ডিজিটাল ডেস্ক, ৭ জুন : সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত হওয়ার পর থেকে ভারত সরকারকে চারবার চিঠি পাঠিয়েছে পাকিস্তান, প্রত্যেকবারই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানানো হয়েছে (India Pakistan Water Crisis)। সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই চিঠিগুলি পাঠিয়েছেন পাকিস্তানের জলসম্পদ মন্ত্রকের সচিব সৈয়দ আলি মুর্তজা। ভারতের জলশক্তি মন্ত্রক চিঠিগুলি গ্রহণ করেছে এবং পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য তা বিদেশ মন্ত্রকে পাঠিয়ে দিয়েছে।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও হামলার পর পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত তাদের বিরুদ্ধে একাধিক কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত। ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু ও তার উপনদীগুলির জল বণ্টনের জন্য এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তবে পহেলগাঁও হামলার পর ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে, যতদিন পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে মদত দেওয়া বন্ধ না করছে, ততদিন এই চুক্তি স্থগিত থাকবে।
ভারতের সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্তের শুরু থেকেই পাকিস্তান তীব্র বিরোধিতা করে আসছে। পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ দাবি করেছেন, এই চুক্তির উপর ২৪ কোটি পাকিস্তানির জীবন নির্ভরশীল, এবং ভারতের সিদ্ধান্ত বেআইনি। তিনি রাষ্ট্রপুঞ্জ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, অভিযোগ করেছেন যে ভারত জলকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। তবে ভারত তার অবস্থানে অনড় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন—জল এবং রক্ত পাশাপাশি বইতে পারে না। পাকিস্তান যদি সন্ত্রাসবাদকে মদত দেওয়া বন্ধ করে, তবে নয়াদিল্লি সিন্ধু চুক্তি পুনর্বিবেচনা করবে।
পহেলগাঁও হামলার পর ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান চালিয়ে পাকিস্তানে একাধিক জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করে। এর পাল্টায় পাকিস্তানও প্রতিহিংসামূলক হামলা চালায়, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে টানা চার দিন সংঘাত চলে। অবশেষে, ১০ মে ভারত ও পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়। তবে সংঘর্ষবিরতি কার্যকর হলেও সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে ভারতের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকে, যা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় নয়াদিল্লি। সূত্রের খবর অনুযায়ী, ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান শেষ হওয়ার পরও পাকিস্তান সিন্ধু চুক্তি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে ভারতকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে।
সিন্ধু নদ এবং তার দুটি উপনদী—বিতস্তা ও চন্দ্রভাগা—পাকিস্তানমুখী, এবং এই তিন নদীর উপর পাকিস্তানের ৮০ শতাংশ কৃষিকাজ নির্ভরশীল। অন্যদিকে, সিন্ধুর বাকি তিন উপনদী—বিপাশা, শতদ্রু ও ইরাবতী—ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। পাকিস্তানের আশঙ্কা, যদি সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তির শর্ত মেনে না চলা হয়, তাহলে পাকিস্তানমুখী নদীগুলির জলপ্রবাহ অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে, যার ফলে দেশজুড়ে ভয়াবহ জলসঙ্কট দেখা দিতে পারে। এই সংকট এড়ানোর লক্ষ্যে ইসলামাবাদ সক্রিয়ভাবে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।