ডিজিটাল ডেস্ক ১১ই অগাস্টঃ যুদ্ধের ভয়াবহতা,গাজার বাসিন্দাদের অনাহার, দুর্দশার ছবি দেখাচ্ছিলেন তাঁরা। ইজরায়েলি হামলায় নিহত আল জাজি়রার কমপক্ষে ৫ জন সাংবাদিক। গাজার আল শিফা হাসপাতালে হামলা চালায় ইজরায়েল। আইডিএফের দাবি, সাংবাদিকদের মধ্যে একজন হামাস নেতা ছিলেন। গাজার আল শিফা হাসপাতালের বাইরে সাংবাদিকদের তাঁবুতে ছিলেন আল জাজি়রার সাংবাদিক আনাস আল-শরিফ, মহম্মদ ওরেকেহ। সঙ্গে ছিলেন ক্যামেরাম্যান ইব্রাহিম জাহের, মোয়ামেন আলিওয়া, মহম্মদ নৌফাল। ইজরায়েলের সেনা সেই সময়ই হাসপাতালে হামলা চালায়। ৫ সাংবাদিক সহ মোট ৭ জনের মৃত্যু হয়(Gaza Strike News)।
গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের প্রধান ফটকের বাইরে সাংবাদিকদের জন্য স্থাপিত একটি তাঁবুতে ইজরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত পাঁচজন আল জাজিরা সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন চ্যানেলের খ্যাতনামা প্রতিবেদক আনাস আল-শরিফ ও মোহাম্মদ কুরেইকাহ, এবং ক্যামেরাপার্সন ইব্রাহিম জাহের, মুহাম্মদ নুফাল ও মুয়ামেন আলিওয়া। আল জাজিরার দাবি, এই হামলায় মোট সাতজন নিহত হয়েছেন।
হামলার পরপরই ইজরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে স্বীকার করে যে তারা আনাস আল-শরিফকে লক্ষ্য করেছিল, তাকে “সন্ত্রাসী” আখ্যা দিয়ে দাবি করে যে তিনি হামাসের একটি সশস্ত্র সেলের প্রধান ছিলেন এবং ইজরায়েলি বেসামরিক নাগরিক ও সেনাদের বিরুদ্ধে রকেট হামলার দায়িত্বে ছিলেন। সেনাবাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি সাংবাদিকের পরিচয় ব্যবহার করছিলেন। ২৮ বছর বয়সী আল-শরিফ মৃত্যুর কয়েক মুহূর্ত আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ গাজা সিটিতে ইজরায়েলি তীব্র বোমাবর্ষণের খবর জানাচ্ছিলেন। তার মৃত্যুর পর এক বন্ধুর মাধ্যমে তার অ্যাকাউন্টে একটি পূর্বলিখিত পোস্ট প্রকাশিত হয়, যেখানে লেখা ছিল— “যদি এই কথা তোমাদের কাছে পৌঁছায়, জেনে নিও ইজরায়েল আমাকে হত্যা করে আমার কণ্ঠস্বর চিরতরে নীরব করেছে।”
সাংবাদিকদের হত্যার দায় স্বীকার করেছে আইডিএফ। আল জাজ়িরার আনাসকে তারা ‘সন্ত্রাসবাদী’ আখ্যা দিয়েছে। দাবি,প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আনাস। তাঁদের বিবৃতি অনুযায়ী,‘‘হামাস জঙ্গি আনাস আল-শরিফ, যিনি নিজেকে আল জাজ়িরার সাংবাদিক হিসাবে পরিচয় দিতেন, তাঁর উপর হামলা হয়েছে। আনাস হামাসের জঙ্গি শাখার প্রধান ছিলেন। আইডিএফ সেনা এবং ইজ়রায়েলি নাগরিকদের উপর হামলা চালাতেন।’’ আনাস যে হামাসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তার সমর্থনে যুক্তি দিয়েছে আইডিএফ। তাদের বক্তব্য, ‘‘গাজ়া থেকে প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য এবং নথি, সন্ত্রাসবাদীদের প্রশিক্ষণ তালিকা, বেতনের নথি খতিয়ে দেখে আল জাজ়িরার কর্মীর হামাস যোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে।’’
প্যালেস্তাইনের সাংবাদিক সংঘ এই ঘটনাকে “রক্তাক্ত হত্যাকাণ্ড” ও “পেশাগত হত্যার” ঘটনা বলে আখ্যা দিয়েছে। ইজরায়েলের সঙ্গে আল জাজিরার দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব রয়েছে; যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশটিতে চ্যানেলটির সম্প্রচার নিষিদ্ধ এবং অফিসে অভিযান চালানো হয়েছে। কাতার, যা আংশিকভাবে আল জাজিরাকে অর্থায়ন করে, দীর্ঘদিন ধরে হামাসের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আতিথ্য দিয়ে আসছে এবং ইজরায়েলের সঙ্গে মধ্যস্থ আলোচনার অন্যতম কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত।
প্রায় ২২ মাস ধরে চলমান গাজা যুদ্ধের সময় প্রায় ২০০ জন সংবাদকর্মী নিহত হয়েছেন বলে গণমাধ্যম পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলির তথ্য। এই সর্বশেষ ঘটনাটি সাংবাদিকদের সরাসরি লক্ষ্য করে হামলার ধারাবাহিকতায় নতুন মাত্রা যোগ করল।