ডিজিটাল ডেস্ক, ২৬ জুন : জানা যায় গত সোমবার কালিগঞ্জ বিধান সভা উপনির্বাচনের ফল ঘোষণার দিন তৃণমূলের প্রার্থী এগিয়ে থাকার খবর পেয়েই জয়োল্লসের মিছিল বেরোয় মোলান্দি এলাকায় তৃণমূলের তরফে। অভিযোগ সেই জয়োল্লাস থেকেই বোমা মারা হয় একাধিক বাড়িতে, সেখানেই মৃত্যু হয় তামান্না খাতুনের।
ঘটনার পর প্রথমে আদর আলি শেখকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ পরবর্তী সময়ে কালু শেখ, মানোয়ার শেখ-আনোয়ার শেখকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কালু শেখ ও মানোয়ার শেখকে নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশ, ও বুধবার শারিফুল শেখকে গ্রেফতার করে। পুলিশ সুত্রে জানা যায় জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে তামান্নার বাড়িতে বোমা মারার কথা স্বীকার করে কালু শেখ (Kaliganj Bomb Case Update)।
প্রসঙ্গত ঘটনার পর কৃষ্ণনগর জেলার পুলিশ সুপার অমরনাথ কে তামান্নার পরিবারের সঙ্গে দেখা করে বলেছিলেন,‘দুর্ঘটনাবশত বোমার স্প্লিন্টারের আঘাতে নাবালিকার মৃত্যু হয়েছে।’ পুলিশ সুপারের এই মন্তব্য নিয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ হয় নাবালিকার পরিবার। তামান্নার মায়ের কথায়, ‘এটি পরিকল্পিত খুন। দুর্ঘটনা বলে অপরাধের গুরুত্ব কমানোর চেষ্টা করলে হবে না। পুলিশকে অনুরোধ করব দুর্ঘটনার কথা ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য।’ অন্যদিকে, ভিন্ন রাজ্যে কর্মরত তামান্নার বাবা মেয়ের মৃত্যুসংবাদ শুনে গতকাল নিজের বাড়িতে এসে পৌঁছন। কান্না ভেজা গলায় তিনি বলেন, ‘বিরোধী দল করার জন্য বাড়িতে হামলা, বোমাবাজি করা হয়। পুলিশের উপর ভরসা নেই। মেয়ের বিচারের জন্য আদালত থেকে শুরু করে যত দূর যেতে হয় যাব।’
এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া ৫ অভিযুক্তের বাড়ির আশপাশে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। সেখানে কোনও আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা মজুত রয়েছে কিনা তা দেখা হচ্ছে। আবার জাতীয় মহিলা কমিশন ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গোটা ঘটনায় পুলিশ সুপারের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে।
পাশাপাশি বুধবার দুপুরের পরে মৃত ১০ বছরের নাবালিকা তামান্নার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে মোলান্দি গ্রামে আসেন তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবির। নাবালিকার মা-বাবার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন আইপিএস। বিধায়কের কাছে নিজেদের ক্ষোভ দুঃখ উজার করে দিলেও আর্থিক সাহায্য প্রত্যাখ্যান করেন তামান্নার বাবা-মা (Kaliganj News Update)।
এদিন দুপুরের পর মোলান্দি গ্রামে আসেন ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবির। তামান্নার বাড়িতে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন তার মা-বাবার সঙ্গে। মেয়ের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা। হুমায়ুন কবির জানান, তিনি এই মর্মান্তিক ঘটনার কথা জেনে গভীর মানসিক যন্ত্রণা অনুভব করেছেন, তাই পরিবারটির পাশে দাঁড়াতেই এসেছেন।
মৃত নাবালিকার মা অভিযোগ করেন, ভোটে পরাজিত হওয়ার পর থেকেই পরিকল্পিতভাবে সিপিএম পরিবারগুলির ওপর হামলা হচ্ছে, এবং তাদের মেয়ের মৃত্যুও সেই রাজনীতি-প্রসূত হিংসার ফল। পুলিশও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেনি বলেও অভিযোগ করেন মৃত নাবালিকার মা। তিনি বলেন, পুলিশ ঠিক সময়ে বোমা উদ্ধার করলে সন্তানকে হারাতে হত না তাঁর।
এরপরেই হুমায়ুন কবির পরিবারকে সাহায্য করতে কিছু অর্থ দিতে চান। বিধায়ক টাকার খাম বের করলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন নাবালিকার মা। টাকা কখনই তাঁর সন্তানশোকের বিকল্প হতে পারে না বলে চিৎকার করে ওঠেন। এরপর বিধায়ক জানান, তিনি মৃত নাবালিকার সমাধিস্থলে গাছ রোপণ করবেন তাঁর স্মৃতির উদ্দেশে। মর্মান্তিক এই ঘটনার প্রতিবাদে সবার গর্জে ওঠা উচিত বলেও মন্তব্য করেন বিধায়ক।