ডিজিটাল ডেস্ক, ১১ মে : পাকিস্তান কখনও যুদ্ধবিরতির জন্য অনুরোধ করেনি—এমন দাবি করেছে সে দেশের সেনাবাহিনী। ভারতীয় সেনার বক্তব্য উড়িয়ে পাল্টা দাবি করেছে পাকিস্তানি সেনা (India Pakistan Cease Fire)। পাক সংবাদমাধ্যম ‘ডন’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, রবিবার রাতে পাকিস্তানের সেনা মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধরি এই দাবি করেছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনী রবিবার জানায়, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে এবং পাকিস্তানের হামলার পরিকল্পনা ব্যর্থ করা হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের সেনা সাংবাদিক বৈঠকে ভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেছে।
পাক সেনার দাবি, ভারতের হামলায় তাদের সাধারণ নাগরিক হতাহত হয়েছেন। পাশাপাশি, পাকিস্তানি সেনার প্রতিআক্রমণে ভারতের কয়েকটি বায়ুসেনাঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তারা দাবি করেছে। যদিও ভারতীয় সেনার পক্ষ থেকে এমন কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।
শনিবার ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করেছে। এর আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমাজমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে দুই দেশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আমেরিকার সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতা করেছে।
এই পরিস্থিতিতে বিতর্ক তৈরি হয়েছে যে, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রথমে কোন পক্ষ রেখেছিল। রবিবার, ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশন (ডিজিএমও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই জানান, পাকিস্তানের ডিজিএমও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এই দাবি অস্বীকার করেছে।
পাক সেনার মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধরি বলেছেন, ‘‘লিখে রাখুন যে, পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির জন্য অনুরোধ করেনি।’’ তবে তিনি আরও জানিয়েছেন, পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের জায়গা থাকতে পারে না। তাঁর দাবি, পাকিস্তান এই সংঘাত পরিণতভাবে সামলেছে এবং ‘তীব্রতা নিয়ন্ত্রণ করে জবাব’ দিয়েছে।
রবিবার পাকিস্তানের সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পাক বায়ুসেনার ডিরেক্টর জেনারেল পাবলিক রিলেশন এয়ার ভাইস মার্শাল অওরঙ্গজেব আহমেদ এবং নৌবাহিনী (অপারেশনস) ডেপুটি চিফ ভাইস অ্যাডমিরাল রাজা রব নওয়াজ।
সেই বৈঠকে পাকিস্তানের সেনা মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধরি দাবি করেছেন যে, ভারতের বায়ুসেনাঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। তাঁর মতে, ৬-৭ মে রাতে এই অভিযান শুরু হয়, যেখানে পাকিস্তানের সাধারণ নাগরিক হতাহত হয়েছেন, নিহতদের মধ্যে রয়েছেন মহিলা, শিশু ও বৃদ্ধ।
অন্যদিকে, ভারতীয় সেনাবাহিনী আগেই জানিয়েছিল যে তাদের হামলা কেবল পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটিকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়েছিল। ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে মোট ৯টি জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করেছে বলে জানা গেছে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, শতাধিক জঙ্গি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ইউসুফ আজ়হার, আব্দুল মালিক রাউফ এবং মুদস্সর আহমেদের মতো কুখ্যাত সন্ত্রাসীরা রয়েছেন, যাদের নাম আগেও বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে উঠে এসেছিল।
এছাড়া, নিহত জঙ্গিদের মধ্যে আইসি ৮১৪ বিমান অপহরণ (কান্দাহার অপহরণ) এবং পুলওয়ামা হামলায় জড়িত ব্যক্তিরাও রয়েছে বলে ভারতীয় সেনার তরফ থেকে জানানো হয়েছে।
পাক সেনার মুখপাত্র দাবি করেছেন যে, ভারতের একাধিক বায়ুসেনাঘাঁটি—যেমন সুরতগড়, সিরসা, আদমপুর, ভুজ, নালিয়া, ভাতিন্ডা, বারনালা, হালওয়ারা, অবন্তীপোরা, শ্রীনগর, জম্মু, মামুন, অম্বালা, উধমপুর ও পঠানকোট—তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া, পাকিস্তান আরও দাবি করেছে যে, ভারতের ছোড়া ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র তারা সফলভাবে ধ্বংস করেছে।
ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সাংবাদিক বৈঠকে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, পাকিস্তানের সেনা বা সীমান্ত পারের সাধারণ জনগণের সঙ্গে ভারতের কোনো সংঘাত নেই। ভারতের লড়াই শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া, ভারতীয় সেনা দাবি করেছে যে, এই সংঘাতের সূত্রপাত করেছিল পাকিস্তানই। ৭-১০ মে-র মধ্যে ভারতীয় বাহিনীর জবাবি হামলায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রায় ৩৫-৪০ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে।
পাকিস্তান দাবি করেছে যে, ভারতের হামলায় তাদের ৩১ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছেন। পাল্টা জবাবে পাকিস্তান ভারতের একাধিক বায়ুসেনাঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। তাদের মতে, ১৯৭১ সালের পর এটিই সবচেয়ে বড় সামরিক প্রতিক্রিয়া। পাকিস্তানি নৌসেনা আরও দাবি করেছে যে, ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ আইএনএস বিক্রান্ত করাচি বন্দরের কাছাকাছি আসেনি। ৯ মে এটি পাকিস্তানি উপকূল থেকে প্রায় ৪০০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল এবং পরে পিছু হটে যায়। তবে ভারতীয় বাহিনী কখনওই বলেনি যে, আইএনএস বিক্রান্ত করাচির দিকে অগ্রসর হয়েছিল।
Comments are closed.