Earthquake Swallowing World:ভূমিকম্পের কড়ালগ্রাসে ঢুকছে গোটা দুনিয়া ! নিরাপদহীন রাজধানী সহ কোলকাতা

98

ডিজিটাল ডেস্ক ১০ই জুলাইঃ বৃহস্পতিবার সকালে কেঁপে উঠল দেশের রাজধানী । সকাল ৯টা ৪ মিনিট নাগাদ প্রবল কম্পন অনুভূত হয় দিল্লি,এনসিআর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায়। ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল হরিয়ানার ঝাজ্জর জেলা।ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি জানিয়েছে,কম্পনের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৪.৪ এবং ভূগর্ভে ১০ কিমি গভীরে ছিল তার উৎসস্থল। বিরাট মাত্রার কম্পন না হলেও অনেকে বলছেন,এটি তাদের অভিজ্ঞতায় সবথেকে ‘দীর্ঘস্থায়ী'(long-time) ভূমিকম্প ছিল(Earthquake In Delh)! কম্পন টের পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আতঙ্কে রাস্তায় নেমে আসেন বহু মানুষ। দিল্লির(delhi) বিভিন্ন আবাসন ও অফিসে ঝুলন্ত ফ্যান, লাইট বা জানালার কাচ কেঁপে ওঠে। গুরুগ্রাম ও নয়ডার অফিস পাড়ায় কর্মীদের অনেকে কম্পিউটার ও ডেস্ক কাঁপতে দেখে বাইরে বেরিয়ে আসেন। এছাড়া জানা যায় ভূমিকম্পের উৎসস্থল থেকে অন্তত ২০০ কিলোমিটার দূরে উত্তরপ্রদেশের পশ্চিম প্রান্তের মীরাট এবং শামলিতেও কম্পন টের পাওয়া গেছে। হরিয়ানার সোনিপত, হিসার, গুরুগ্রাম, রোহতক, দাদরি ও বহাদুরগড় শহরেও শক্তিশালী কম্পন অনুভূত হয়েছে(Earthquake Swallowing World)।

ভূমিকম্পের কারণ
আগে জেনে নেওয়া যাক কেন হয় ভূমিকম্প । মাটির এত গভীরে তরল ম্যাগমার যে স্তর আছে,তার ওপর ভাসমান দুটি মহাদেশীয় প্লেটের স্থান পরিবর্তনের সময় প্লেটগুলির কিনারায় প্রবল পীড়নের সৃষ্টি হয়। পীড়ন যখন বড়সড় চ্যুতির সৃষ্টি করে এবং এর অন্তর্নিহিত শক্তি বের করার চেষ্টা করে, ঠিক তখনই কেঁপে ওঠে ভূপৃষ্ঠ।

শুধু দিল্লিই নয় এর আগেও এই বছরই ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল কলকাতাও

কলকাতা
কেঁপে উঠেছিল দক্ষিণবঙ্গের উপকূলবর্তী অঞ্চল। কম্পন টের পাওয়া গিয়েছে কলকাতাতেও। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৫.১। কম্পন অনুভূত হয়েছে বাংলাদেশ ও ওড়িশাতেও। সেক্ষেত্রে জাতীয় ভূকম্পন পরিমাপকেন্দ্র বা ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি জানিয়েছিল, ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল কলকাতা থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং হলদিয়া থেকে ২৮৬ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের ৯১ কিলোমিটার গভীরে। জাতীয় ভূকম্পন পরিমাপকেন্দ্র যে ছবি প্রকাশ করেছিল তাতে দেখা গেছিল ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূল এবং উপকূল সংলগ্ন অঞ্চলে কম্পন অনূভূত হয়। প্রাথমিক ভাবে জানা গেছিল,পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া,কাঁথি, দিঘাতেও কম্পন অনুভূত হয়েছিল সে সময়। বাংলাদেশে ঢাকা-সহ পশ্চিম প্রান্তের উপকূলের কিছু অঞ্চলে কম্পন টের পাওয়া গিয়েছিল সে সময়।

কলকাতার কারণ-

কেন্দ্রীয় সরকারের ২০২১ সালের তথ্য অনুসারে কলকাতা অবস্থানগত দিক থেকে ‘সিসমিক জ়োন ৪’-এর মধ্যে পড়ে। কোনও অঞ্চলে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা কতটা রয়েছে, তার উপর নির্ভর করে এই অঞ্চলগুলিকে ভাগ করা হয়। দেশে এমন চারটি অঞ্চল রয়েছে। ‘সিসমিক জ়োন ২’ (কম্পনের সম্ভাবনা সবচেয়ে কম) থেকে শুরু করে ‘সিসমিক জ়োন ৫’ (কম্পনের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি)পর্যন্ত রয়েছে ভারতে। ‘সিসমিক জ়োন ৪’-এর অর্থ এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা মৃদু। কম্পনের উৎস এই অঞ্চলে সাধারণত দেখা যায় না। মূলত বঙ্গোপসাগর, উত্তর-পূর্ব ভারত, নেপালের কম্পনের প্রভাব পড়তে দেখা যায় এই অঞ্চলে।
নড়ে যেতে পারে এ শহরের পায়ের তলার মাটিও?

কলকাতা এই দিক থেকে ঠিক কোন অবস্থানে ?

ভু-বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন,কলকাতা শহরের উত্তরের দিকে গেলে উত্তরবঙ্গে হিমালয় পর্বতাঞ্চলে কিন্তু বেশ ভূমিকম্প প্রবণ। এবার সেখানে যদি ভূমিকম্প হয়,তার প্রভাবে কলকাতাও কেঁপে উঠবে বৈকি। অতীতেও বহুবার উত্তরবঙ্গ, নেপাল , সিকিম, ইত্যাদি জায়গার ভূকম্পনের প্রভাব পড়েছে এ শহরে। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা বলছে কলকাতা শহরও সাইসমিক রিস্ক বা কম্পনের ঝুঁকি থেকে দূরে নেই। এখানে হয়ত ৭.৭ বা ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হবে না কিন্তু যেখানে হবে, তার প্রভাব আসবে কলকাতায়। ক্ষতিও হবে। এবার কোথায় বেশি ক্ষতি হতে পারে, কোথায় কম,তা নিয়ে একটি সমীক্ষা আইআইটি খড়গপুর ২০১৫ সালে করে। সেই অনুসারে কলকাতা ভূমিকম্পের ঝুঁকির বাইরে নয়। সাইসমিক জোন ম্যাপে ৪ টি ভাগ রয়েছে। ২,৩,৪,৫। সব থেকে কম ঝুঁকিতে আছে জোন২ । সবথেকে বেশি ঝুঁকিতে আছে জোন ৫। কলকাতা রয়েছে ৩ ও ৪ এর বর্ডার লাইনে। তাই ভূমিকম্পের ঝুঁকির বিষয়টি মোটেই উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়।

কোথায় ঝুঁকি সবথেকে বেশি?

কলকাতার বহু বহুতল। ভূমিকম্প হলে যে সব বাড়ি ধসে পড়ে ,এমন তো নয়। তা অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে। তাই ভূমিকম্প থেকে বাঁচতে গেলে বহুতল নির্মাণের সময় নির্দিষ্ট নিয়ম আর্কিটেক্টদের খেয়াল রাখতে হবে। নিয়ম না মানলে যে সব জায়গায় জলা জমি ভরাট করে বহুতল হয়েছে, কিংবা বড় রাস্তার সঙ্গে বাড়ির দূরত্ব কম অথবা পুরনো বাড়ি ঠিকমতো মেরামতি হয় না, সে সব জায়গায় ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা সবথেকে বেশি।