J&K Kishtwar cloudburst: হড়পা বানে মৃত্যুপুরী উত্তরাখণ্ড! কিশ্তওয়াড়ে বৃষ্টিতে মৃত্যু ৩২,নিখোঁজ বহু

68

ডিজিটাল ডেস্ক ১৪ অগাস্টঃ উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীর ধরালীর মতো বিপর্যয় জম্মু-কাশ্মীরেও। উপত্যকার কিশ্তওয়াড় জেলায় মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে হড়পা বানের জেরে অনেক মৃত্যুর আশঙ্কা। বৃহস্পতিবার দুপুরে চিসোতি জেলার মচৈল মাতা মন্দিরের যাত্রাপথে হড়পা বান নেমে আসে। এই বিপর্যয়ে এখনও পর্যন্ত ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন(J&K Kishtwar cloudburst)। মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত ৫ অগস্ট হর্ষিল উপত্যকায় ১২৬০০ ফুট উঁচু থেকে ঘণ্টায় ৪৩ কিলোমিটার গতিতে নেমে এসেছিল হড়পা বান। মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে সৃষ্ট ভয়ানক সেই হড়পা বান ৩০ সেকেন্ডে ধরালী গ্রামের বেশির ভাগ গ্রাস করে নেয়। শুধু ধরালীই নয়, পাশের গ্রাম হর্ষিলের অনেকাংশই হড়পা বানের গ্রাসে চলে গিয়েছে। বিপর্যয়ের পর পরই একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছিল। কী ভাবে দুর্বার গতিতে সব কিছু তছনছন করে পাহাড় থেকে নেমে আসছিল ‘জলদানব’।

সেই ঘটনার পর কেটে গিয়েছে ১১ দিন। চার জনের মৃত্যু হয়েছে। ৪২ জন নিখোঁজ। বহু মানুষকে উদ্ধারও করা হয়েছে। তবে সম্প্রতি জানা গিয়েছে, ৫ অগস্ট বিপর্যয়ের দিন, একটি নয়, পর পর ছ’টি হড়পা বান নেমে এসেছিল কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে। স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, ওই দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ প্রথম হড়পা বান নেমে আসে। সেই সময় ধরালী বাজারে সোমেশ্বর মন্দিরে পুজোর আয়োজন চলছিল। ধরালীর কিছুটা উপরেই রয়েছে মুখওয়া গ্রাম। সেই গ্রামের কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, মনে হচ্ছিল কেউ একটা গোঙানির আওয়াজ করতে করতে এগিয়ে আসছে। তবে সেই আওয়াজে কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিল না যে হড়পা বান নেমে আসছে। মুখওয়া গ্রামের লোকেদের প্রথমে নজরে পড়ে। তাঁরা নীচের গ্রাম ধরালীর লোকজনকে আওয়াজ দিয়ে সতর্ক করেন। অনেক গ্রামবাসী নিরাপদ আশ্রয়ে পালাতে পেরেছিলেন। কিন্তু আবার কেউ কেউ পালাতে পারেননি।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ কিশ্তওয়াড়ের ডেপুটি কমিশনার পঙ্কজ শর্মার সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন। পঙ্কজ জানিয়েছেন, চাসোতি গ্রামে হড়পা বান নেমে এসেছে। এই গ্রাম থেকে ‘মচৈল মাতা যাত্রা’ শুরু হয়। ঘটনার পর পরই উদ্ধারকারী দল ওই গ্রামে পৌঁছেছে। উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। জিতেন্দ্র এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন,“চাসোতি এলাকায় বিশাল মেঘ ফেটে পড়ার ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে যথেষ্ট হতাহতের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে তৎপর হয়েছে, উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে রওনা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন যে তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাথে কথা বলেছেন এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে তাকে অবহিত করেছেন। এক্স-এ ওমর লিখেছেন, “আমি জম্মুর কিশ্তওয়াড় অঞ্চলের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। খবরটি ভয়াবহ এবং নির্ভুল, মেঘভাঙা বৃষ্টির কবলে পড়া এলাকা থেকে খবর পেতে দেরি হচ্ছে। উদ্ধারকাজ পরিচালনার জন্য জম্মু ও কাশ্মীরের ভিতর এবং বাইরে থেকে সম্ভাব্য সকল সম্পদ সংগ্রহ করা হচ্ছে। আমি কোনও চ্যানেল বা সংবাদ সংস্থার সঙ্গে কথা বলব না।”

দেশে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই। যার ফলে পাহাড়ি এলাকাগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বিশেষ করে উত্তরাখণ্ড। মেঘভাঙা বৃষ্টি, হড়পা বান, বন্যা এবং ভূমিধসের ফলে প্রাণহানি ও সম্পদের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরো রাজ্য জুড়ে অন্তত ৩২৫টি রাস্তা, যার মধ্যে দু’টি জাতীয় সড়ক রয়েছে, তা বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে মান্ডি জেলায় ১৭৯টি এবং কুল্লু জেলায় ৭১টি রাস্তা অচল হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, লাহৌল ও স্পিতি জেলার মায়াদ উপত্যকায় মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে হঠাৎ করে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। কারপাত, চাংগুট এবং উদগোস নালার মতো এলাকায় দু’টি সেতু ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ঘটনার জেরে কারপাত গ্রামে পরিস্থিতি সংকটজনক হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় আবহাওয়া অফিস ‘হলুদ’ সতর্কতা জারি করেছে, ২০ আগস্ট পর্যন্ত রাজ্যের বিচ্ছিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করেছে। বুধবার সন্ধ্যায় সিমলা, কুল্লু, কিন্নৌর এবং লাহুল ও স্পিতি জেলার বেশ কয়েকটি জায়গায় মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং হড়পা বান দেখা দিয়েছে। বিকেল ৩-৪টের মধ্যে আবারও হড়পা বান নামে। তার পর আবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে পর পর দু’টি হড়পা বান আসে। আর সেই দু’টি ছিল আরও ভয়ানক।