Delhi Stray Dogs Updates : পথকুকুরকে সরানোর নির্দেশ! বিতর্কের মাঝে এই সিদ্ধান্ত খতিয়ে দেখবেন প্রধান বিচারপতি?
ডিজিটাল ডেস্ক, ১৩ অগাস্ট : সুপ্রিম কোর্ট রাজধানী দিল্লি থেকে অবিলম্বে কয়েক লক্ষ পথকুকুর সরানোর নির্দেশ দেওয়ার পর দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। সোমবারের ওই নির্দেশ নিয়ে জনমত বিভাজিত হওয়ায় প্রধান বিচারপতি বিআর গবই আশ্বাস দিয়েছেন, তিনি পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন (Delhi Stray Dogs Updates)।
বুধবার প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে পথকুকুর সংক্রান্ত একটি মামলা জরুরি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন করা হলে, সেখানেই বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। আইনি খবরের ওয়েবসাইট ‘লাইভ ল’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ‘কনফারেন্স ফর হিউম্যান রাইটস (ইন্ডিয়া)’ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দিল্লি হাইকোর্টের একটি রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করে। সেই রায়ে পথকুকুরদের নির্বীজকরণ ও টিকাকরণ নিয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
বুধবার আইনজীবী মামলাটি উত্থাপন করলে প্রধান বিচারপতি জানান, “পথকুকুর নিয়ে তো একটি অন্য বেঞ্চ ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছে।” তিনি সোমবারের সেই নির্দেশের কথাই উল্লেখ করছিলেন, যেখানে দিল্লির রাস্তাঘাট থেকে পথকুকুরদের সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠাতে বলা হয়েছে। এর পরেই প্রধান বিচারপতি আশ্বাস দেন, গোটা বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।
বুধবার আদালতে আইনজীবী ২০২৪ সালের মে মাসে বিচারপতি জেকে মহেশ্বরীর বেঞ্চের এক পূর্বের নির্দেশ আদালতে পাঠ করে শোনান। সেই নির্দেশে বলা হয়েছিল, “কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই আইনের সীমার মধ্যে থেকেই পদক্ষেপ করতে হবে। তবে কোনও অবস্থাতেই পথকুকুরদের নির্বিচারে হত্যা করা চলবে না। সকল জীবের প্রতি সহানুভূতি ও করুণা দেখানোই আমাদের সাংবিধানিক মূল্যবোধের অংশ, এবং তা মেনে চলা প্রত্যেকের কর্তব্য—এ নিয়ে কোনও দ্বিমত থাকতে পারে না।”
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে দিল্লিতে পথকুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে মানবিক পদ্ধতিতে নির্বীজকরণ ও টিকাকরণের অনুমতি চেয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিল ‘কনফারেন্স ফর হিউম্যান রাইটস (ইন্ডিয়া)’ নামক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি। কিন্তু ২০২৩ সালে দিল্লি হাই কোর্ট কোনও স্পষ্ট নির্দেশ না দিয়েই মামলাটি নিষ্পত্তি করে দেয়। এরপর সংস্থাটি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। যদিও সেই মামলা এখনও শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত হয়নি।
সম্প্রতি দিল্লিতে পথকুকুরের কামড়ে জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নয়াদিল্লি পুরসভা (এনডিএমসি) এবং দিল্লি পুরসভা (এমসিডি)-র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকও করে শীর্ষ আদালত।
এই প্রেক্ষিতে সোমবার সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, রাজধানী দিল্লির সব এলাকায় অবিলম্বে পথকুকুরদের সরানোর কাজ শুরু করতে হবে। বেওয়ারিশ কুকুরদের ধরে জীবাণুমুক্ত করে তাদের স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো বাধ্যতামূলক।
এরপর মঙ্গলবার আর একটি নির্দেশিকা জারি করে আদালত জানায়, খোলা জায়গায় আর উচ্ছিষ্ট খাবার ফেলা যাবে না। সেগুলি অবশ্যই ঢেকে রাখা ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। কারণ, উচ্ছিষ্ট খাবারের গন্ধে পথকুকুর ও অন্যান্য পশুপাখি সেখানে ভিড় জমায়। তারা আবর্জনার স্তূপে খাবারের খোঁজে ঘাঁটাঘাঁটি করে, যা জনস্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। অনেক সময় এই প্রাণীরা পথচারীদের আঁচড়েও বা কামড়েও দিতে পারে। জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার স্বার্থেই তাই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে সুপ্রিম কোর্টের পথকুকুর সংক্রান্ত সাম্প্রতিক নির্দেশ নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক তুঙ্গে। রাজনৈতিক নেতা, অভিনেতা, পশুপ্রেমী ও সমাজকর্মীরা একযোগে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। অধিকাংশেরই মত, নির্বীজকরণ, টিকাদান এবং উপযুক্ত যত্নের মাধ্যমে সমস্যার স্থায়ী ও মানবিক সমাধান সম্ভব।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী কড়া ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “এই নির্দেশ মানবিকতার পথ থেকে সরে গিয়ে দেওয়া হয়েছে। অবলা প্রাণীদের এমনভাবে সমস্যার উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা একেবারেই উচিত নয়।”
এ বিষয়ে সরব হয়েছে পশু-অধিকার সংগঠন ‘পেটা’ (People for the Ethical Treatment of Animals)–ও। সংগঠনটির মতে, এত বড় মাপের স্থানচ্যুতি বৈজ্ঞানিক নয় এবং কার্যকরও হবে না। বরং এই পদ্ধতি বাস্তবায়িত হলে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আসার বদলে আরও বাড়তে পারে। পাশাপাশি, জলাতঙ্ক বা কুকুরের কামড়ের মতো সমস্যাও এভাবে বন্ধ করা সম্ভব নয় বলেই মত তাদের।