ডিজিটাল ডেস্ক, ২১ জুন : ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপে স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকার সংক্রান্ত বিল হাউস অফ কমন্সে পাস হয়েছে (Assisted Dying Bill Pass Britain)। ৩১৪-২৯১ ভোটে এই বিতর্কিত বিলটি সংসদীয় বাধা টপকে নতুন এক যুগের সূচনা করল যুক্তরাজ্যে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ক্যাথলিক ধর্মীয় অনুশাসনে আত্মহত্যা বা স্বেচ্ছামৃত্যুকে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এবার সেই কঠোর চিন্তার শৃঙ্খল ভেঙে, দীর্ঘদিন কোমায় থাকা, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ও অবনত স্বাস্থ্যের কারণে জীবনের কষ্টসাধ্য পরিণতির মুখোমুখি মানুষজনকে স্বেচ্ছামৃত্যুর সুযোগ দেওয়ার দিকেই এগোচ্ছে দেশটি।
বিলটি হাউস অফ কমন্সে বহু বছরের টালবাহানার পর অবশেষে পাস হল। এখন তা উচ্চকক্ষ হাউস অফ লর্ডসে যাবে, যেখানে বিস্তারিত পর্যালোচনার মুখোমুখি হবে প্রস্তাবটি। অনুমোদন পেতে আরও কিছু সময় লাগতে পারে বলে ধারণা।
বিলটি পার্লামেন্টে পাস হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টারে আবেগে ভেসে ওঠেন বহু প্রবীণ নাগরিক। হাতে প্ল্যাকার্ড ও গায়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর সমর্থনে লেখা টিশার্ট পরে তাঁরা পার্লামেন্টের সামনে জড়ো হন। এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে অনেকেই জানান, এটি ব্রিটেনের সামাজিক মানসিকতায় এক গভীর এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের সূচনা করবে।
কী আছে এই বিলে?
‘টার্মিনালি ইল অ্যাডাল্টস (এন্ড অফ লাইফ)’ নামে পাস হওয়া বিলটির মূল প্রস্তাব হচ্ছে—জীবনযন্ত্রণা যখন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখন মানসিকভাবে সচেতন ও সুস্থিত প্রাপ্তবয়স্করা চিকিৎসা সহায়তায় স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নিতে পারবেন। যাঁরা দুরারোগ্য অসুস্থতায় ভুগছেন এবং যাঁদের ছয় মাস বা তার কম সময় জীবিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, এই সুযোগ তাঁদের জন্য প্রযোজ্য। তবে এই মৃত্যুর সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগে নয়, বরং চিকিৎসা পরিকাঠামোর মধ্যে থেকেই নেওয়া যাবে। শুধুমাত্র ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের নাগরিকরাই এই অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদনকারীদের জন্য নতুন প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, অন্তত দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের স্বাক্ষরযুক্ত অনুমতি ও একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সম্মতি নিতে হবে। লেবার পার্টির এমপি কিম লিডবিটার এই বিল পেশ করে বলেন, এটি কার্যকর হলে জীবনসন্ধিক্ষণে থাকা অসুস্থ ব্যক্তিরা সহানুভূতির সঙ্গে আত্মসম্মানের সঙ্গে বিদায়ের পথ বেছে নিতে পারবেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, একই বিল এক দশক আগে সংসদে তোলা হলেও তখন তা পাশ হয়নি। তবে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশের ৭৩ শতাংশ মানুষ এখন এই প্রস্তাবের পক্ষে রয়েছেন।
এই বিলের বিরোধীতা করছেন কারা?
যদিও বিলটির পক্ষে একটি বড় অংশের সমর্থন রয়েছে, তবুও শুক্রবার সংসদের বাইরে আইনের বিরোধিতায় পাল্টা বিক্ষোভ হয়। একদিকে সমর্থকরা ‘My Life, My Death’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে উপস্থিত হন, অন্যদিকে বিরোধীরা ‘Kill the Bill, Not the Ill’ স্লোগানে প্রতিবাদ জানায়।
বিলের বিরোধীরা জোর দিয়ে বলছেন, “শুশ্রুষা দাও, হত্যার অধিকার নয়”—তাঁদের মতে, এই আইন কার্যকর হলে মানবিক চিকিৎসা ও যত্নের জায়গায় মৃত্যুর অনুমোদন দেওয়া হবে, যা অনৈতিক। তাঁদের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, “বিলকে খতম করো, অসুস্থকে নয়”। ৫২ বছর বয়সি চিকিৎসক এলিজাবেথ বার্ডেন সতর্ক করে বলেন, এই বিল পাস হলে স্বেচ্ছামৃত্যুর দাবির স্রোত বইতে শুরু করবে। তাঁর মতে, এটি একটি “ঢালু জমির” মতো পরিস্থিতি, যেখানে একবার শুরু হলে পিছিয়ে আসার আর উপায় থাকবে না। উল্লেখ্য, এর আগেই অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঙ্গরাজ্যে এ ধরনের আইন পাস হয়েছে।