Fake Police Station Arrest : ‘থানা’ খুলে প্রতারণা! গ্রেফতার ‘বীরভূমের বিভাস’, ধৃত তাঁর পুত্র-সহ আরও পাঁচ

87

ডিজিটাল ডেস্ক, ১০ অগাস্ট : নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নাম জড়িয়েছিল তাঁর, ইডি ও সিবিআইয়ের তলবে একাধিকবার হাজিরাও দিয়েছিলেন। সেই বীরভূমের বিভাস অধিকারী এবার ধরা পড়লেন নয়ডায়। অভিযোগ, তিনি ভুয়ো অফিস খুলে প্রতারণার চক্র চালাচ্ছিলেন (Fake Police Station Arrest)। চমকপ্রদভাবে সেই অফিসের নাম রাখা হয়েছিল— ‘ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ অ্যান্ড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন’!

শুধু বিভাস অধিকারী নন, তাঁর পুত্র অর্ঘ্য অধিকারীকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি আরও চারজনকে আটক করা হয়েছে। অভিযুক্তদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে তিনটি মোবাইল ফোন, তিনটি ভিন্ন ব্যাঙ্কের চেকবই, ১৬টি রাবার স্ট্যাম্প, একটি স্ট্যাম্প প্যাড, নয়টি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র, তিনটি ভিজিটিং কার্ড, বেশ কিছু শংসাপত্র ও লেটারহেড, একাধিক এটিএম কার্ড এবং ৪২,৩০০ টাকা নগদ অর্থ।

মানিক ভট্টাচার্যের গ্রেফতারির পরই ইডি উত্তর কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট এলাকার একটি ফ্ল্যাটে হানা দেয়। তদন্তকারী সংস্থার দাবি, ওই ফ্ল্যাটের সঙ্গে বিভাস অধিকারীর সরাসরি যোগ রয়েছে। তল্লাশির পর সেই ফ্ল্যাট সিল করে দেওয়া হয়। এর আগে সিবিআই বীরভূমে বিভাসের বাড়ি ও তাঁর পরিচালিত আশ্রমেও তল্লাশি অভিযান চালায়।

এক সময় নলহাটি-২ ব্লকে তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন বিভাস, যাঁকে অনুব্রত মণ্ডলের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে মনে করা হতো। তবে গরু পাচার মামলায় অনুব্রতের গ্রেফতারির পর তৃণমূল থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। পরে ‘অল ইন্ডিয়া আর্য মহাসভা’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক সংগঠনও গঠন করেন।

গোপন সূত্রে খবর পেয়ে শনিবার রাতে নয়ডার সেক্টর ৭০-এর বিএস-১৩৬ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকেই বিভাস অধিকারী ও অন্যান্য অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ওই বাড়িতেই ভুয়ো থানা গড়ে তুলে প্রতারণার জাল বিস্তার করেছিলেন ধৃতেরা। নিজেদের পরিচয় দিতেন কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিক হিসেবে। ভুয়ো পরিচয়পত্র ও নথি দেখিয়ে চাঁদাবাজির র‍্যাকেট চালাতেন তাঁরা।

তদন্তে উঠে এসেছে, অভিযুক্তদের কাছ থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রকগুলোর নামে তৈরি একাধিক জাল নথি পাওয়া গিয়েছে। পাশাপাশি তাঁরা দাবি করতেন, তাঁদের অফিস রয়েছে ব্রিটেনেও, এবং ইন্টারপোল ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গেও তাঁদের যোগাযোগ রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই ভুয়ো দাবির ভিত্তিতেই তাঁরা সহজেই সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করতেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি বিভাস অধিকারী নয়ডাতেই বসবাস করছিলেন। তাঁর পুত্র অর্ঘ্য অধিকারী আইন পাস করেছেন। বাকি গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তরা— বাবুলচন্দ্র মণ্ডল, পিন্টু পাল, সমাপদ মাল এবং আশিস কুমার— সকলেই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি (আইপিসি) এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনের একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিযুক্তদের আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাঁদের বিচারবিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দেন।

প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় যুব তৃণমূলের প্রাক্তন নেতা কুন্তল ঘোষের গ্রেফতারির পরই তদন্তে বিভাসের নাম উঠে আসে। রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের গ্রেফতারির পরেও বিভাসকে নিয়ে নতুন করে তৎপরতা বাড়ায় তদন্তকারীরা। এক সময় বেসরকারি বিএড ও ডিএলএড কলেজ সংগঠনের সভাপতি ছিলেন নলহাটির এই বাসিন্দা। তাঁকে মানিক ভট্টাচার্যের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলেও মনে করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, বিভাস ও তাঁর চক্র নিজেদের কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিক পরিচয় দিয়ে www.intlpcrib.in নামে একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনুদান তুলত। পাশাপাশি অনলাইনে দেখাত একাধিক ভুয়ো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেট। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে একাধিক ভুয়ো প্রেস আইডি, মানবাধিকার সংগঠনের জাল পরিচয়পত্র এবং অফিসিয়াল সিল, যার মাধ্যমে তাঁরা প্রভাব খাটিয়ে প্রতারণা করতেন।