জগন্নাথদেব মিলিয়ে দিলেন দিলীপ-মমতাকে! সস্ত্রীক দিলীপের মমতা দর্শন, খোস মেজাজে নবদম্পতির সঙ্গে গল্প মুখ্যমন্ত্রীর
ডিজিটাল ডেস্ক, ৩০ এপ্রিল: রাজানীতির দুই যুযুধান প্রতিপক্ষ! এমনিতে কেউ কাউেকে ছেড়ে কথা বলেন না। তবে দীঘার সমূদ্রতীরে এই দুই প্রতিপক্ষর প্রতিদ্বন্ধিতা কোথায়? শুধুই হাসি মুখ সর্বত্র। দীঘায় মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের আমন্ত্রনে সাড়া দিয়ে সস্ত্রীক হাজির বিজেপির দিলীপ ঘোষ। সঙ্গে স্ত্রী রিঙ্কু। আর সেখানেই নবদম্পতির মমতা দর্শন। খোস মেজাজে মমতাও হাত বাড়িয়ে আমন্ত্রণ জানালেন নব দম্পতিকে। আড্ডাও দিলেন। দেখলে কে বলবে রাজ্য়ের একের পর এক গরম ইস্য়ুতে এই দুই হেভিওয়েট কাউকে কখনওই ছেড়ে কথা বলেননি। তবে সেই সমীকরণ হাওয়া জগন্নাথদেবের সামনে। এখানে ছবিটা একেবারে আলাদা।
একদিকে শুভেন্দু অধিকারি যখন এই জগন্নাথধামকে কেন্দ্র করে লাগাতার আক্রমণে নেমেছেন, সেখানেই উল্টো ছবি বিজেপির আদি নেতা, প্রাক্তন সাংসদ ও রাজ্য় বিজেপির প্রাক্তণ সভাপতি দিলীপ ঘোষের হাবভাবে। কোনও বিদ্রুপ নেই, নেই কোনও হুংকার। সাদামাটা পাঞ্জাবি পরে, গলায় মালা পরে সস্ত্রীক বসে হাসি মুখে আড্ডা দিলেন মমতার সঙ্গে। নিন্দুকেরা বলছে, এক জগন্নাথদেবই নাকি তৈরী করে দিলেন পদ্ম শিবিরের দুই ছবি। একদিকে গোঁশা মুখে শুভেন্দু, অন্য়দিকে একগাল হাসি নিয়ে মমতার পাশে দিলীপ!

রাজ্য সরকারের আমন্ত্রণকে ‘সম্মান’ জানিয়ে দিঘার জগন্নাথধাম পৌঁছলেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার বেলা সওয়া তিনটে নাগাদ দিঘায় জগন্নাথধামের আনুষ্ঠানিক দ্বারোদ্ঘাটন করেছেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ সেই মন্দিরে পৌঁছেছেন দিলীপ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে দ্বারোদ্ঘাটনের মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে জগন্নাথ মন্দিরে উপস্থিত হন দিলীপ ঘোষ। চার নম্বর গেট দিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করেন তিনি। মন্দির চত্বরে তাঁদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও কুণাল ঘোষ, উত্তরীয় পরিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন।
প্রসঙ্গত মুখ্যমন্ত্রীর এই জগন্নাথধাম কর্মসূচি বয়কট করে বুধবারই কাঁথিতে পাল্টা কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্য প্রশাসন প্রথমে অনুমতি না দেওয়ায় কলকাতা হাইকোর্ট থেকে অনুমতি নিয়ে কাঁথিতে শুভেন্দু ‘সনাতনী সমাবেশ’ করেছেন। সেই কাঁথি পেরিয়েই দিঘা যান দিলীপ। তবে ‘সনাতনী সমাবেশে’ যাননি।
মঙ্গলবার রাতেই দিলীপ জানিয়েছিলেন যে, বুধবার সময় পেলে তিনি দিঘার জগন্নাথধামে যাবেন। হাওড়ার শ্যামপুরে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও বুধবার তাঁর আমন্ত্রণ ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ‘সময় পাওয়া’ দিলীপের পক্ষে কার্যকর হবে কি না, তা দুপুর পর্যন্তও অনিশ্চিত ছিল। শ্যামপুরের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে তিনি বেরোনোর পরই নিশ্চিত হয় যে তাঁর গন্তব্য দিঘা।
রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ অক্ষয় তৃতীয়াকে শুভ দিন বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই দিনে পূজার্চনা ও ধর্মীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করা রীতি। তাই দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে আমন্ত্রণ পেয়ে তাঁর উপস্থিতি স্বাভাবিক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উদ্যোগকে তিনি ‘হিন্দু জাগরণে’র প্রয়াস হিসেবে দেখছেন। তিনি জানান, অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে হিন্দু জাগরণের বিভিন্ন কর্মসূচি থাকে, এবং মন্দির প্রতিষ্ঠা এ ধরনের উদ্যোগেরই অংশ। ব্যক্তিগত রসিকতা প্রকাশ করে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘ভগবান আমাদের সঙ্গে দেখা করতে সাড়ে তিনশো কিলোমিটার সফর করেছেন, আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে দু’শো কিলোমিটার যেতে পারব না!’’
Comments are closed.