ডিজিটাল ডেস্ক ১৪জুনঃ ঘড়ির কাঁটা তখন বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পেরিয়ে গিয়েছে। অন্ধকারের মধ্যেই ইজরায়েলের আকাশে উড়ল দুশো ফাইটার জেট। লক্ষ্য ইরানের প্রতিরক্ষা ও পরমাণুকেন্দ্র। ঘণ্টাখানেকের অভিযান। পোশাকি নাম ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’। কিছুক্ষণ পরেই জানা গেল, ইরানের অন্তত আটটি জায়গায় আছড়ে পড়েছে ইজরায়েলি সেনার ক্ষেপণাস্ত্র। মূল টার্গেট ইরানের সবচেয়ে বড় ইউরেনিয়াম পরিশোধন কেন্দ্র নাতনাজ। তালিকায় রয়েছে তাবরিজ সহ আরও কয়েকটি পরমাণু ও সেনার প্রধান ঘাঁটি। উপসাগরীয় যুদ্ধের পর এত বড় হামলা ইরানে আর হয়নি। বেলা বাড়তেই জানা যায়, শুধু পরিকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি নয়, ইজরায়েলের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ইরানের সেনা সর্বাধিনায়ক বা চিফ অব স্টাফ জেনারেল মহম্মদ বাঘেরিও। মারা গিয়েছেন ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পের (আইআরজিসি) প্রধান কমান্ডার জেনারেল হোসেন সালামি, এয়ার ফোর্সের কমান্ডার আমির আলি হাজিজাদেহ সহ কয়েকজন শীর্ষ কর্তা। এমনকী ছ’জন পরমাণু বিজ্ঞানীরও মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ইরানের অ্যাটমিক এনার্জি অর্গানাইজেশনের প্রাক্তন প্রধান ফেরেউদুন আব্বাসি। পাল্টা ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ’ শুরু করেছে তেহরান। একাধিক স্থান লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে
তারা (Conflict Between Iran-Israel)।
বাঘেরি ছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের কাছের লোক। ইজরায়েলি হানার জবাবে খামেনেইয়ের হুঁশিয়ারি—‘এর পরিণাম হবে ভয়ঙ্কর। চরম শাস্তি পেতে হবে।’ সেইমতো শুক্রবার সকাল থেকে শতাধিক ড্রোন হামলা চালায় তেহরান। সেগুলিকে মাঝ আকাশেই ধ্বংস করেছে ইজরায়েলের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। যদিও রাতে ফের ১৫০টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। জনবসতি এলাকা লক্ষ্য করেই ওই হামলা বলে জানিয়েছে ইজরায়েল। সূত্রের খবর, রাতে তেল আভিভে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে। গোটা পরিস্থিতিতে উদ্বেগ ছড়িয়েছে বিশ্বজুড়ে। দু’পক্ষকেই সংযত থাকার বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশংসা করেছেন ইজরায়েলের হামলার।
এদিন ইরানের মোট ১০০ জায়গাকে টার্গেট করেছিল তেল আভিভ। সূত্রের খবর, ইরানের বিভিন্ন জায়গায় গোপনে বিস্ফোরক ঠাসা একাধিক ড্রোন মজুত করেছিল ‘মোসাদ’। এদিন সেগুলিকে ‘অ্যাক্টিভেট’ করা হয়। টার্গেট ছিল তেহরানের কাছে সেনাঘাঁটির মিসাইল লঞ্চারগুলি। নিখুঁত হামলা চালাতে গাড়ির মধ্যে লুকিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র এবং সেটির ‘স্ট্রাইক সিস্টেম’ মধ্য ইরানে পাচার করেছিল ইজরায়েল। হামলার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলি ইরানের এয়ার ডিফেন্সে আঘাত হানে। রাতেও একদফা হামলা চালায় ইজরায়েল। দীর্ঘদিন ধরে তাদের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক মহলকে অন্ধকারে রেখে ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করে চলেছে। এদিন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানান, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই ইরানের পরমাণুকেন্দ্রে হামলা।
এই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি। তারা জানিয়েছে, নাতনাজ সহ অন্য পরমাণুকেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়াচ্ছে কি না, তা জানার চেষ্টা চলছে। যদিও নেতানিয়াহুর দাবি উড়িয়ে দিয়েছে ইরান। জানিয়েছে, জনবসতি লক্ষ্য করেও হামলা চালিয়েছে ইজরায়েলি সেনা। শুক্রবারের নামাজের পর ইরানের কোম শহরে ঐতিহ্যবাহী জামকারান মসজিদের চূড়ায় লাল পতাকা ওড়ানো হয়েছে। কোনও দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার সময় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তারপরই ১০০-রও বেশি ইরানি ড্রোন হামলা চালায় ইজরায়েলের দিকে। তেহরান জানিয়েছে, এই পাল্টা আক্রমণে অন্তত ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইজরায়েল সেকথা স্বীকার করেনি। রাতে ফের দু’পক্ষ একে অন্যের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে।