ডিজিটাল ডেস্ক ১৪ই জুলাইঃ এতদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার হাতে ছিল এই বোমা। সম্প্রতি ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধের সময়ে ইরানের ফোর্দো পরমাণু পরিকাঠামোয় ‘বাঙ্কার বাস্টার’ দিয়ে আঘাত হেনেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ইরান ও ইজ়রায়েল সংঘর্ষের আবহে ‘বাঙ্কার বাস্টার’ শব্দটার সঙ্গে পরিচয় হয়েছে বাঙালির। এটি এমন একটি বোমা যা মাটির অনেক নীচে থাকা শত্রুপক্ষের বাঙ্কার ভেদ করে ভিতরে আঘাত করতে সক্ষম। সেই ‘বাঙ্কার বাস্টার’–এর সঙ্গে কি এ বার যুক্ত হতে চলেছে কলকাতার নামও! সেরকমই সম্ভাবনার কথা জানা গিয়েছে নয়াদিল্লি থেকে। এখনও পর্যন্ত এই বাঙ্কার বাস্টার ব্যবহার করেছে আমেরিকা ও ইজ়রায়েল। ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে বাঙ্কার বাস্টার দিয়ে আক্রমণ হেনেছে আমেরিকা। বাঙ্কার বাস্টার ব্যবহার করেই হিজবুল্লা-র প্রধান হাসান নাসারাল্লাকে খতম করে ইজ়রায়েল। অন্য অনেক দেশের হাতেই নাকি রয়েছে এই অস্ত্র(Bankar Bluster)।
সূত্রের খবর,শহর কলকাতার একটি সংস্থাও আধুনিক উপায়ে শক্তিশালী বাঙ্কার বাস্টার তৈরির যন্ত্র বানাতে ব্যস্ত! মাস দুয়েকের মধ্যে তা প্রস্তুতও হয়ে যাবে বলে সূত্রের দাবি। তবে, সেখানে তৈরি বাঙ্কার বাস্টার ভারত ব্যবহার করবে, নাকি বিদেশে পাঠানো হবে,তা সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য মেলেনি। এই প্রসঙ্গেই উঠে আসছে ইজ়রায়েলের কথা। কারণ,গত বছরের ১৭ ই সেপ্টেম্বর জ়োহার ল্যাচম্যান, ইয়োরাম মুসাফি-সহ চার ইজ়রায়েলি সেনা অফিসার কলকাতায় এসেছিলেন মিসাইল এবং বোমার শক্তিশালী খোলের খোঁজে,যা বাঙ্কার ভেদ করে আঘাত করতে পারে।
একেই প্রকারান্তরে বাঙ্কার বাস্টার বলা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রের দাবি,ইজ়রায়েলের এই সেনা আধিকারিকরা কলকাতায় এসে যোগাযোগ করেন ইছাপুরের মেটাল অ্যান্ড স্টিল ফ্যাক্টরি (এমএসএফ)–র সঙ্গে। প্রাথমিক ভাবে তাঁরা এমএসএফ–কে খোল তৈরির বরাত দিয়ে যান। বিশেষ উচ্চ পর্যায়ের সূত্রের খবর,১০০ কিলো ওজনের বোমার বাইরের বেশ কয়েকটি খোল ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে ইছাপুরে। ইছাপুরেই তার সফল পরীক্ষা হয়েছে। ইজ়রায়েল থেকে আবার বিশেষজ্ঞদের আসার কথা। সূত্রের দাবি, কিছুদিনের মধ্যেই তাঁরা এসে ওই খোলের ফাইনাল টেস্টিং করবেন। ওই সূত্রানুযায়ী সেই খোল যদি তাঁদের পছন্দ হয়,তা হলে তা ফিনিশিং–এর জন্য পাঠানো হবে মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতে।
এখণ প্রশ্ন উঠছে,যে ইজ়রায়েলের টেকলোনজি-র সামনে তাবড় দেশ নতজানু,তারা বোমার খোল বা বাঙ্কার বাস্টার বানাতে কেন কলকাতার দ্বারস্থ হলো?
জানা গিয়েছে,পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধের আবহে গাজ়া, লেবানন, ইজ়রায়েল, ইরান–সহ বহু দেশ মিসাইল–ড্রোন হানা থেকে বাঁচতে বাঙ্কার তৈরি করছে। ফলে, যাদের কাছে সেই বাঙ্কার ভেদ করে আক্রমণের অস্ত্র থাকবে, তারা এগিয়ে থাকবে অনেকটাই। আমেরিকার দাবি, তাদের বাঙ্কার বাস্টার অনেকটাই ক্ষতি করেছে ইরানি পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র বা নিউক্লিয়ার এনরিচমেন্ট প্লান্টের।
প্রযুক্তির জন্য সারা বিশ্বে সমাদৃত ইজ়রায়েল। তবে,বাঙ্কার ভেদ করে আক্রমণ হানার জন্য বোমার শক্তিশালী খোল বানানোর কারিগরি জানা নেই তাদের। তাই শক্ত খোলের খোঁজ করতে শুরু করে নেতানিয়াহু সরকার।
উঠে আসে তিনটি দেশের কথা। ব্রাজ়িল,ইউকে এবং ভারত। সূত্রের দাবি,ইজ়রায়েল সেনা খোঁজ করে জানতে পারে,ভারতের কলকাতা শহরের ইছাপুরে থাকা এমএসএফ–ই নাকি এ কাজে সবচেয়ে পারদর্শী।
কূটনৈতিক পথে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির অধীনে এমএসএফ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে ইজ়রায়েল প্রথমে স্পেসিফিকেশন দিয়ে জানায়, কতটা শক্তিশালী খোল তারা চাইছে। সেই স্পেসিমেন খোল বানিয়ে রাখা হয়েছিল ইছাপুরে। ১৭ সেপ্টেম্বর এসে তা-ই পরীক্ষা করে যান ইজ়রায়েল সেনা অফিসারেরা।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ১৮৭২ থেকেই অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে গোলা-গুলি, কামান, বন্দুকের খোল বানিয়ে আসছে এমএসএল। আগে তারা ছিল কাশীপুর গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরির অধীনে। ১৯২০ থেকে সরাসরি অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির অধীনে চলে আসে এটি।