ডিজিটাল ডেস্ক, ৮ অগাস্ট : বাংলায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) কার্যক্রম চালু হতে দেওয়া হবে না—সাফ জানিয়ে দিল তৃণমূল। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যদি একজনেরও নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যায়, তবে লক্ষ লক্ষ বাঙালিকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দফতর ঘেরাও করা হবে (Abhishek On ECI)।
কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্টভাবে জানান, “বাংলার একটি নামও যদি ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে, তাহলে লক্ষ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন কমিশনের অফিস ঘেরাও করব।”
শুক্রবার এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “২০১৪ সালে বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাংলাকে পরীক্ষাগার বানিয়ে বিভিন্ন টেস্ট ও ট্রায়াল চালিয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে। এবার ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। সেই লক্ষ্যেই আনা হয়েছে SIR— যাতে গরিব, প্রান্তিক মানুষদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যায়।” এই ইস্যুতে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। তাঁর কটাক্ষ, “এই SIR আসলে ‘স্যার’— বিজেপি নেতাদের নির্দেশে চলা এক প্রক্রিয়া। কমিশনের একাংশ সেই নির্দেশই পালন করছে। এই চক্রান্ত আমরা কোনওভাবেই মেনে নেব না।”
বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের আগে জাতীয় নির্বাচন কমিশন চালু করেছিল এসআইআর প্রক্রিয়া। এখন জল্পনা ছড়িয়েছে, বাংলাতেও সেই ‘বিশেষ সংশোধন’ চালু করা হতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে বাঙালি পরিচিতি ও অধিকার রক্ষায় সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এসআইআর নিয়ে প্রতিবাদের সুর আরও চড়িয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও লোকসভায় দলনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাহুল গান্ধী এবং অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে এই ইস্যুতে বৈঠক সেরে ফেরার পর তিনি সাফ হুঁশিয়ারি দেন— বাংলায় এই প্রক্রিয়া চালু করতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে লক্ষ মানুষকে নিয়ে পথে নামবে তৃণমূল।
প্রসঙ্গত, এসআইআর নিয়ে এরই মধ্যে ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তাঁর অভিযোগ, বিজেপি ও নির্বাচন কমিশন মিলে পরিকল্পিতভাবে ভোট চুরির চেষ্টা করছে। একই সুরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কেন্দ্র সরকার কিছু লুকোতে চাইছে, তাই এসআইআর নিয়ে আলোচনায় যেতে চাইছে না।”
তিনি জানান, আগামী ১১ আগস্ট এসআইআর ইস্যুতে বিরোধী দলগুলি যৌথভাবে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করবে। সেখানেই পরবর্তী আন্দোলনের রূপরেখা নির্ধারিত হবে। তবে শুধু এসআইআর নয়, কেন্দ্রীয় সরকারকে একাধিক বিষয়ে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন অভিষেক। ১০০ দিনের কাজ, জল জীবন মিশন এবং রাজ্যে টিকাকরণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলি নিয়েও ক্ষোভ উগরে দেন তিনি।
ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ বলেন, “কোর্ট স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে যে ১ অগাস্ট থেকে ১০০ দিনের টাকা দেওয়া শুরু করতে হবে। আজ ৮ অগাস্ট, কিন্তু এখনও কেন্দ্র এক টাকাও দেয়নি। জল জীবন মিশনের আড়াই হাজার কোটি টাকাও বকেয়া পড়ে রয়েছে।”
টিকাকরণ আচমকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে অভিষেক জানান, “আমি স্বাস্থ্য দফতরের মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলব। কেন এমন হল, তা জানতে চাইব।”
বাংলায় বাংলা ভাষায় কথা বললেই বাংলাদেশি তকমা দেওয়ার চেষ্টা চলছে— এমন অভিযোগও তোলেন তিনি। বলেন, “যেভাবে কেউ বাংলায় কথা বললেই তাঁকে বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। যারা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে তৃণমূলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, আমরা তাদের পাশেও আছি। আমাদের মূল লড়াই বাংলা ও বাঙালির স্বার্থ রক্ষার জন্য। যারা বাংলার পাশে থাকবে, আমরা তাদের সঙ্গেই থাকব।”