Anubrata Mondal New Apology Letter : ক্ষমার চিঠির বয়ান বদলে বাধ্য হলেন অনুব্রত!

13

ডিজিটাল ডেস্ক, ৩০ মে : দলের নির্দেশে লিখিতভাবে পুলিশের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন বীরভূমের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal New Apology Letter)। এরপর ভিডিওবার্তায়ও পুলিশের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি। তিনি স্বীকার করেছেন যে, ভাইরাল হওয়া অডিয়ো ক্লিপে ‘‘অনুব্রত মণ্ডল বলছি’’ বলে যে কণ্ঠ শোনা গেছে, সেটি তাঁরই। অনুব্রত দাবি করেছেন, তিনি পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বরাবরই সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন এবং সাধারণত পুলিশ সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করেন না। তবে ‘সেদিন’ একটি বিশেষ পরিস্থিতির কারণে ব্যতিক্রম ঘটেছিল।

দলের নির্দেশে প্রথম চিঠি পাঠানোর প্রায় ৫০ মিনিট পর অনুব্রত মণ্ডল দ্বিতীয় চিঠি পাঠান, যেখানে তাঁর বক্তব্য আরও সংক্ষিপ্ত। তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে, দলের শীর্ষ নেতৃত্বই তাঁকে বয়ান বদলে ফের চিঠি পাঠানোর পরামর্শ দেন।
তবে দুপুরের পর পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। দলের পক্ষ থেকে তাঁকে চার ঘণ্টার মধ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলা হয়। মিনিট চল্লিশের মধ্যে তিনি লিখিতভাবে ক্ষমা চেয়ে নেন। কিছুক্ষণ পর ভিডিওবার্তাতেও পুলিশের কাছে ক্ষমা চান তিনি।
বীরভূমের তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সবাই ‘দিদি’ (মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)-কে ভালোবাসেন। আমি সব সময় পুলিশের পাশে দাঁড়াই, তাঁদের সাহায্য করি। পুলিশ বিপদে পড়লে আমি তাদের পাশে থাকি। পুলিশকে গাল দেওয়ার কথা কখনও ভাবিনি। কেউ যদি পুলিশকে গালাগালি দেয়, আমি তাকে অপমান করি। এটা আমার স্বভাব।’’
এরপর হুমকি-অডিয়ো প্রসঙ্গে তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘‘আমি রাতে অনেক ওষুধ খাই, এখন রাত ১০টায় ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুমের ওষুধ নিতে হয় আমাকে। সে দিন (দু’দিন আগে) নুরুল নামে আমাদের এক কর্মীর ছেলে জানায়, মারধর করে তাঁর হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এতে আমার মন খারাপ হয়ে যায়। আমি আইসি-কে ফোন করে বলেছিলাম, ‘আপনি যান, ছেলেটাকে ছাড়িয়ে আনুন।’ তখন উনি আমাকে অন্যভাবে উত্তর দেন, যা আমি এখন বলতে চাই না। তখন আমি নিজের রাগ সামলাতে পারিনি। আমি যে কথা বলেছি, তার জন্য আমি দুঃখিত।’

অন্য দিকে, ৩টা ১০ মিনিটে পাঠানো প্রথম চিঠিতে অনুব্রত মণ্ডল লিখেছিলেন, ‘‘সাম্প্রতিক ঘটনায় আমি দুঃখিত। দিদির পুলিশের কাছে একবার কেন, শতবার ক্ষমা চাইতে পারি। আমি নানা রকম ওষুধ গ্রহণ করি, আর দিদির পুলিশের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ তুললে আমার মাথা গরম হয়ে যায়। সত্যিই আমি দুঃখিত।’’ ৫০ মিনিট পর তিনি বয়ান পরিবর্তন করে দ্বিতীয় চিঠি লেখেন, যা ৪টের সময় তৃণমূলের সভাপতি সুব্রত বক্সীকে উদ্দেশ্য করে পাঠানো হয়। সংক্ষিপ্ত এই চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘‘আশা করি তুমি ভালো আছো। আমার প্রণাম নিও। সাম্প্রতিক ঘটনার জন্য আমি সকল স্তরের কাছে নিঃশর্তভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।’’ তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে, প্রথম চিঠি পাঠানোর পর দল থেকে অনুব্রতকে জানানো হয়েছিল যে, তাঁর বিস্তারিত বক্তব্য দলের প্রয়োজন নেই। তাঁকে সংক্ষিপ্তভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। সেই পরামর্শ মেনে নিয়ে তিনি দ্বিতীয় চিঠিটি লেখেন।

পুলিশ সূত্রের খবর অনুযায়ী, বোলপুর থানার আইসি-কে হুমকি দেওয়া ও অশ্লীল ভাষা ব্যবহারের অভিযোগে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস)-র ২২৪ (সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও কর্তব্যরত কর্মীকে হুমকি), ১৩২ (সরকারি কর্মচারীকে হেনস্থা), ৭৫ (শ্লীলতাহানি ও হেনস্থা) এবং ৩৫১ (হুমকি) ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। বিকেলে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে পুলিশ তাঁকে নোটিস প্রদান করে। জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ জানিয়েছেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করা হবে এবং প্রয়োজনীয় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Comments are closed.