ডিজিটাল ডেস্ক, ১৩ অগাস্ট : ভোটার তালিকায় গরমিলের অভিযোগে রাজ্যের চার সরকারি আধিকারিককে সাসপেন্ড ও তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সেই নির্দেশ কার্যকর করা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সাত দিন সময় চাইল রাজ্য সরকার। বুধবার দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে হাজিরা দেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। কমিশনে প্রায় এক ঘণ্টা ছিলেন তিনি। কমিশন সূত্রে খবর, মুখ্যসচিব যে অতিরিক্ত সময় চেয়েছেন, তা মঞ্জুর করা হয়েছে (Chief Secretary-ECI Meeting Update)।
যদিও এ নিয়ে এখনও পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের তরফে কিংবা নবান্ন থেকে কোনও সরকারি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি। তবে নবান্নের একটি সূত্র জানিয়েছে, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ কমিশনের কাছে ২১ অগস্ট পর্যন্ত সময় চেয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। দিল্লি থেকে ফেরার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই বিষয়ে তাঁর বৈঠক হওয়ার কথা। সেই বৈঠকের পরই পরবর্তী পদক্ষেপের রূপরেখা তৈরি হবে। পাশাপাশি, রাজ্যের অন্য শীর্ষ প্রশাসনিক কর্তাদের ও মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের সঙ্গেও আলোচনা হতে পারে বলে খবর।
নবান্ন সূত্রে আরও জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দিনভর কমিশনের নির্দেশ নিয়ে প্রশাসনিক মহলে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলবে। এরপর শুক্রবার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ছুটি থাকায়, এবং শনিবার প্রশাসনিক তৎপরতা সীমিত থাকার কারণে, বিষয়টি নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ মূলত আগামী সপ্তাহেই শুরু হতে পারে।
প্রসঙ্গত, ৫ অগস্ট নির্বাচন কমিশনের তরফে সংশ্লিষ্ট চার আধিকারিককে সাসপেন্ড ও তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের নির্দেশ দেওয়ার পর, এক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকার তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে না। বরং, তাঁদের সর্বোচ্চ সুরক্ষা দেওয়া হবে। এরপর ৮ অগস্ট কমিশন রাজ্যকে দ্বিতীয়বার চিঠি পাঠায় এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জবাব চায়। সেই সময়সীমা মেনে সোমবারই রাজ্য সরকার নিজেদের অবস্থান জানায় কমিশনকে। তারপরই মুখ্যসচিবকে দিল্লিতে তলব করে নির্বাচন কমিশন।
বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে সশরীরে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ ছিল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে। সূত্রের খবর, নির্ধারিত সময়ের আগেই পৌঁছে যান তিনি। বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ নির্বাচন সদনে প্রবেশ করেন এবং প্রায় এক ঘণ্টা সেখানে ছিলেন। তিনি বের হন সাড়ে ৫টার পরে। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, সাসপেনশন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাত দিন সময় চেয়ে নিয়েছেন তিনি।
কমিশনের নির্দেশ ছিল, ভোটার তালিকায় গরমিলের অভিযোগে রাজ্যের চার আধিকারিককে সাসপেন্ড এবং তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে হবে। কিন্তু সেই নির্দেশ মানার বদলে রাজ্য প্রশাসন মাত্র দুইজনের বিরুদ্ধে সীমিত পদক্ষেপ করেছে। মুখ্যসচিব সোমবার কমিশনকে পাঠানো চিঠিতে জানান, পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না কেন্দ্রের সহকারী নির্বাচনী নিবন্ধন আধিকারিক (এইআরও) সুদীপ্ত দাস এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর পূর্ব কেন্দ্রের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর সুরজিৎ হালদারকে আপাতত নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বাকি আধিকারিকদের বিষয়ে এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না রাজ্য।
চিঠিতে মুখ্যসচিব আরও লেখেন, সরকারি আধিকারিকরা নিয়মিত নানা দায়িত্ব সামলান, যার মধ্যে নির্বাচন সংক্রান্ত কাজও পড়ে। অনেক সময় নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করতে অধস্তনদের উপর দায়িত্ব অর্পণ করতে হয়। বহু ক্ষেত্রেই তাঁরা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেন। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে বিস্তারিত অনুসন্ধান ছাড়া কোনও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হলে, তা শুধু সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের জন্যই নয়, গোটা সরকারি কর্মচারী মহলের মনোবলেও আঘাত হানতে পারে। সেই কারণেই এখন প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে দু’জনকে দায়িত্বচ্যুত করা হয়েছে, বাকি বিষয়টি নিয়ে রাজ্য আরও সময় নিয়ে ভাবতে চায়— এমনটাই জানিয়েছে নবান্ন।