Kasba Gangrape Case:” ‘সেটল’ অফার দিয়ে ধামাচাপার চেষ্টা ?” তদন্তাধীন কসবার ‘গ্যাং অফ এইট’

13

ডিজিটাল ডেস্ক ৪ঠা জুলাইঃ গণধর্ষণের ঘটনায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগে নির্যাতিতাকে ফোন করে কেস ‘সেটল’করার চেষ্টা করেছিল মনোজিৎ মিশ্র। এই তথ্য আগেই উঠে এসেছিল। ২৬ জুন সন্ধে ৬টা ২৫ নাগাদ সন্ধে সাড়ে ৭টা নাগাদ গ্রেপ্তার হওয়ার ঘণ্টা খানেক আগে ফার্ন রোডে কোথায় গিয়েছিল তারা এবং কেন? দীর্ঘ সময় গা-ঢাকা দেওয়ার জন্য মনোজিৎ ওই টাকা জোগাড়ের চেষ্টা করছিল,নাকি নির্যাতিতাকে কেস ‘সেটল’ করানোর জন্য ওই টাকার দরকার ছিল মনোজিতের ? তা নিয়ে নিশ্চিত হতে তিন মূল অভিযুক্তকে দফায় দফায় জেরা করছেন তদন্তকারীরা। মনোজিতের ঘনিষ্ঠ এক ছাত্রের কথায়,‘সম্ভবত দাদা ভাবেনি যে এফআইআর হবে। সেই কারণে টাকা জোগাড় করে রাখছিল। যাতে কোনও ভাবে টাকা দিয়ে অভিযোগকারিণীর মুখ বন্ধ করা যায়।’ মনোজিতের ‘গ্যাং অফ এইট’-এর এক মহিলা ও এক পুরুষ সদস্যকেও এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নির্যাতিতা যাতে অভিযোগ তুলে নেন,তা নিশ্চিত করতে কি তাঁকে টাকার অফার করারও মরিয়া চেষ্টা করছিল মনোজিৎ ও তার সঙ্গীরা? এই বিষয়টিও এ বার খতিয়ে দেখছেন‍ তদন্তকারী অফিসাররা(Kasba Gangrape Case)।

সূত্রের দাবি,ফার্ন রোডে এক ব্যবসায়ীর দ্বারস্থ হয়েছিল মনোজিৎ রা । কারণ, তার বড় অঙ্কের নগদ টাকার দরকার ছিল। কে সেই ব্যবসায়ী, কেন শেষমেশ তিনি টাকা দিলেন না এই বিষয়টা তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন। কলেজ সূত্রের খবর, তার পরিচিত আরও কয়েকজনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা চেয়েছিল মনোজিৎ। তবে যত টাকা সে চাইছিল, সেটা কেউই দিতে পারেননি। সেই কারণেই কারও পরামর্শে ফার্ন রোডের ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে মনোজিৎ দেখা করার চেষ্টা করছিল বলে সন্দেহ গোয়েন্দাদের।

দক্ষিণ কলকাতার ওই আইন কলেজের পরিচালন সমিতির মিনিটস বুক এবং মেন গেটের লগবুক এ বার লালবাজারের গোয়েন্দাদের নজরে। অতীতে কোনও ছাত্রী মনোজিতের হাতে হেনস্থার শিকার হয়ে থাকলে বিষয়টি তিনি কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছিলেন কি না এবং জানিয়ে থাকলে তা নিয়ে কলেজের পরিচালন সমিতির বৈঠকে কোনও আলোচনা হয়েছিল কি না অথবা তা মিনিটস বুকে লিপিবদ্ধ করা হতো কি না তা খতিয়ে দেখতে চাইছেন গোয়েন্দারা। গণধর্ষণের অভিযোগে মনোজিৎ গ্রেপ্তার হওয়ার পরে আরও অনেক ছাত্রছাত্রীই তার বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন। প্রাথমিক তদন্তে জানা যাচ্ছে, মনোজিৎ পড়ুয়াদের তো বটেই, কলেজের নিরাপত্তারক্ষীদেরও পাত্তা দিত না।

এমনিতেই তার ইশারায় গার্ড রুম খালি করে দিতে হতো নিরাপত্তারক্ষীদের। কেউ আপত্তি করলে হুমকি, এমনকী মারধরও করা হতো বলে অভিযোগ। সাধারণ ভাবে কলেজের বর্তমান ছাত্রছাত্রী বা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা বাদে অন্য কেউ ক্যাম্পাসে ঢুকতে গেলে মেন গেটে লগবুকে নাম, ফোন নম্বর, ঠিকানা নথিভুক্ত করাই দস্তুর। অভিযোগ, ওই আইন কলেজে মনোজিতের সঙ্গে যাঁরা দেখা করতে আসতেন, তাঁদের জন্য সেই নিয়ম কার্যকর হতো না। এই বহিরাগতদের সম্পর্কে যাতে কোনও তথ্য নথিভুক্ত না-থাকে, তা নিশ্চিত করতে লগবুক ব্যবস্থাটাই তুলে দিয়েছিল মনোজিৎ। আর তার নেতৃত্বে বহিরাগতরা কলেজের গার্ডরুম বা ইউনিয়ন রুমে ইচ্ছেমতো মজলিশ বসাত। এই বিষয়ে আরও তথ্য পেতে ধৃত রক্ষী পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়কেও দফায় দফায় জেরা করা হচ্ছে।

গণধর্ষণের মামলার তদন্তে প্রথমে ডিভিশনাল সিট বা বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছিল। বুধবার সেই তদন্তভার গিয়েছে গোয়েন্দা বিভাগের হাতে। সূত্রের খবর, লালবাজারের তরফেও একটি সিট গঠন করা হতে পারে। সেই দলে উইমেন্স গ্রিভান্স সেলের এক আধিকারিককে তদন্তকারী অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। থাকবেন সাইবার বিভাগের অফিসাররাও। ডিভিশনাল সিটের কয়েকজনকেও ওই দলে রাখা হতে পারে। যে হেতু ধর্ষণের সময়ে নির্যাতিতার ভিডিয়ো করেছিল অভিযুক্তরা, তাই আগামী দিনে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ধারাও তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হতে পারে। ধৃত নিরাপত্তারক্ষীকে আজ, শুক্রবার পেশ করা হবে আদালতে।