ডিজিটাল ডেস্ক, ৫ অগাস্ট : চলতি মাসেই এসআইআর (বিশেষ নিবিড় সংশোধন) প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে রাজ্যগুলিতে— এই মর্মে প্রতিটি রাজ্য সরকারকে চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এরই মধ্যে অসমে এনআরসি-র নামে বাংলার বহু বাসিন্দাকে নোটিস পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘বাংলাদেশি’ বলে অপমান ও নির্যাতনের ঘটনা সামনে আসছে। এই প্রেক্ষিতে দলের সাংসদ, বিধায়ক ও জেলা স্তরের নেতাদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee Virtual Meet)। বৈঠকে তিনি এই ইস্যুগুলিকে সামনে রেখে বিজেপি-বিরোধিতায় আরও জোর দেওয়ার নির্দেশ দেন। অভিষেক বলেন, “বিজেপি নেতাদের দেখলে জয় বাংলা বলুন।”
২০২৬-এর রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে দলীয় ঐক্যের বার্তাও দেন তিনি। নেতাদের সতর্ক করে বলেন, “আমি-তুমির রাজনীতি চলবে না। এখন সময় একজোট হয়ে লড়াই করার।”
‘জয় বাংলা’ স্লোগান নিয়ে আপত্তি রয়েছে বিজেপি নেতাদের। সেই স্লোগানকেই এবার বিজেপি-বিরোধিতার হাতিয়ার করতে বললেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের ভার্চুয়াল বৈঠকে তাঁর স্পষ্ট বার্তা, “বিজেপি নেতাদের দেখলে ‘জয় বাংলা’ বলুন।”
নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। অভিযোগ করেন, কমিশন কার্যত বিজেপির হয়ে কাজ করছে। বিএলও (বুথ লেভেল অফিসার)-দের ভূমিকা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন অভিষেক। সংগঠনকে আরও মজবুত করতে রাজ্যের প্রতিটি বুথে ছোট ছোট সভা করে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছনোর নির্দেশ দেন তিনি। পাশাপাশি দলের অন্দরে বিভাজন এড়াতে কড়া বার্তা দিয়ে বলেন, “দলের মধ্যে রাজনীতি নয়। সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই চলবেন।”
রাজ্যের পাওনা অর্থ কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আটকে রেখেছে— এই অভিযোগ তুলে ফের কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, রাজ্যের প্রাপ্য অর্থ না দিলেও, রাজ্য সরকার নিজেদের অর্থেই মানুষের জন্য উন্নয়নমূলক কাজ করে চলেছে।
এসআইআর (SIR) ইস্যু এবং বাংলা ভাষার উপর বিজেপির কথিত আক্রমণ নিয়েও দলের কর্মীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানান অভিষেক। নির্দেশ দেন, এ ধরনের ইস্যুতে জোরালো প্রচারে নামতে হবে, গর্জে উঠতে হবে।
গতকাল সোমবার তিনি কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার জেলার তৃণমূল বিধায়ক ও নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। সেখানে উত্তরের জেলাগুলিতে ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে ভালো ফল করার লক্ষ্যে সাংগঠনিক প্রস্তুতির দিকনির্দেশ দেন।
আজ, মঙ্গলবার দলের সাংসদ, বিধায়ক, কাউন্সিলর এবং অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে ভারচুয়াল বৈঠক করেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। প্রায় ৯ হাজার নেতৃত্ব এই বৈঠকে যোগ দেন। সেখানে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করেন অভিষেক এবং সংগঠনকে আরও মজবুত করার দিশাও দেন। দলীয় নেতাদের উদ্দেশে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপি নেতারা দাবি করছে, ১ কোটি মানুষের নাম বাদ যাবে ভোটার তালিকা থেকে। আমি স্পষ্ট বলে দিচ্ছি, একজনের নাম বাদ দিয়ে দেখাক ওরা। তারপর যারা নিজেদের বড় বিজেপি নেতা ভাবে, তারা বাংলায় পা রাখার সাহস দেখাক। এই বিষয়টিকে আমাদের চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে।”
বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের নেতৃত্বকে এই বিষয়ে সতর্কভাবে নজর দিতে বলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, “কে নাগরিক, সেটা ঠিক করবে বিজেপি?” এরপর উত্তরবঙ্গবাসীর উদ্দেশে বলেন, “আপনারা তো বিজেপিকে সমর্থন করেছিলেন। এখন দেখুন, আমাদের সরকার আপনাদের কিছু দিচ্ছে, আর বিজেপি তা কেড়ে নিচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “অঞ্চল সভাপতিরা অন্তত ৩০-৪০ জন করে মানুষ নিয়ে সভা করুন। বুথে বুথে যান, মানুষকে বুঝিয়ে বলুন। বিজেপিকে জনগণের সামনে জবাবদিহি করতে বাধ্য করতে হবে।”
বাংলা ভাষার প্রসঙ্গ টেনে তিনি দাবি করেন, “বিজেপি এখন বাংলা ভাষার বিরোধী হয়ে উঠছে। দিল্লি পুলিশ বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি’ বলেছে, আর বিজেপি নেতৃত্ব তাতেও সমর্থন জানাচ্ছে।” বাংলার মানুষের মধ্যে আরও বেশি সংহতি তৈরি করে বিজেপির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার ডাক দিয়েছেন অভিষেক।
কেন্দ্র এখনও পর্যন্ত বাংলার প্রাপ্য ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা আটকে রেখেছে। তা সত্ত্বেও রাজ্যে উন্নয়ন থেমে নেই। রাজ্য সরকার নিজেদের অর্থে মানুষের স্বার্থে কাজ করে চলেছে। ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ প্রকল্পকে মানুষের উন্নয়নের লক্ষ্যে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, “লোকসভা নির্বাচনে আমরা বিজেপিকে ১৮ থেকে ১২-তে নামিয়ে আনতে পেরেছি। তাহলে এবার বিধানসভা ভোটে তাদের ৭৭ থেকে ৪০-এর নিচে নামিয়ে আনতে পারব না কেন?” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ‘সিঙ্গেল ইঞ্জিন’ সরকার যে কতটা শক্তিশালী, তা-ও জোর দিয়ে বলেন অভিষেক।