম স্পষ্ট জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে আইন আনতে চলেছে পুরসভা—যেখানে ছাদকে কমন এরিয়া হিসেবে রাখা বাধ্যতামূলক হবে।

ফায়ার, পুলিশ ও পুরসভা তিন মাস অন্তর সরেজমিনে পরিদর্শন করবে। নিয়ম না মানলে লাইসেন্স বাতিল করা হবে।

মেয়রের কড়া বার্তা:

“মানুষের প্রাণের বিনিময়ে ব্যবসা হতে পারে না। নিয়ম মানতে হবে, তবেই ছাড়পত্র মিলবে।”

ওয়াকিবহাল মহলের মতে, স্টিফেন কোর্ট থেকে মেছুয়া—দুই দশকের দুটি মর্মান্তিক ট্র্যাজেডিই প্রশাসনের মধ্যে এই সতর্কতার ভিত্তি গড়ে দিয়েছে। এবার পুজোয় শহরের ছাদে খাওয়া-দাওয়ার আনন্দ থাকলেও, নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনওরকম ছাড় নয়—এটাই পুরসভার স্পষ্ট বার্তা।