Election Commission On SIR : SIR নিয়ে বিস্তারিত জানাল নির্বাচন কমিশন, কবে থেকে শুরু পশ্চিমবঙ্গে?

48

ডিজিটাল ডেস্ক, ১৭ অগাস্ট : বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন, যাকে বলা হচ্ছে ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ (SIR)। কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বিহারে শেষবার এই প্রক্রিয়া হয়েছিল ২০০৩ সালে, আর বাংলায় হয়েছিল ২০০২ সালে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হল ভোটার তালিকা থেকে অনুপ্রবেশকারী ও অযোগ্য ব্যক্তিদের নাম বাদ দেওয়া এবং নিশ্চিত করা যে শুধুমাত্র যোগ্য ভারতীয় নাগরিকরাই ভোটাধিকার ব্যবহার করতে পারেন (Election Commission On SIR)।

বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ ও নিবিড় সংশোধন (SIR) ঘিরে চলা বিতর্কের মাঝে রবিবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার মুখোমুখি হন সাংবাদিকদের। সেই বৈঠকে বিহারের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গও উঠে আসে। পশ্চিমবঙ্গে কবে থেকে SIR শুরু হবে, তা জানতে চাইলে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানান, এই বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অপর দুই নির্বাচন কমিশনার—সুখবির সিংহ সাঁধু ও বিবেক জোশীও। জ্ঞানেশ কুমার জানান, তিনজন কমিশনার মিলে আলোচনার ভিত্তিতে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি স্পষ্ট জানান, পশ্চিমবঙ্গ বা অন্যান্য রাজ্যে SIR কবে শুরু হবে, তা সময়মতো জানিয়ে দেওয়া হবে।

পাশাপাশি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার বলেন, “খসড়া ভোটার তালিকায় যদি কোনও ভুল বা ত্রুটি থাকে, তা সংশোধনের জন্য এখনও ১৫ দিন সময় রয়েছে। সবাইকে অনুরোধ করছি, নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবেদন জানান। নির্বাচন কমিশনের দরজা সকলের জন্য সমানভাবে খোলা রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশনের কাঁধে বন্দুক রেখে ভারতের ভোটারদের লক্ষ্য করা হচ্ছে, এ নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে। তবে কমিশন স্পষ্ট করে জানাতে চায়, তারা কোনও রকম ভেদাভেদ না করে সাহসিকতার সঙ্গে দেশের সব ভোটারের পাশে রয়েছে—ধনী হোক বা দরিদ্র, প্রবীণ, যুবা, নারী কিংবা যে কোনও ধর্মের মানুষ। কমিশন অতীতেও যেমন ছিল, ভবিষ্যতেও একইভাবে সবার পাশে থাকবে।”

মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ব্যাখ্যা দেন, প্রথমে রাজনৈতিক দলগুলির বিএলএ (BLA) বা বুথ লেভেল এজেন্টরা একটি খসড়া তালিকা প্রস্তুত করেন। এরপর সেই খসড়া তালিকায় যদি কোনও ত্রুটি থাকে, তা সংশোধনের জন্য নির্দিষ্ট নিয়মে আবেদন করা যায়। এই প্রক্রিয়ায় ভোটার ও রাজনৈতিক দল—দু’পক্ষেরই সক্রিয় ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জমা পড়া আবেদনগুলি সংশ্লিষ্ট এলাকার এসডিএম (SDM) খতিয়ে দেখেন এবং যাচাই করেন।

খসড়া তালিকা ও চূড়ান্ত তালিকা—দুটিই রাজনৈতিক দলগুলিকে সরবরাহ করা হয়। তবুও যদি কোনও ত্রুটি থেকে যায়, তাহলে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলাশাসকের (DM) কাছে আবেদন জানানো যায়। সেখান থেকেও সমাধান না-হলে, রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (Chief Electoral Officer) কাছে আবেদন করার সুযোগ থাকে।

মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, “প্রতি বছর যে রুটিন সংশোধন করা হয়, তা অনেকটা ‘র‌্যান্ডম’ বা নির্বাচিত উপায়ে হয়ে থাকে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত দেশে ১০ বারেরও বেশি SIR (Special Intensive Revision) হয়েছে। ভোটার তালিকায় সর্বাধিক সঠিকতা এবং স্বচ্ছতা আনতেই এই SIR অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

সাংবাদিক বৈঠকে এক প্রশ্ন ওঠে—মাত্র ৬ মাসে এত সংখ্যক মৃত ভোটার কোথা থেকে এল? এর জবাবে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ব্যাখ্যা করেন, গত ২০ বছর ধরে যে ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়া চলেছে, তাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ‘এমুনারেশন ফর্ম’ দেওয়া হয়নি।

ফলে কারও মৃত্যুর খবর যদি পরিবারের তরফ থেকে জানানো না হয়, তা হলে BLO-দের পক্ষে সেই তথ্য জানা সম্ভব ছিল না। তিনি জানান, এই মৃত ভোটারদের তালিকা শুধুমাত্র গত ৬ মাসের নয়, বরং গত ২০ বছরে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে কিন্তু তাঁদের তথ্য কমিশনের নথিতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি—তাঁরাও এই তালিকায় রয়েছেন। এখন ‘এমুনারেশন ফর্ম’-এর মাধ্যমে সেই তথ্য সামনে আসছে এবং তালিকা শুদ্ধ করা সম্ভব হচ্ছে।

এদিকে, বাংলায় প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। নজরুল মঞ্চে নদিয়া, দুই ২৪ পরগণা এবং মুর্শিদাবাদ মিলিয়ে শতাধিক ব্লকের ব্লক লেভেল অফিসার (BLO)-দের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। আগামী দিনে পর্যায়ক্রমে অন্য জেলাগুলির BLO-দেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এই উদ্যোগকে ভোটার তালিকার নিবিড় ও নির্ভুল সংশোধনের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছেন নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা।

আর তারপর থেকেই পশ্চিমবঙ্গেও SIR (Special Intensive Revision) কার্যকর হতে পারে—এই নিয়ে জল্পনা তীব্র হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ একাধিক নেতা ও মন্ত্রী অভিযোগ তুলেছেন, SIR আসলে NRC ও CAA-এরই অন্যরূপ। তাঁদের দাবি, এর মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রকৃত ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

তাঁদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন বিজেপি সরকারের ইশারায় কাজ করছে। তবে রবিবার কমিশন এই অভিযোগ সরাসরি খারিজ করে দেয়। কমিশনের তরফে জানানো হয়, “কমিশনের ঘাড়ে বন্দুক রেখে SIR নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যে ও ভিত্তিহীন।”