Abhishek Banerjee Challenged Amit Shah : মন্ত্রীদের অপসারণের বিল নিয়ে ‘কাপুরুষ’ শাহকে চ্যালেঞ্জ অভিষেকের!

50

ডিজিটাল ডেস্ক, ২০ অগাস্ট : সংবিধান সংশোধনী ও জনপ্রতিনিধি গ্রেফতারি বিল নিয়ে কেন্দ্রকে কড়া আক্রমণ করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee Challenged Amit Shah)। এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, এসআইআর ইস্যু থেকে নজর ঘোরাতেই এই বিল আনা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে আক্রমণ করে অভিষেক বলেন, “এই সরকার মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও উদ্বেগ প্রকাশ করছে না। তাদের একমাত্র লক্ষ্য, যেকোনও উপায়ে ক্ষমতা নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করে রাখা।” তিনি আরও দাবি করেন, “এই বিল পাস হলে কেউ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে গ্রেফতার হলে, আত্মপক্ষ সমর্থনের ন্যূনতম সুযোগটুকুও আর তার হাতে থাকবে না। এটি গণতন্ত্রের পরিপন্থী এবং বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত তৈরি করবে।”

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের প্রস্তাবিত গ্রেপ্তারি বিল নিয়ে কটাক্ষের সুরে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। তিনি বলেন, “ওরা বলছে ৩০ দিন। আমি শাহকে বলছি, ৩০ নয়, ১৫ দিন দিন। তৃণমূলও বিলকে সমর্থন করবে। কিন্তু শর্ত একটাই— যাকে অপরাধী সন্দেহে জেলে রাখা হবে, তার বিরুদ্ধে যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অপরাধ প্রমাণ না হয়, তাহলে যিনি তাকে জেলে পাঠিয়েছেন, সেই আধিকারিককে দ্বিগুণ সময় জেলে থাকতে হবে।”

এরপর খানিক থেমে, শ্লেষের সুরে অভিষেক বলেন, “খুব বলেন না, ৫৬ ইঞ্চির ছাতি! সাহস আছে? তাহলে আমার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে দেখান।” তিনি আরও বলেন, “আসলে ওরা গণতন্ত্রকে ভয় পায়। তাই বিরোধীদের দমন করতেই এই ‘ডেমোক্রেসি-বিরোধী’ বিল আনছে।”

বিজেপিকে কটাক্ষ করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বিরোধী দলনেত্রী ছিলেন, তখনও টালির চালে থাকতেন— আর আজও সেখানেই আছেন। তাঁর মতো নেত্রীর কাছ থেকেই নৈতিকতার পাঠ শেখা যায়। কিন্তু ৫০০ কোটির পার্টি অফিস বানানো বিজেপি আমাদের নৈতিকতার পাঠ শেখাবে? এটা কি কোনও কথা!”

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, কেন্দ্রের প্রস্তাবিত বিলের মূল উদ্দেশ্য দুর্নীতির অভিযোগে বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের ফাঁসিয়ে তাঁদের পদচ্যুত করা। তাঁর কথায়, এই বিলকে হাতিয়ার করে বিরোধী নেতৃত্বকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতেই তৎপর হয়েছে বিজেপি।

এই প্রসঙ্গে তিনি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ শিসোদিয়া এবং তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে “মিথ্যে মামলায়” দীর্ঘদিন ধরে জেলে রাখার উদাহরণ তুলে ধরেন।

সুর চড়িয়ে অভিষেক বলেন, “ইডি এখনও পর্যন্ত ৫,৮৯২টি মামলার তদন্ত করেছে, যার মধ্যে মাত্র ৮টির নিষ্পত্তি হয়েছে। সফলতা মাত্র ০.৩ শতাংশ। তাহলে প্রশ্ন ওঠে— আসল উদ্দেশ্য কী? দুর্নীতি রোখা, না বিরোধীদের ধ্বংস করা?”

এরপর তিনি নিজের বক্তব্যের পক্ষে পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, “বিজেপির ২৮ জন মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও মামলা রয়েছে। তার মধ্যে ১৯ জনের বিরুদ্ধে খুন, নারী নির্যাতনের মতো গুরুতর অভিযোগ আছে। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে তো কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শুভেন্দু অধিকারী বা হিমন্ত বিশ্ব শর্মার বিরুদ্ধেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাহলে কি এই বিল কেবল বিরোধীদের জন্য? আমাদের জন্য এক আইন, আর বিজেপির জন্য আরেক?”

প্রসঙ্গত বুধবার লোকসভায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ— কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল প্রশাসন (সংশোধনী) বিল ২০২৫, সংবিধান (১৩০তম সংশোধনী) বিল ২০২৫ এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্বিন্যাস (সংশোধনী) বিল ২০২৫। এই বিলগুলির মূল উদ্দেশ্য সংবিধানে পরিবর্তন এনে গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত কোনও প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যেন তাঁদের সাংবিধানিক পদকে রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহার না করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।

প্রস্তাবিত বিল অনুযায়ী, যদি কোনও প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে ৩০ দিনের বেশি সময় কারাবন্দি থাকেন, তাহলে তাঁকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মন্ত্রিত্ব থেকে অপসারিত করা হবে। সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারায় পরিবর্তন এনে এই নিয়ম কার্যকর করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

এরই পাশাপাশি বিভিন্ন ইস্যুতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, “এই সরকার মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও ভাবনাই করে না। কৃষকদের স্বার্থ তাদের এজেন্ডায় নেই। সীমান্ত সমস্যার দিকেও নজর দেয় না। এমনকি জঙ্গি হামলার মোকাবিলা নিয়ে কোনও প্রস্তুতিও নেই। আইনকে তাচ্ছিল্য করে কেবল ক্ষমতার গদিতে টিকে থাকার চেষ্টাই এদের একমাত্র উদ্দেশ্য।”