ডিজিটাল ডেস্ক ১৬ই অগাস্টঃ সিঙ্গুরের নার্সের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কল্যাণী এইমসে। সকাল ৭টা নাগাদ কলকাতা মেডিক্যাল হাসপাতালের মর্গ থেকে দেহ নিয়ে বেরিয়েছে পুলিশ। সঙ্গে রয়েছে মৃতার পরিবার। গ্রিন করিডর করে দেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে খবর(Kalyani AIIMS)।
পরিবারের দাবি মেনে শনিবার সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে মেডিক্যাল কলেজের মর্গ থেকে নার্সের দেহ গ্রিন করিডর করে কল্যাণী AIIMS-এ নিয়ে যাওয়া হয়। আগেই ময়নাতদন্ত নিয়ে কল্যাণী AIIMS-এর ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগে যোগাযোগ করেন হুগলি জেলার গ্রামীণ SP। সেখান থেকে সবুজ সঙ্কেত মেলার পরই নিয়ে যাওয়া হল নার্সের দেহ।
শেষ পর্যন্ত পরিবারের দাবি মেনে কল্যাণী AIIMS-এ ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্ত সিঙ্গুরের নার্সিংহোমে মৃত নার্সের। মৃত নার্সের ময়নাতদন্ত কোথায় হবে, তা নিয়ে শুক্রবার গোটা দিন ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরিবারের অভিযোগ,শ্রীরামপুর ওয়ালস হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হওয়ার কথা থাকলেও তাদের জানানো হয়, ময়নাতদন্ত হবে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে তাদের আস্থা নেই বলে সাফ জানিয়ে দেন মৃতার দাদা। বলা হয়, তাঁরা ময়নাতদন্ত চান সরকারি হাসপাতালে।
সিঙ্গুরের নার্সিংহোমে মৃত ওই তরুণী নন্দীগ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। মাত্র ৪ দিন আগেই সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমে তিনি কাজে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর বুধবার রাতে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় নার্সিংহোমেরই একটি ঘর থেকে। মৃতার বাবা বলেন, ‘শুক্রবার সকালে হুট করে আমাকে নিয়ে আসে। প্রচুর পুলিশ চলে আসে। মারধর করে আমার স্ত্রী, পুত্রকে। ওদেরও জোর করে তুলে আনে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আমি বলেছিলাম মেডিক্যাল কলেজে যাব না। এখানে কমান্ড আছে, AIIMS আছে। না হলে শ্রীরামপুরে ময়নাতদন্ত হলেও আমি সন্তুষ্ট হতাম। মেডিক্যালে আমি চাই না হোক। তাহলেসঠিক তদন্ত পাব না।’ এরপর শুক্রবার দুপুরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পুলিশ পৌঁছলে দফায় দফায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে SFI ও BJP। সন্ধে পর্যন্ত চলে দীর্ঘ টালবাহানা। ঘটনাস্থলে পৌঁছন কলকাতা পুলিশের ডিসি কন্ট্রোল। তিনি জানান, আদালত যা বলবে সেইমতোই হবে ময়নাতদন্ত। অবশেষে হুগলি গ্রামীণ পুলিশের তরফে লিখিত আবেদন জানানো হয় কল্যাণী AIIMS কর্তৃপক্ষকে। রাতেই রাজি হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
পুলিশি সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মৃত নার্সের বাবা সুকুমার জানা বলেছিলেন, “আমি চাই ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত হোক। আমরা চাইছিলাম, কেন্দ্রীয় হাসপাতালে দেহটি পরীক্ষা হোক, কিন্তু পুলিশ আমাদের জানিয়ে না জোর করে দেহ নিয়ে গিয়েছে।” তিনি এও বলেন, “রাজ্যের হাসপাতালের প্রতি আমার আস্থা নেই।” পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে কলকাতা পুলিশের ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় জানান, “পরিবার যেখানে চাইবেন, দেহ সেখানে ময়নাতদন্ত করা হবে। তবে যেহেতু অস্বাভাবিক মৃত্যু, আদালতের অনুমতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” সূত্রের খবর, প্রয়োজনীয় অনুমতির পর এদিন দেহ মেডিকেল থেকে কল্যাণী এইমসে নিয়ে যাওয়া হয়।
এই ঘটনার মধ্যেই শুক্রবার মৃতদেহ ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। শুক্রবার দুপুরে মৃতদেহ মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছার পরই বিজেপি ও সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা সেখানে জড়ো হয়ে বচসা এবং হাতাহাতিতে লিপ্ত হন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রশ্ন তুলেছেন, “পুলিশের এত অতি সক্রিয়তার কারণ কী?” পাল্টা হিসেবে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেছেন, “আমরাও চাই প্রকৃত সত্য সামনে আসুক। কিন্তু বিজেপি-সিপিএম পরিকল্পিতভাবে লাশ দখলের রাজনীতি করছে।” এখন দেখার, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে কী উঠে আসে।